Advertisement
E-Paper

ফের বিশ্ব খেতাবের জন্য ঝাঁপাতে চান আনন্দ

ভারতীয় ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তির পরে বিরাট কোহালি এসেছেন। কিন্তু এ দেশের দাবায় আনন্দের পরে সে রকম কাউকে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে না।

শমীক সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩২
ত্রয়ী: কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে দিব্যেন্দু বড়ুয়া, বিশ্বনাথন আনন্দ ও সূর্যশেখর। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ত্রয়ী: কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে দিব্যেন্দু বড়ুয়া, বিশ্বনাথন আনন্দ ও সূর্যশেখর। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বয়স ৪৮ হলেও এখনও ভারতীয় দাবা বলতে গোটা বিশ্ব তাঁকেই চেনে। এখনও তাঁর নাম শুনলে প্রতিপক্ষের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে। এখনও তাঁর ভক্তরা আশায় ছ’নম্বর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট তাঁর মাথায় ওঠার। দাবাড়ু হলেও ফুটবলের খোঁজ রাখেন। জানেন প্রিয় দল রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো জুভেন্তাসে চলে গেলেও এখনও একটিও গোল পাননি। তিনি বিশ্বনাথন আনন্দ।

ভারতীয় ক্রিকেটে সচিন তেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তির পরে বিরাট কোহালি এসেছেন। কিন্তু এ দেশের দাবায় আনন্দের পরে সে রকম কাউকে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে না। কেন?

শনিবার নতুন একটি দাবা প্রতিযোগিতার ঘোষণা উপলক্ষ্যে কলকাতায় আসা আনন্দ আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমি যে সময় বিশ্ব দাবায় ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করেছি সেই সময়টা অন্য ছিল। এখন যদি রেটিংয়ের দিকে দেখেন লক্ষ্য করবেন ম্যাগনাস কার্লসেনের পরে এক নম্বরে দীর্ঘ সময় আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এক জন দাবাড়ুকে দেখান যে কার্লসেনের পরে ১০ মাসের বেশি এক নম্বরের জায়গাটা ধরে রেখেছে! তালিকাটা দ্রুত পাল্টে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ বছরও তো কখনও ফাবিয়ানো এক নম্বরে, কখনও অন্য কেউ।’’ হাসতে হাসতে তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আলেকজান্ডার গ্রিসচুক এক বার বিখ্যাত একটা কথা বলেছিল সেন্ট লুইসে খেলার সময়। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিনে ও বলেছিল, ‘কালও বিশ্বের দু’নম্বরের বিরুদ্ধে খেললাম। আজও ফের আমার প্রতিপক্ষ বিশ্বের দু’নম্বর।’ বিশ্বের প্রথম দশের তালিকাটা কত দ্রুত পাল্টায় সেটা ওর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে।’’

তবে আনন্দ মনে করেন, ভারতীয় দাবাড়ুরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। ‘‘ভারতীয় দাবাড়ুদের মধ্যে কয়েক জন আমার এলো রেটিংয়ের (২৭৭১) একশো পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে। কয়েক জন আরও কাছাকাছি। যেমন পেন্টালা হরিকৃষ্ণ (২৭৪৩) এবং বিদিত গুজরাতি (২৭১১)। তেমনই সূর্যও (সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়, রেটিং ২৬২২) খুব কাছাকাছি রয়েছে। যদি এ মরসুমে কয়েকটা টুর্নামেন্টে ভাল খেলতে পারে তা হলে ২৭০০ রেটিংয়ের কাছাকাছি উঠে আসবে।’’ অবশ্য শুধু আশা নয়, সঙ্গে সতর্কও করছেন দেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার, ‘‘বিশ্ব দাবায় সর্বোচ্চ আসনে বসার পথটা খুব কঠিন। বেশ লম্বা পথও। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হয়। আশা করি আমাদের দেশের সেরা দাবাড়ুরা সে দিকে নিশ্চয়ই এগিয়ে যেতে পারবে,’’ বলেন আনন্দ।

ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হেরেছেন তিনি। এ বার ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টেও আনন্দ যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। তবে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফের বিশ্বসেরার তাজ দখলের লড়াই থেকে সরে আসেননি। বরং সেই পথে এগোনোর ছক তৈরি করে রেখেছেন। ধীরে ধীরে এগোতে চান। আনন্দ বলেছেন, ‘‘আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে এখনই বেশি ভাবছি না। এর পরে ফিডে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলব। সেখানে যদি ভাল খেলতে পারি তা হলে ক্যান্ডিডেটসে সুযোগ পাব। এই প্রতিযোগিতায় জিততে পারলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে ভাবব। এই রোডম্যাপেই এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে। অপাতত আমি দাবাটা উপভোগ করে যেতে চাই।’’

২৬ বছর পরে ফের কলকাতায় কোনও দাবা প্রতিযোগিতায় খেলবেন আনন্দ। তার ঘোষণা উপলক্ষ্যেই এ দিন এসেছিলেন কলকাতায়। ৯-১৪ নভেম্বর হো চি মিন সরণিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসে বসছে টাটা স্টিল দাবা প্রতিযোগিতার আসর। সেখানে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আনন্দ ছাড়াও বিশ্বের সেরা ১১ জন গ্র্যান্ড মাস্টারকে খেলতে দেখা যাবে। প্রতিযোগিতার অন্যতম আকর্ষণ দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড মাস্টার ভারতের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। যে কয়েক মাসে আগে ১২ বছর ১০ মাস ১৪ দিন বয়েসে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে নজির গড়েছে। প্রতিযোগিতায় খেলবেন বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখরও। খেলা হবে র‌্যাপিড এবং ব্লিৎজ ফর্ম্যাটে। আনন্দ বলেছেন, ‘‘মনে আছে কলকাতায় আমি প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার টুর্নামেন্ট খেলেছিলাম ১৯৮৬ সালে। তখন আমি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার। কলকাতায় এই প্রতিযোগিতা নিয়ে খুব উত্তেজনা রয়েছে। আশা করি এই অঞ্চলে দাবা খেলাটাকে আরও উজ্জীবিত করবে এই প্রতিযোগিতা।’’

আনন্দ শেষ বার যখন কলকাতায় খেলেন, তাঁর অন্যতম প্রতিপক্ষ ছিলেন দিব্যেন্দু বড়ুয়া। দিব্যেন্দু বলছিলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতাটা বাংলার দাবাড়ু, দাবাপ্রেমীদের জন্য খুব ভাল খবর। আনন্দকে এ ভাবে কলকাতায় খেলতে দেখতে পারবেন সবাই, এতে আমাদের দাবাড়ুরা অনেক উৎসাহ পাবেন।’’ আনন্দের এক সময়ের সহকারী সূর্য বলছিলেন, ‘‘অগুন্তি প্রস্তুতি গেম খেলেছি আনন্দের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওঁর বিরুদ্ধে কখনও কোনও প্রতিযোগিতায় খেলিনি। তাই মুখিয়ে রয়েছি খেলতে। যে কোনও খেলাতেই বিশ্ব মানের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়াই করতে পারলে দ্রুত উন্নতি করা যায়। এই সুযোগটা এত দিন ছিল না। এই প্রতিযোগিতা সেই অভাবটা পূরণ করল।’’

Chess Dibyendu Barua Viswanathan Anand Surya Shekhar Ganguly বিশ্বনাথন আনন্দ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy