Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

শোকস্তব্ধ জার্মানিতে কোচই খলনায়ক, ডাক পরিবর্তনের

রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই জার্মানির খেলায় খুশি ছিলেন না দেশের মানুষ। তবে এই ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে প্রথম রাউন্ডেই যে ছিটকে যাবেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা, সেটা কেউই ভাবতে পারেননি।

হতাশ: বিদায়ের সঙ্গে লোর ভাগ্যে জুটল হারের অপমান। ছবি: এএফপি

হতাশ: বিদায়ের সঙ্গে লোর ভাগ্যে জুটল হারের অপমান। ছবি: এএফপি

সোহম রায়
মানহাইম শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০৪:৩৭
Share: Save:

শোক, অবিশ্বাস, ক্ষোভ, লজ্জা। সব কিছু নিয়ে এখন আবেগের এক কোলাজের গ্রাসে জার্মানি।

মানহাইমে আমার বাড়ির কাছাকাছি যে ‘পাবলিক ভিউইং এরিয়া’য় (যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানো হয়) ম্যাচ দেখছিলাম, সেখানে খেলা শেষ হওয়া মাত্র যেন সময় থেমে গিয়েছিল। অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে জার্মান সমর্থকেরা তাকিয়েছিলেন জায়ান্ট স্ক্রিনটার দিকে। অনেককে দেখলাম ভেঙে পড়েছেন কান্নায়।

রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই জার্মানির খেলায় খুশি ছিলেন না দেশের মানুষ। তবে এই ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে প্রথম রাউন্ডেই যে ছিটকে যাবেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা, সেটা কেউই ভাবতে পারেননি। বুধবার সকালে যখন অফিস করার জন্য ট্রেনে স্টুটগার্ট যাচ্ছিলাম, বেশ কয়েক জন জার্মান সমর্থকের সঙ্গে কথা হয়। ওঁরা কেউই ওয়াকিম লো-র দলের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওদের মাথায় নক-আউট নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এক জন তো আমাকে বলেই ফেললেন, ‘‘দ্বিতীয় রাউন্ডে আমাদের সম্ভবত ব্রাজিলের সঙ্গে খেলতে হবে। ওই ম্যাচে এ রকম খেললে চলবে না।’’

আরও পড়ুন: রুশ দেশে কোরিয়ান বিপ্লব, বিধ্বস্ত জার্মানি

কিন্তু ব্রাজিলের সামনে পড়ার আগেই দেশে ফেরার বিমান ধরতে হচ্ছে লো-র দলকে। গত কয়েক দিন ধরে দেখছিলাম, লো-কে নিয়ে একটা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তা ছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞও জার্মানির কোচকে নিয়ে খুশি ছিলেন না। তবে কোরিয়ার বিরুদ্ধে এই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। রাস্তার দু’পাশে বাড়িগুলোর গায়ে জার্মানির পতাকা লাগানো হয়েছিল। অফিসে অফিসে ম্যাচ দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এখানে স্থানীয় সময় ম্যাচ শুরু হয় বিকেল চারটেতে। যে সময়টায় বেশির ভাগ মানুষেরই অফিসে থাকার কথা। কিন্তু নানা জায়গায় দেখছিলাম, জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছেন। ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যেখানে আনন্দ, উত্তেজনায় ভরপুর মুখগুলো বিষাদে বদলে যেতে থাকে।

জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘোষণা করা হচ্ছিল, একটা গোল দিলেই জার্মানি পরের রাউন্ডে চলে যাবে। কিন্তু তার পরেই খবর আসতে থাকে, সুইডেন একের পর এক গোল দিচ্ছে মেক্সিকোকে। হতাশা ক্রমে বাড়তে থাকে। শুরু হয়ে যায় কান্না।

জার্মানির এই শোচনীয় ফলের জন্য বিশেষ ভাবে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে কোচ লো-কে। রাতে দেখছিলাম, জার্মানির একটা জনপ্রিয় কাগজের অনলাইন সংস্করণে সমীক্ষা করা হয়েছে। প্রশ্ন ছিল, লো-কে সরানো হবে কি না। যেখানে দেখলাম, ৬৭ শতাংশ ভোটদাতা বলেছেন, অবশ্যই সরানো হোক। ২১ শতাংশ লো-কেই চেয়েছেন কোচ হিসেবে। শোনা যাচ্ছে, লো-র চুক্তির মেয়াদ নাকি বাড়ানো হয়েছে। লো-র বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হল, দলের রোগগুলো আগেই চিহ্নিত হয়ে গেলেও তিনি তা সারাতে পারেননি। শেষ কয়েকটা ম্যাচ ধরে যা যা ভুল করেছেন, সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন কোরিয়া ম্যাচে।

জার্মানির সম্মানে আরও ধাক্কা লাগার কারণ, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হার। এশিয়ার এই দেশটির বিরুদ্ধে জার্মানির রেকর্ড খুবই ভাল। আর সেই কোরিয়ার কাছেই কি না হেরে বিদায় নিতে হল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। এটা আরও যন্ত্রণা বাড়িয়েছে জার্মানদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE