Advertisement
E-Paper

এক্সক্লুসিভ বিরাট: টিমের কারও ‘অফ ডে’ নেই

এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার। সর্বকালের সেরাদের সঙ্গে তাঁর তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এক রাশ নতুন ভাবনা আর পরিকল্পনা নিয়ে সাজাচ্ছেন ক্রিকেটের নতুন ভারতকে। আনন্দবাজার-কে দেওয়া এক খোলামেলা, একান্ত সাক্ষাৎকারে সে সবেরই সন্ধান দিচ্ছেন বিরাট কোহালি। গত এক বছরে ভারতের কোনও সংবাদপত্রে দেওয়া একমাত্র সাক্ষাৎকার। আজ দ্বিতীয় পর্ব। আনন্দবাজার-কে দেওয়া এক খোলামেলা, একান্ত সাক্ষাৎকারে সে সবেরই সন্ধান দিচ্ছেন বিরাট কোহালি। গত এক বছরে ভারতের কোনও সংবাদপত্রে দেওয়া একমাত্র সাক্ষাৎকার। আজ দ্বিতীয় পর্ব।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
একাগ্র: বিশ্রাম মানে নিজেকে ঠকানো। টুইট করলেন বিরাট কোহালি।

একাগ্র: বিশ্রাম মানে নিজেকে ঠকানো। টুইট করলেন বিরাট কোহালি।

প্রশ্ন: দলের মধ্যে কি পরিবারের মতো পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন?

বিরাট কোহালি: আমাদের টিমটা একটা পরিবারই। যদি আমাদের পরিবার বা পার্টনারদের আপনি দেখেন, যখন ওরা এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়, তা হলেই এটা বুঝতে পারবেন। এত সহজ ভাবে সকলে মিশে যায় যে, দেখে মনেই হবে না কেউ আলাদা। মনে হবে যেন একই পরিবারের সদস্য সব। কেউ কারও সঙ্গে এখানে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে মেশে না, কেউ মতামত দেয় না। কোনও নেতিবাচক মনোভাব নেই। আমার মনে হয়, সেটা এই দলটার একটা বড় গুণ। এটা থেকেই প্রমাণ হয়, টিমের মধ্যে আমরা কতটা সুপরিবেশ গড়ে তুলতে পেরেছি।

প্র: পরিবারকে ক্রিকেট সংসারের মধ্যে একাত্ম করে নেওয়াটা নিশ্চয়ই মানসিকতা তৈরিতে সাহায্য করছে?

বিরাট: অবশ্যই। আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তো আমাদের পরিবারই। ওদেরকে বোঝানো খুব জরুরি ছিল যে, ওরাও আমাদের সংসারে দারুণ ভাবে স্বাগত। তা হলে কী হবে, বিদেশ সফরে গেলেও সকলের মনে হবে, আমরা ঘর থেকে দূরে থাকতে পারি কিন্তু এটাও ঘর থেকে দূরে আমাদের একটা ঘর। যেখানে প্রত্যেকে স্বাগত আর প্রত্যেকে খোলামেলা মনে মিশতে পারছে। ঠিক যে ভাবে নিজেদের বাড়িতে আমরা থাকি।

প্র: গোটা বিশ্বে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, বিরাট কোহালির ফিটনেস এবং এনার্জি। আপনার এই অফুরান এনার্জির রহস্য কী?

বিরাট: জানি না, সত্যিই জানি না রহস্যটা কী। একটা কথা বলতে পারি। ক্রিকেটকে আমি পাগলের মতো ভালবাসি। তাই সারাক্ষণ খেলাটার মধ্যে ডুবে থাকতে পছন্দ করি। সেটাই হয়তো আমার এনার্জির কারণ। আমার মনে হয় ব্যাপারটা আমার মধ্যে সহজাত ভাবেই আসে। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, কাউকে কিছু করতে বলার আগে আমি নিজে সেটা করে দেখাতে চাই। আমি নিজে আগে উদাহরণ তৈরি করতে চাই। তার পর তো টিমের সতীর্থদের বলব, এটা তোমরাও করো।

প্র: আপনার ফিটনেস লেভেলে তো সকলে পৌঁছতে না পারে। তখন?

বিরাট: না, এটা দলগত একটা ব্যাপার। এখানেও ব্যক্তিগত কোনও করিডর নেই। আমি কতটা ফিট, সেটা দেখানোটা আমার উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্যটা হচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর তার জন্য কয়েকটা ব্যাপার খুব পরিষ্কার ভাবে মাথার মধ্যে গেঁথে ফেলতে হবে। এখন ক্রিকেট খেলাটা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন, প্রত্যেকটা দল কী রকম জেট গতিতে ফিটনেস তৈরির জন্য ছুটছে। খেলায় অনেক বেশি পেশাদারিত্ব এসে গিয়েছে। এবং, রোজই ফিটনেস এবং পেশাদারিত্বের মান বাড়ছে। ভাল করতে চাইলে এই চাহিদাগুলোর সঙ্গে আপস করা যাবে না। এমনকী, উপমহাদেশের দলগুলিও ফিটনেসের নির্দিষ্ট একটা মান বেঁধে দিয়েছে। এবং, বার্তাটা খুব পরিষ্কার। যদি সেই মানটা ধরতে না পারো, তোমার পক্ষে টিকে থাকা মুস্কিল হবে।

আরও পড়ুন

পুরনো ক্লাবে ফিরে নতুন আশায় মনোজ

প্র: আপনার এই ফিটনেস নিয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়াটা কত দিন আগে শুরু হয়েছিল?

বিরাট: সৌভাগ্য আমার যে, তিন-চার বছর আগে আমি এই ফিটনেস নিয়ে আপসহীন মনস্তত্ত্বের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলাম। এখন সত্যিই মনে হয়, ভাগ্যিস এই পরিবর্তনটা এনেছিলাম। খেলাটা যে ভাবে পাল্টে যাচ্ছে, এই বদলটা না করলে কিছুই করতে পারতাম না। তিন-চার বছর আগে ফিটনেস নিয়ে বাড়তি পরিশ্রমের সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর থেকে আমি শুধু চেষ্টা করে গিয়েছি, কী ভাবে পরের স্তরে নিজেকে নিয়ে যাওয়া যায়। আমার ধারাবাহিকতার পিছনে আসল কারণ কিন্তু উন্নত ফিটনেস। বলে বোঝানো যাবে না, ফিটনেস কতটা তফাত ঘটাতে পারে এক জনের পারফরম্যান্সে। অবিশ্বাস্য। আমার ক্ষেত্রেই আকাশ-পাতাল তফাত ঘটে গিয়েছে। মস্তিষ্ক পর্যন্ত অনেক সক্রিয় হয়ে যাবে ফিট হতে পারলে। ভাবনাতে গতি এসে যাবে। আমার ক্ষেত্রে ফিটনেস কী ম্যাজিক ঘটিয়েছে, সেটা দেখেই আমি অন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে, ফিটনেসের উপর জোর দেওয়া কেন জরুরি।

প্র: ফিটনেস আর স্কিল। কোথায় কোনটা দরকার। কতটা সময় দেব ফিটনেসে, কতটা প্র্যাকটিসে?

বিরাট: আমাকে যদি দু’টো কঠিন পরীক্ষা দেওয়া হয়— ফিটনেসের আর প্র্যাকটিসের, আমি প্রথমে ফিটনেস সেশনটা করব। কারণ ওটাই অনেক কঠিন পর্ব। কেন কঠিন? কারণ, ফিটনেস পর্বটায় অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এমন এক-একটা দিন আসবে যখন মস্তিষ্ক চাইবে কাজটা করতে কিন্তু শরীর চাইবে না। তখন আপনার মস্তিষ্কে ক্রমাগত ইতিবাচক তরঙ্গ পাঠিয়ে পাঠিয়ে নিজেকে রাজি করাতে হবে যে, নাহ্, ‘টাস্ক’টা আমাকে সম্পূর্ণ করতেই হবে। এক বার ফল পেতে শুরু করলে সেই খেলোয়াড় নিজেই বুঝে যাবে যে, ফিটনেসের গুরুত্ব কতটা। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, আপনি জন্মগত ভাবে ফিট হতে পারেন। দারুণ এনার্জি নিয়ে এসে থাকতে পারেন। তার মানেই এই নয় যে, শুয়ে-বসে কাটানোর বিলাসিতা দেখাতে পারেন। নিরন্তর পরিশ্রম করে যেতে হবে। সহজাত ফিটনেস একটা সময় পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। আর যদি দৈনিক পরিশ্রমটা চালিয়ে যাওয়া যায়, তা হলে সেই উচ্চ ফিটনেস লেভেলটাই অনেক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

প্র: শ্রীলঙ্কায় দেখছিলাম, টেস্ট ম্যাচ জিতে হোটেলে ফিরেও সুইমিং পুলে সেশন চলছে। ম্যাচ আগে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দেখলাম পরের দিন সবাই জিমে ছুটছে। এটাই কি আপনার টিম ইন্ডিয়ার সংস্কৃতি?

বিরাট: দেখুন, আমাদের টিমের প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা অসাধারণ। আর ওরা খুব স্মার্ট। আমাদের ট্রেনার বাসু (এস. বাসু) এসে যে রকম মান বেঁধে দিয়েছে ফিটনেসের, সকলেই জানে যদি ঠিক মতো ট্রেনিং না করো সমস্যায় পড়বে। যদি তুমি না করতে পারো, আর এক জন দাঁড়িয়ে আছে। সে তোমার জায়গা নিয়ে চলে যাবে। আর অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে, প্রথম এই ‘টাস্ক’গুলো করে দেখানো। ট্রেনার যদি একটা নির্দিষ্ট মান বেঁধে দিয়ে থাকেন, তা হলে আমাকে তার চেয়েও অন্তত তিন-চার ধাপ উপরে ফিটনেস লেভেলকে রাখতে হবে। আমি সে ভাবেই ব্যাপারটাকে দেখি।

প্র: এটা তো বেশ কষ্টকর একটা ফিটনেস রুটিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিরাট: কিছু করার নেই। এগিয়ে যেতে গেলে ফিটনেসের নিয়ম মানতেই হবে। খেলাটা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেককে বুঝতে হবে যে, পেশাদার অ্যাথলিটের মতো প্রত্যেকটা দিন পরিশ্রম করে যেতে হবে। সেই কারণে শ্রীলঙ্কায় ৩-০ টেস্ট সিরিজ জিতেও আমাদের ভাবার উপায় ছিল না যে, টেস্টটা আমরা তিন দিনে জিতে ফেলেছি। চলো, বাকি দু’দিন বিশ্রাম করি। না, ওটা করা যাবে না। ভাবতে হবে যে, বাকি দু’দিন খেলা হলে তো আমি মাঠে থাকতাম। ৯০ ওভার ফিল্ডিং করতাম বা ৫০-৬০ ওভার ব্যাট করতে হতে পারত। তাই এই দিন দু’টোতেও পরিশ্রম করতে হবে। হোটেলের ঘরে শুয়ে বলতে পারবে না, আমার এখন রিল্যাক্স করার সময়।

প্র: এই রুটিনই সব সময় চলে?

বিরাট: ইয়েস। সিরিজ শেষে বাড়ি ফিরে গেলে তো বিশ্রাম করা যাবেই। রিল্যাক্স করা যাবে। কিন্তু টিমের সঙ্গে যত ক্ষণ আছো, প্রত্যেকটা দিনই ‘ওয়ার্কিং ডে’। আমি মনে করি এমনকী, ‘অফ ডে’-টাও কিছু করার একটা সুযোগ। সম্পূর্ণ শুয়ে-বসে কাটিয়ে নষ্ট করা উচিত নয়।

প্র: মানে ‘অফ ডে’ বলেও কিছু নেই আপনার জীবনে?

বিরাট: যখন একেবারে ক্রিকেট নেই, তখন সেটাকে সম্পূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়ে তরতাজা হয়ে নিতে পারলে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমি বলছি মরসুমের মধ্যে বা সিরিজের মধ্যে। তখন সম্পূর্ণ ‘অফ ডে’ বলে কিছু নেই। দিনের কিছুটা সময় আপনি বিরতি পেতে পারেন, পুরোটা নয়। দিনের কিছু কাজ আপনার জন্য পড়ে রয়েছে, টিমের দেওয়া কাজ। সেগুলো সম্পূর্ণ করে তবেই আপনি নিজের ব্যক্তিগত পৃথিবীতে ঢুকতে পারবেন।

(চলবে)

Cricket Virat Kohli বিরাট কোহালি Exclusive Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy