বুধবার সকালে আমাদের সবার প্রিয় সমীরদার (দাশগুপ্ত) চলে যাওয়ার খবরের পরপরই পেলাম ঋদ্ধিমানের চোটের খবর। প্রথমটা যতটা আকস্মিক, বেদনার, পরেরটা ততটা নয়। ঋদ্ধির যে হাতে একটা চোট আছে, তা জানাই ছিল। কিন্তু ওর যে আবার থাই মাসলেও স্ট্রেইন হয়েছে, সেটা জানতাম না।
যা পরিস্থিতি, তাতে এই সময় ওর বিশ্রামটা খুব দরকার ছিল। একজন উইকেটকিপারের পক্ষে টানা পাঁচটা টেস্ট খেলা যে কত কঠিন, তা নিজে উইকেটকিপার ছিলাম বলে আরও ভাল করে জানি। বলছি না যে কাজটা অসম্ভব। কিন্তু সুস্থ থাকলে তবেই না! তা-ও ঋদ্ধি যে হাতে চোট নিয়ে একটা টেস্ট খেলে দিল, এটাই অনেক। তার উপর মাসল স্ট্রেইন। ভারতীয় দলের একজন নিয়মিত ক্রিকেটারকে নিয়ে এত ঝুঁকি নেওয়াটা ঠিক নয়।
অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল যে, ঋদ্ধির যদি হঠাৎ চোট হয়ে যায়, তা হলে কাকে দলে আনা হতে পারে? পার্থিব পটেলকে ডেকে নির্বাচকরা সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন। আর আমার মনে হয়, উত্তরটা সন্তোষজনকই। পার্থিব মোটেই খারাপ বাছাই নয়। যে ছেলেটা গত তিন-চার বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল পারফরম্যান্স দিয়ে চলেছে, যার কুড়িটা টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাকে টেস্ট দলে ফেরত আনাটা মোটেই অন্যায্য নয়।
অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আট বছর আগে যে কিপার শেষ বার টেস্ট খেলেছে, তাকে আবার ফিরিয়ে আনার দরকার কী? একটা কথা মনে রাখবেন, এটা কিন্তু সাময়িক একটা ব্যবস্থা। কারণ, আমি যতদূর জানি, ঋদ্ধিকে কিন্তু শুধু মোহালি টেস্টের জন্যই বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। পরের টেস্টেই ফেরানো হবে। ওর চোটটা এতটা সিরিয়াস নয় যে, ও গোটা সিরিজই খেলতে পারবে না। শেষ দুটো টেস্টে ও যাতে আরও তাজা, সুস্থ হয়ে নামতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। আর এই মুহূর্তে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে পার্থিবের যা পারফরম্যান্স, তাতে ও-ই স্টপ গ্যাপ হিসেবে ফিট।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম ঋষভ পন্থের হয়ে অনেকে গলা ফাটিয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলি, একজন উইকেটকিপারকে নিছক স্কোরবোর্ড দেখে বা তার স্ট্যাটিস্টিক্স দেখে যাচাই করার চেষ্টা করবেন না। কিপারের ফর্ম বুঝতে গেলে তার সার্বিক পারফরম্যান্স দেখতে হয়। ঋষভ ব্যাটিংটা দারুণ করছে। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেটা স্কোরবোর্ড দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু ওর কিপিংটা এখন কী রকম, সেটা আমাদের নির্বাচকরা ভাল করেই জানেন। কারণ, ওঁরা সারা দেশ ঘুরে ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন ম্যাচ দেখেন। সে সব ম্যাচে কে কী রকম পারফর্ম করছে, তা খুব ভাল করে জানেন। তাই এই ব্যাপারটা মনে হয় ওঁদের উপর ছেড়ে দেওয়াই ভাল।
ঋষভের এখন বয়স মাত্র ১৯। ওর সামনে দীর্ঘ ভবিষ্যৎ প়ড়ে আছে। ও তো আর হাজার টাকার নোট নয় রে বাবা যে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবহার করতেই হবে। ওকে এখনও কিপিংটা আরও ভাল করতে হবে। এখনই যদি ওকে টেস্ট ক্রিকেটে নামিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে ওর কেরিয়ারেরই ক্ষতি হবে। যেমন পার্থিবেরই হয়েছিল। তা ছাড়া ভারতীয় দলের মধ্যেই তো একজন কিপার আছে। কে এল রাহুল। কই ওকে তো স্টপ গ্যাপ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে না। কারণ, ও সেই লেভেলের কিপার নয়।
সে দিন কাগজে পড়ছিলাম আমাদের নির্বাচক প্রধান এমএসকে প্রসাদ বলেছেন, টেস্টে এখন ঋদ্ধির আশেপাশে কেউ নেই। আমারও তাই মনে হয়। পার্থিবও যে ঋদ্ধির সঠিক বিকল্প, তা-ও বলছি না। কিন্তু বাকি যারা আছে, তাদের মধ্যেই ও-ই সবচেয়ে মানানসই বলেই ওকে ডাকা হয়েছে।
আট বছর পর টেস্ট দলে ফিরে পার্থিব মানিয়ে নিতে পারবে? এটা আর একটা প্রশ্ন।
কেন পারবে না? দু’দিনের প্র্যাকটিসে বোঝাপড়াটা তৈরি হয়ে যায়। আমি যখন প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিলাম, তার আগে কতদিনই বা শ্রীনাথ, আশিস নেহরা, জাহির খান, অনিল কুম্বলেদের বিরুদ্ধে কিপিং করেছিলাম? বেসিকটা তো একই। সিনক্রোনাইজেশনটা তৈরি করতে হয়। যার অভিজ্ঞতা আছে তার পক্ষে এটা তৈরি করতে বেশি সময় লাগে না। পার্থিবের কুড়ি টেস্টের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীনেশ কার্তিক গত কয়েকটা রঞ্জি ম্যাচে কিপার হিসেবে খেলেনি, শুনছিলাম। নমন ওঝাও ফর্মে নেই। তা ছাড়া ওর কিপিং ঋদ্ধির ধারেকাছে আসে না। তা হলে পার্থিব ছাড়া উপায়ই বা কী?
টানা একশো ওভার অশ্বিন, জা়ডেজা, শামি, উমেশদের বিরুদ্ধে কিপিং করতে হলে কিছু নয়, অনেক কিছু থাকতে হয়। এটা তো বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট টিমে খেলা। কোনও এলেবেলে টিমে কিপিং করা তো নয়!
ঋদ্ধি এনসিএ-তে, পার্থিব মোহালিতে
বাঁ-ঊরুর পেশিতে চোট পাওয়ায় মোহালি টেস্টে খেলতে পারবেন না ঋদ্ধিমান সাহা। এর আগে হাতেও একটা ছোট চোট হয়েছিল তাঁর। সেই চোট নিয়েই অবশ্য বিশাখাপত্তনমে তৃতীয় টেস্ট খেলেন। চোট সারিয়ে পরের টেস্টের জন্য সুস্থ হতে ঋদ্ধিকে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হল। তাঁর জায়গায় ডাক পেলেন পার্থিব পটেল। যিনি আট বছর পর টেস্ট দলে ফিরছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy