Advertisement
E-Paper

গোতি ভাইয়ের জন্যই চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা জিততে ইচ্ছে করে

ক্রিকেটটা তাঁর ভালই লাগে, তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে মাছ ধরতে! টুইট করেন, নিজের ছবি-টবিও দেন, আবার অক্লেশে বলে দেন, “ওহ ওটা? ওটা আমার নামের ফেক টুইটার অ্যাকাউন্ট। কে জানে কোত্থেকে ছবি পায়?”

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
কুলদীপ আর সূর্য...সূর্য তো স্কুপমার যাদব। ওকে বলে দিও। বেবিনাইট তোমাদের নিয়ে আমি ভী-ষ-ণ গর্বিত। টুইটারে শাহরুখ খান

কুলদীপ আর সূর্য...সূর্য তো স্কুপমার যাদব। ওকে বলে দিও। বেবিনাইট তোমাদের নিয়ে আমি ভী-ষ-ণ গর্বিত। টুইটারে শাহরুখ খান

ক্রিকেটটা তাঁর ভালই লাগে, তার চেয়েও বেশি ভাল লাগে মাছ ধরতে!

টুইট করেন, নিজের ছবি-টবিও দেন, আবার অক্লেশে বলে দেন, “ওহ ওটা? ওটা আমার নামের ফেক টুইটার অ্যাকাউন্ট। কে জানে কোত্থেকে ছবি পায়?”

মিস্ট্রি স্পিনার? চায়নাম্যানের ও সব পছন্দ নয়। নিজের ডেলিভারিতে মিস্টিরিয়াস কিছু আছে বলে তাঁর মনে হয় না। “ব্যাটসম্যানদেরই শুধু মনে হয় কী না কী বল করছি। আমার বোলিংয়ে কোনও রহস্য আছে বলে আমার তো মনে হয় না।”

উত্তরপ্রদেশের উনিশ বছরের কিশোরকে যাঁরা বুধবারের উপ্পলে উইকেট পেয়ে শোয়েব আখতারের ঢংয়ে মাঠ জুড়ে ছুটোছুটি করতে দেখলেন, যিনি বাঁধনহীন আবেগে এক-এক জন অস্ট্রেলীয়কে আউট করে পছন্দ করলেন কালিসের কোল, দেখলে পাশের বাড়ির ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে যাওয়া ছেলেটার সঙ্গে খুব আলাদা করা যাবে না। কুলদীপ যাদবকে দেখলে মনে হবে, ছেলেটা অত্যন্ত রকম তোমার-আমার-আমাদের। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে ছেলের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, কুলদীপের ‘পাশের বাড়ি’ ইমেজের বাইরেও একটা দিক আছে। যা বিরল প্রতিভাবানদের থাকে।

পাগলামি!

কুলদীপ নাকি অস্ট্রেলিয়ায় এ বার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে ‘সি-ফিশিং’ করতে করতে আবিষ্কার করেছেন, আরে, এটাই তো সবচেয়ে ভাল সময় জীবন নিয়ে ভাবার। মনে-মনে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার। ব্যাপারটা অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে নিয়ম হয়ে গিয়েছে। “বাড়ির কাছে একটা পুকুর আছে। এখন সময় পেলে ওখানে চলে যাই। মাছ ধরি। চুপচাপ বসে থাকি। আমার কাছে নিজেকে রিল্যাক্সড রাখার এটাই সেরা মাধ্যম,” হায়দরাবাদ থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন কুলদীপ। বাইশ গজেও টোপ দিতে এখন ভালই শিখেছেন। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউ কেউ পরে স্বীকারও করে গেলেন, কুলদীপের বলগুলো দেখলে মারার খুব ইচ্ছে হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, ওগুলো প্রত্যেকটা এক-একটা মৃত্যুবাণ ছিল।

আজ মনে হয়, কোচ কপিল পাণ্ডে সে দিন ঠিক ছিলেন?

“হ্যাঁ, আমিই তখন চাইনি পেস বোলিং ছেড়ে স্পিন ধরতে। হয়তো সেটা হতও না। কিন্তু কোচিং ক্যাম্পে আমার প্রথম ডেলিভারিটাই চায়নাম্যান পড়ল। ব্যাস, স্যর আর কোনও দিনই কিছু শুনতে চাইলেন না,” বলছিলেন কুলদীপ। আগে ওয়াসিম আক্রম হতে ইচ্ছে হত যাঁর, পরে সেই কুলদীপই ‘দীক্ষা’ নেন শেন ওয়ার্নের কাছে। কোচ তাঁর সামনে ওয়ার্নের বোলিং ভিডিও চালিয়ে দিতেন। বলতেন, দ্যাখ, এটাকে বলে ফ্লিপার... এটা গুগলি।

“তা-ও আমি এখনও নিজের সব ক’টা ভেরিয়েশন ব্যবহার করিনি। বেসিকগুলো করেছি। বল ভেতরে আনা আর বাইরে বের করা।” ওয়ার্নের ভিডিও থামিয়ে এখন লাইভ দেখেন সুনীল নারিনকে। ম্যাচের মধ্যে হোক বা নেটে, সোজা ক্যারিবিয়ান স্পিন মায়েস্ত্রোর কাছে চলে যান। তাঁর শিশুসুলভ স্বীকারোক্তি, “গিয়ে বলি, আমাকে আইডিয়া দাও। কী ভাবে আরও ভাল করতে পারি, বলে দাও। নারিনের সঙ্গে বল করি বলে কখনওই আমার উপর চাপ বেশি থাকে না।” চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নারিন, আইপিএল সেভেনে নারিন প্লাস সাকিব। উনিশ বছরের কিশোর স্পিন-পাঠে কোনও গুরুকেই রেহাই বিশেষ দেননি।

এত ‘জ্বালান’ যে, কেউ বকে না? ক্যাপ্টেন গম্ভীর এত সিরিয়াস থাকেন। মাঝে মাঝে বকাঝকা করেন?

“না না। গোতি ভাই খুব ভাল। অসাধারণ মানুষ। ক্যাপ্টেন হিসেবে অ্যাটাকিং বলে ও রকম সিরিয়াস মনে হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। আমার কখনওই কেকেআরে মনে হয় না যে, আমি বয়সে ছোট। আমাকে সব বুঝে শুনে চলতে হবে। সবার কথা শুনতে হবে। কেকেআর বরং আমাকে বোঝায় যে, আমি যথেষ্ট পরিণত। সিনিয়রদের সঙ্গে খুব তফাত আমার নেই। টিমের বাকি দশ যতটা গুরুত্ব গোতি ভাইয়ের কাছে পায়, আমিও তাই পাই। সত্যি বলতে, গোতি ভাইয়ের জন্যই আমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা জিততে চাই,” অকপটে বলে যান অজি-বধের নায়ক। গোতি ভাইয়ের মতোই যাঁর অসম্ভব অবাক লাগে কলকাতাকে দেখে। শহরের মানুষের সমর্থনের চেহারা দেখে। দেশের আর পাঁচটা ক্রিকেট মাঠের সমর্থনের সঙ্গে ইডেনের উত্তুঙ্গ আবেগকে মেলাতে পারেন না। “কী বলব ইডেন নিয়ে! এই একটা স্টেডিয়ামে ম্যাচে আমরা হেরে যেতে পারি ভাবলেও খারাপ লাগে। হেরে গেলে গ্যালারির দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে ওরাও হেরে গেল!”

কেকেআরের আরও একটা ব্যাপার দেখলে তাঁর অবাক লাগে। ফ্র্যাঞ্চাইজি পৃথিবীদের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কোথাও কেকেআরকে আলাদা মনে হয়। মনে হয়, এই একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে যারা শুধু টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে ভাবে না। ভাবে ভবিষ্যতে কী ভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যাবে, তা নিয়েও। ভাবে নিজেদের একটা স্বতন্ত্র পরম্পরা তৈরির কথা। “আমি, সূর্য, মণীশ, আমরা সবাই কেকেআরের নেক্সট জেনারেশন। বলাও হয়েছে সেটা বারবার। এই দায়িত্বটা নিতে আমরা পুরোপুরি তৈরি। এখন যা চাপ নেওয়ার, সিনিয়ররা নেয়। আমরা ফ্রি খেলি। এর পর থেকে আমরাও দায়িত্ব নেব।” টানা বারোয় বারো তাই এমনিই আসে। আসে টিমের অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রতিভার মিশ্রণে, আসে সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়রদের টিমের একই রকম ভাবে প্রোমোট করার ইচ্ছেয়। আসে অতীত ভুলে ভবিষ্যতের ভাবনায়। আসে টিম মালিকের অবিশ্বাস্য সৌহার্দ্যতায়। কিং খান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আসতে পারছেন না। শাহরুখ খান এখন আমেরিকায়। টিম ফাইনালে উঠলেও পারবেন কি না সন্দেহ, তখন নাকি তাঁর লন্ডন ট্যুর আছে। টিমের সঙ্গে তিনি না থাকলেও টিমের ভাবনা যে তাঁর সব সময়ের সঙ্গী, তার প্রমাণ এসআরকের অসংখ্য টুইট। কখনও নিউ ইয়র্ক থেকে, কখনও ওয়াশিংটন ডিসি। “এত বড় স্টার হয়েও আমাদের এত খোঁজ-খবর নেন, মাটির এত কাছাকাছি থাকেন যে দেখলে বিশ্বাস হয় না। ম্যাচ দেখেন, টুইট করেন, সবচেয়ে বড় কথা, সমস্ত প্লেয়ারের উপর আস্থা রাখেন।”

কুলদীপের মনে হয়, মুম্বইয়ের সংসার ছেড়ে কেকেআরে আসাটা তাঁর ক্রিকেটজীবনের ক্ষেত্রে শুভই হয়েছে। এখানে এমন এক টিম আছে, এমন এক টিম মালিক আছেন, যাঁর জন্য কিছু করতে ইচ্ছে হয়। যাঁকে খুশি করতে ইচ্ছে হয়।

শাহরুখ খান খুব বেশি কিছু চান না। কিন্তু সামান্য কিছু চাইলেও কেকেআরের কুলদীপ যাদবদের আজ তৎক্ষণাৎ বলতে ইচ্ছে হয়, ‘ইয়েস বস্!’

kuldeep yadav champions league t20 cricket kkr priyadarshini rakshit gautam gambhir sports news online sports news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy