Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cricket

২২ বছর আগে সচিনের সেই মরুঝড়ে উড়ে গিয়েছিলেন ওয়ার্ন-কাসপ্রোইচরা

ফাইনালেও সচিনের ব্যাট ম্যাজিক দেখিয়েছিল। তবে সেমিফাইনালে সচিন যদি জ্বলে না উঠতেন, তা হলে ফাইনালে পৌঁছনো সম্ভবই হত না ভারতের পক্ষে।

শারজায় সচিনের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস। —ফাইল চিত্র।

শারজায় সচিনের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৩৭
Share: Save:

সচিন খেললে ভারত জিতবে। তখন এটাই ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের রিং টোন।

আজ থেকে ২২ বছর আগের শারজা তার প্রমাণ পেয়েছিল। কোকা কোলা কাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটা অবশ্য ভারত জিততে পারেনি। কিন্তু ফাইনালের পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৩৭ রান উঠেছিল ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর মরুঝড়ের সৌজন্যে। ভারতও হইহই করে ফাইনালে যায়। ফাইনালেও সেই প্রবল শক্তিশালী অজিরা। তাঁদের হারিয়ে শারজা থেকে কাপ নিয়ে দেশে ফিরেছিল ভারত।

ফাইনালেও সচিনের ব্যাট ম্যাজিক দেখিয়েছিল। তবে সেমিফাইনালে সচিন যদি জ্বলে না উঠতেন, তা হলে ফাইনালে পৌঁছনো সম্ভবই হত না ভারতের পক্ষে। ফাইনালে পৌঁছনোর রাস্তা ভারতের জন্য মোটেও ফুল বিছানো ছিল না। বরং কাঁটা বিছানোই ছিল।

আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলে ফিরছেন মর্গ্যানের আমলের তারকা ফুটবলার

সেমিফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৮৪ রান। শারজার উইকেটে ২৮৪ রান যথেষ্ট কঠিন টার্গেট। পরের দিকে উইকেট হযে যেত স্লো। তার উপরে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ ছিল দারুণ শক্তিশালী। শেন ওয়ার্ন, মাইকেল ক্যাসপ্রোইচ, ড্যামিয়েন ফ্লেমিং। তার উপর শারজার আবহাওয়া যেন ছিল অগ্নিকুণ্ড। তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রির কাছাকাছি।

এ রকম আবহাওয়ায় খেলা কঠিন হয়ে পড়ে। শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বেরোয়। ফলে রান তাড়া করতে নেমে ক্লান্ত হয়ে যান ব্যাটসম্যানরা। অজিদের রান তাড়া করতে নেমে দলের ৩৮ রানে ফিরে যান ওপেনার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১৭)।

মহম্মদ আজহারউদ্দিন সেই টুর্নামেন্টে রানে ছিলেন না। দ্রুত রান তোলার জন্য তিন নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল নয়ন মোঙ্গিয়াকে। মোঙ্গিয়া দ্রুত ৪৬ বলে ৩৫ রান করেন। তিনি যখন আউট হন, তখন ভারতের রান ২ উইকেটে ১০৭। আজহার ব্যক্তিগত ১৪ রানে আউট হন। আজয় জাদেজাও মাত্র ১ রানে ফিরে যান।

ম্যাচের রাশ তখন অজিদের হাতে। ভারত সমর্থকদের হৃদয় কেঁপে উঠেছে তত ক্ষণে। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার অশনি সঙ্কেত বুঝতে পারছেন তাঁরা। উইকেটের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সচিন তাঁর সতীর্থদের অয়ারাম গয়ারাম ব্যাটিং দেখে ক্লান্ত। এ রকম সময়ে ভারতের কাজ আরও কঠিন করে মরু ঝড় উঠল শারজায়। ম্যাচ বন্ধ থাকল বেশ কিছু ক্ষণ। পরে খেলা যখন শুরু হল, তখন ভারতের লক্ষ্যমাত্রা বদলে গেল। ম্যাচ জিততে হলে ৪৬ ওভারে তুলতে হবে ২৭৬ রান। আর নিউজিল্যান্ডকে টপকে ফাইনালে পৌঁছতে হলে ভারতকে করতে হবে ৪৬ ওভারে ২৩৭ রান।

এর পরেই শুরু হয় সচিন শো। ‘লিটল মাস্টার’-এর উল্টোদিকে ছিলেন ভিভিএস লক্ষ্ণণ। সচিন রুদ্রমূর্তি ধরেন। ওয়ার্নকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে গ্যালারিতে ফেলছেন তো ক্যাসপ্রোইচকে বাউন্ডারিতে পাঠাচ্ছেন। নিজেই সিংহভাগ স্ট্রাইক নিচ্ছিলেন। লক্ষ্ণণের কাজ ছিল স্ট্রাইক রোটেট করা।

আরও পড়ুন: লারাকে বল করতে ভয় পেতেন, স্বীকারোক্তি আফ্রিদির

রানের জন্য সচিন এতটাই মরিয়া ছিলেন যে সিঙ্গলকে ডাবল করার জন্য দৌড়চ্ছিলেন। দুইকে তিন করার জন্য আরও জোরে দৌড়চ্ছিলেন। লক্ষ্ণণ তাঁর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। এক বার সচিন বকাঝকা শুরু করে দেন লক্ষ্ণণকে। সচিনের বিধ্বংসী ১৩১ বলে ১৪৩ রানের সৌজন্যে ভারত খুব সহজেই ২৩৭ রান টপকে যায়।

‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর ইনিংসে সাজানো ছিল ন’টি বাউন্ডারি ও ৫টি ওভার বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ৪৬ ওভারে ভারত করে পাঁচ উইকেটে ২৫০ রান। অজিদের বিরুদ্ধে জিততে না পারলেও সচিনের অতিমানবিক ইনিংসের সুবাদে ভারত পৌঁছে যায় ফাইনালে। সচিনের সেই ইনিংস দেখলে এখনও রোমাঞ্চিত হন ক্রিকেটপাগলরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE