Advertisement
E-Paper

নতুন তারকা কুটিনহোকে নিয়ে গান গ্যালারিতে

ব্রাজিল বনাম কোস্টা রিকা ম্যাচ দেখার জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই মস্কো থেকে ট্রেনে সেন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি। সেই সঙ্গে প্রবল ঠান্ডা।

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৪:৫৩
তারকা: দু’টি ম্যাচে দুই গোল। আবার চমক কুটিনহোর। ছবি: গেটি ইমেজেস

তারকা: দু’টি ম্যাচে দুই গোল। আবার চমক কুটিনহোর। ছবি: গেটি ইমেজেস

ম্যাচটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে মাঠে বসে পড়লেন নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)। মার্সেলো ভিয়েরা দু’হাতে দিয়ে সতীর্থকে টেনে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। তবে একা নেমার নন, জয়ের আনন্দে কাঁদছেন ব্রাজিল সমর্থকেরাও।

ব্রাজিল বনাম কোস্টা রিকা ম্যাচ দেখার জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই মস্কো থেকে ট্রেনে সেন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি। সেই সঙ্গে প্রবল ঠান্ডা। স্থানীয় সময় বিকেল তিনটেয় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা। আমি অবশ্য সকাল দশটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়েছিলাম হোটেল থেকে। কারণ, দর্শকদের জন্য স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেওয়া হয় কিক অফের তিন ঘণ্টা আগে।

প্রথম চমক স্টেডিয়ামে যাওয়ার জন্য মেট্রোতে ওঠার পরে। অধিকাংশই ব্রাজিল সমর্থক। মেট্রোর কামরাতেই তাঁরা উৎসব শুরু করে দিয়েছেন। কেউ ড্রাম বাজাচ্ছেন। কেউ গান গাইছেন। কেউ আবার নাচছেন। এই দৃশ্য সারা জীবন ভুলতে পারব না। মনে হচ্ছিল আমি যেন রাশিয়া নয়, ব্রাজিলের কোনও শহরে রয়েছি। ওঁদের সঙ্গে আমিও যোগ দিলাম। স্টেশন থেকে ওঁদের সঙ্গেই স্টেডিয়ামে পৌঁছলাম। সেখানেও একই দৃশ্য। মনে হচ্ছিল যেন বসে রয়েছি হলুদ সর্ষে ক্ষেতে!

সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেই আলাপ হল কয়েক জন বাঙালির সঙ্গে। ইস্টবেঙ্গলের অন্ধ সমর্থক তাঁরা। বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম কোস্টা রিকা ম্যাচ দেখতে এসেছেন লাল-হলুদ জার্সি পরে। সঙ্গে ভারতের জাতীয় পতাকা।

কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলতে শুরু করে ব্রাজিল। কিন্তু গোল না হওয়ায় উদ্বেগ বাড়তে শুরু করল ব্রাজিল সমর্থকদের মধ্যে। আমার কিন্তু মনে হচ্ছিল, কোস্টা রিকার পক্ষে এই ব্রাজিলকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা সম্ভব হবে না। তা সত্ত্বেও প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধেও একই ছবি। সারা মাঠ জুড়ে খেলছে ব্রাজিল। বল দখলের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে নেমাররা। শুধু গোলটাই হচ্ছে না।

৭৮ মিনিটে কোস্টা রিকার পেনাল্টি বক্সে পড়ে যান নেমার। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্যালারিতে ফের উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভিডিয়ো অ্যাসিট্যান্ট রেফারি (ভার) প্রযুক্তির ব্যবহার করে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন। ব্রাজিল সমর্থকেরা এমন ভাবে আর্তনাদ করে উঠলেন, মনে হল ভয়ঙ্কর কোনও বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। কয়েক মিনিটের স্তব্ধতা। তার পরেই শুরু হল রেফারিকে গালাগাল, অভিশাপ দেওয়া। ব্রাজিল সমর্থকদের বিশেষত্ব হচ্ছে, গানের সময় সবাই যেমন গলা মেলান, তেমনই গালাগালও একসঙ্গে দেন। অসাধারণ ঐক্য।

পেনাল্টি বাতিল করে দেওয়ায় আমারও মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবুও মনে হচ্ছিল, ব্রাজিলই জিতবে। শেষ পর্যন্ত আমার ধারণাই ঠিক। সংযুক্ত সময়ে অসাধারণ গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দিলেন ফিলিপে কুটিনহো। তার ঠিক ছয় মিনিট পরেই গোল করলেন নেমার। প্রথম ম্যাচে গোল পাননি ব্রাজিল তারকা। সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফুটবলাররা আগের ম্যাচে এমন মেরেছেন যে, স্বাভাবিক খেলাই খেলতে পারেননি নেমার। এই ম্যাচে যেন নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া ছিলেন। তাই গোলের পরে আর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। নেমার এ দিন খেলার ধরনও একটু বদলে ফেলেছিলেন। আগের ম্যাচের মতো পায়ে বেশি ক্ষণ বল রাখছিলেন না। দ্রুত পাস দিয়ে জায়গা নিচ্ছিলেন। ফলে কোস্টা রিকার ফুটবলাররা ওঁকে ধরতে পারছিলেন না। তবে আমার মতে, ব্রাজিলের জয়ের আসল নায়ক কুটিনহো। অসাধারণ খেললেন। ওঁর সব চেয়ে বড় গুণ, নিজেকে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের থেকে আড়াল করে রাখার ক্ষমতা। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পরে ওঁর খেলার ধার আরও বেড়েছে। এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণে নেতৃত্ব কুটিনহোই দিচ্ছেন। সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন। শুক্রবারও করলেন। ব্রাজিলের সমর্থকেরা তো কুটিনহোকে নিয়ে গানও বেঁধে ফেলেছেন। পুরো ম্যাচটাই চলল সেই গান।

Philippe Coutinho Football FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Brazil
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy