Advertisement
E-Paper

চক দে

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে  এ ভাবে কৃষ্ণনগর কলেজের মাঠে দাপিয়ে বেড়ালেন মামনি, নবনীতাদের মতো ৪৮ জন মহিলা হকি খেলোয়াড়।

সুস্মিত হালদার ও সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৭

হকি স্টিকে বল নিয়ে ছুটছেন কোমল। তাঁকে সমান্তরালে ‘ফলো’ করছেন প্রীতি। সাইড লাইনের পাশ থেকে চিৎকার করছেন কোচ কবীর খান। তা পর কত ওঠাপড়া, লড়াই। শেষতক কবীর খান আর মহিলা খেলোয়াড়দের হাত ধরে বিশ্বজয় করল ভারত।

কাট টু: মামনি ছুটছেন গোল পোস্টের দিকে। ছুটছেন নবনীতাও। এখানেই সাইড লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কোচ হিমাংশু ঘোষ। নাহ্, তাঁকে এক বারও বলতে হল না, ‘পাস মামনি পাস।’ মামনির কাছ থেকে বল এসে আটকে গেল নবনীতার স্টিকে। তার পরে সোজা গোল।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এ ভাবে কৃষ্ণনগর কলেজের মাঠে দাপিয়ে বেড়ালেন মামনি, নবনীতাদের মতো ৪৮ জন মহিলা হকি খেলোয়াড়। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট হকি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, তাদের উদ্যোগে জেলায় এই প্রথম বার হকি স্টিক হাতে প্রতিযোগিতার মাঠে নামলেন মেয়েরা।

যা শুনে ডোমকলের সাহিনা খাতুন, দীপিকা ঘোষ বলছেন, ‘‘ইস! আমরা যে কবে এ ভাবে মাঠে নামতে পারব, কে জানে!’’ হকির সরঞ্জাম আছে। কবির খানের মতো কোচও আছে। নেই শুধু মাঠটাই। আর সেই কারণে টিফিনের সময় ঘরের কোণে থাকা হকি স্টিক নিয়ে কলেজের বারান্দাটাকেই খেলার মাঠ ভেবে বসেন সাহিনারা। কিন্তু শিক্ষকদের ধমকে সে আনন্দে দাঁড়ি পড়ে। ডোমকলের বসন্তপুর কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক মহম্মদ ইউসুফ আলি বলছেন, ‘‘আমাদের সব আছে। শুধু মাঠ নেই। কলেজ কতৃর্পক্ষকে আবেদন জানিয়েছি। সেটা হয়ে গেলেই আমরা ‘চক দে’ বলে মাঠে নেমে পড়ব।’’

কোচ হিমাংশু ঘোষ।

মামনিরা সে দিক থেকে ভাগ্যবান হলেও তাঁদের লড়াই মাঠে ও ঘরে সর্বত্রই। ভাতজাংলার মামনি বিশ্বাস একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বাড়িতে আছেন অসুস্থ মা, দাদা আর ভাই। কাপড়ে রং করে সামান্য আয়ে তিনি সংসার আর খেলা দু’টোই চালাচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে যে কত দিন চলবে, জানেন না মামনি।

শিমুলতলার নবনীতা মজুমদার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বৃদ্ধ বাবা ফেরি করেন। রাতজেগে সেলাই করেন নবনীতা। সে টাকায় সংসারে সাহায্য করেন। সঙ্গে চলে খেলা। এ ভাবেই লড়াই করে মামনি ও নবনীতা জাতীয় স্তরে খেলেছেন। কোচ হিমাংশু ঘোষ বলছেন, ‘‘আমাদের অনেক মেয়েই না খেয়ে মাঠে আসে। ওদের এই হার না মানা লড়াইকে কুর্নিশ করি। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তারা জাতীয় স্তরেও খেলে।’’ কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রায় ৭০ জন ছাত্রী নিয়মিত অনুশীলন করে। তাঁদের কারও বাবা রিকশা চালান, কারও বাবা ফেরিওয়ালা। কিন্তু সকলেরই অদম্য জেদ—জিততেই হবে। মাঠে, মাঠের বাইরেও।

মামনি বলছেন, ‘‘দেখবেন, এই হকিই এক দিন আমাদের পরিবারে হয়তো সুদিন নিয়ে আসবে।” তাঁর মতো স্বপ্ন দেখেন নবনীতা, পায়েল, মনীষা, সুপর্ণারাও। তাঁদের নিয়েই কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে ছেলেদের চারটি ও মেয়েদের তিনটি হকি টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। মেয়েরা প্রতিযোগিতায় নামল এই প্রথম বার। ছেলেরা প্রায় ২৫ বছর পরে। শহরের কয়েক জন হকিপ্রেমী সেই দলগুলিকে এক দিনের জন্য কিনেছেন। খরচ বইছেন তাঁরাই। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক সময় এই কৃষ্ণনগর শহর ছিল হকির খেলোয়াড়েদের আঁতুড়ঘর। অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো এই শহরের অনেকেই জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। আমরা হকির সেই সুদিন ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।”

Women's Hockey Krishnanagar Hockey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy