Advertisement
E-Paper

কেরল জুটিতে ফিরল যেন পুরনো স্মৃতি

মোহনবাগানের সেই ঝকঝকে, আগুনে আই এম বিজয়ন আর জো পল আনচেরির স্মৃতি এখনও তো গ্যালারিতে টাটকা। পড়শি ক্লাবের কেরল যুগলবন্দির সাফল্যে হঠাৎ-ই তা আরও উথলে উঠল যেন।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৩

ইস্টবেঙ্গল ৩ : রেলওয়ে এফ সি ০

নয়ের দশকের সেই সোনায় মোড়া জুটি কি উঁকি দিতে শুরু করল কলকাতা ফুটবলে!

মোহনবাগানের সেই ঝকঝকে, আগুনে আই এম বিজয়ন আর জো পল আনচেরির স্মৃতি এখনও তো গ্যালারিতে টাটকা। পড়শি ক্লাবের কেরল যুগলবন্দির সাফল্যে হঠাৎ-ই তা আরও উথলে উঠল যেন।

শুরুর ম্যাচ। বাড়াবাড়ি হয়তো! কিন্তু মাঠে নেমেই তো স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিলেন তিরুঅনন্তপুরম আর মালাপ্পুরমের দুই স্ট্রাইকার। নারকেল, সৈকত, সমুদ্রের রাজ্য থেকে এসে জুটি বেঁধে তিন-তিনটে গোল।

আনচেরি বল বাড়াতেন বিজয়নকে। বিজয়নও। ভি পি সুহেইর আর জোবি জাস্টিনও তো সেটা করেই রেলকে বেলাইন করে দিলেন সোমবারের বৃষ্টিস্নাত বিকেলে। যা দেখে মুগ্ধ লাল-হলুদ গ্যালারি উত্তাল। সুহেইরের পাস থেকে জোবির গোল শুরুতেই, সেটা জোবি বন্ধু-কে ফিরিয়ে দিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। বলা যায় ফিরিয়ে দিলেন ফুটবল ঈশ্বর। না হলে জোবির শট রেল পোস্টের ভিতর দিকে লেগে কেন চলে যাবে সুহেইরের কাছেই। যা থেকে শাপমুক্তি হল তাঁর। প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পর ফের গোলে ফিরলেন লাল-হলুদ স্ট্রাইকার। একটা নয়, জোড়া গোল।

আরও পড়ুন: একটা পা না থাকলেও আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলব: ধোনি

এ রকম কত গোলই তো করেছেন ওঁরা। কেরলের জার্সিতে সন্তোষ ট্রফি বা জাতীয় গেমসে। কত ম্যাচ খেলেছেন, হিসেব করার সময় একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়লেন হাসতে হাসতে। জোবি বললেন, ‘’১০-১২টা।’’ আর সুহেইর বললেন, ‘‘অনেক ম্যাচ।’’

ইস্টবেঙ্গল রিক্রুটার হয়ে অ্যালভিটো ডি কুনহা এবং ষষ্ঠী দুলে যখন কেরলে ফুটবলার বাছতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে তিন জনের নাম দেন আই এম বিজয়ন। জোবি ছিলেন বিজয়নের তালিকায় এক নম্বরে। সুহেইর চেনা মুখ। কলকাতায় খেলে গিয়েছেন। তবুও এখন কী অবস্থায় আছেন তা বুঝতে কেরলের প্রিমিয়ার লিগের টিম গোকুলম ক্লাবের ম্যাচ দেখতে যান লাল-হলুদের দুই প্রাক্তন। অ্যালভিটো বলছিলেন, ‘‘ওদের দু’জনের জুটি একসঙ্গে খেলেছে অনেক ম্যাচ। সেটা মাথায় ছিল আমাদের।’’ মশালবাহিনী তো বটেই, উচ্ছ্বাসহীন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল পর্যন্ত একান্তে বলে দিলেন, ‘‘উইলিস প্লাজার অভাব ওরা বুঝতে দেয়নি। আমার টিমে কিন্তু সবাই সমান।’’ প্লাজাবিহীন ইস্টবেঙ্গলে কেরলের জুটি যে সুপারহিট।

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে এ বার গোলের ছড়াছড়ি। তিন প্রধান তো মুড়ি-মুড়কির মতো গোল করছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০ ম্যাচে ৬৫ গোল হয়েছে। গড় তিনেরও বেশি। সাম্প্রতিককালে কলকাতা ফুটবলে যা নজিরবিহীন। আরও চমকপ্রদ তথ্য, বিদেশিদের চেয়ে স্বদেশীরাই বেশি গোল করেছেন।

চারটি ম্যাচ খেলার পর রেলওয়ে এফ সি-র পয়েন্ট শূন্য। অফিস দল। টিমে বিদেশি নেওয়ার নিয়ম নেই। আশি শতাংশ ফুটবলার স্থায়ী রেল-কর্মী। বেশির ভাগের খেলায় তাই কয়লার ইঞ্জিনের ছায়া। একমাত্র ‘দুরন্ত’ মনে হল টিমের স্টপার অভিষেক আইচ-কে। মূলত তাঁর সাহসিকতার জন্যই স্কোর লাইনটা ৬-০ হল না। রেল গোললাইন থেকে বছর পঁয়ত্রিশের অভিষেক অন্তত দু’টো গোল বাঁচালেন। ইস্টবেঙ্গলের আল আমনাকে বাছা হল ম্যাচের সেরা, হওয়া উচিত ছিল অভিষেকেরই।

প্লাজা আর কার্লাইল মিচেল দেশের হয়ে খেলতে চলে গিয়েছেন। লাল-হলুদে অন্তত এ দিন তার প্রভাব পড়েনি। না পড়ার কারণ, খালিদের টিমের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি এবং ফিট থাকা। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল ইস্টবেঙ্গল। প্রতিদিন গোলদাতা বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে নায়কের মুখ। এটা যে কোনও টিমের পক্ষে সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। ইস্টবেঙ্গলকে যেটা আরও সাহায্য করছে তা হল আল আমনার ধারাবাহিকতা। বৃষ্টি মাঠেই এই, শুকনো মাঠ পেলে যে সিরিয়ার মিডিও রামধনু হবেন টিমের!

প্রতি ম্যাচের আগেই লাল-হলুদ কোচ গিয়ে বিপক্ষ কোচের সঙ্গে করমর্দন করে আসেন। খেলার শেষে দর্শকদের কাছে গিয়ে অভিবাদন জানিয়ে আসার রীতি চালু করেছেন খালিদ। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন দর্শকের ঢল নামা গ্যালারি তাঁর সঙ্গী হয় নিমেষে। খালিদ তা দেখে হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আচ্ছে হ্যায় সব।’’

ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারেটো, সামাদ মল্লিক, গুরবিন্দর সিংহ, মেহতাব সিংহ, লালরাম চুলোভা (তন্ময় ঘোষ), প্রকাশ সরকার, আল আমনা, ব্র্যান্ডন (সুরাবুদ্দিন), লালদানমাইয়া রালতে, ভিপি সুহেইর, জোবি জাস্টিন (গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্ডেজ)।

Suhair VP Joby Justin East Bengal CFL Football ভি পি সুহেইর জোবি জাস্টিন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy