Advertisement
০২ মে ২০২৪

দুর্ঘটনা ছাড়া আর কোনও ব্যাখ্যাই নেই সাউথগেটের

যেমন, বলা হয়েছে ক্রোয়েশিয়া হারতে পারে না এটা সব রাশিয়ানই জানত। লুকা মদ্রিচের টিমের হয়ে তাই কোটি কোটি রুবল বাজি ধরেছিলেন অনেকেই।

ফাইনালে না উঠতে পারার আফসোস সাউথগেটের মুখে।

ফাইনালে না উঠতে পারার আফসোস সাউথগেটের মুখে।

রতন চক্রবর্তী
মস্কো শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

রাশিয়া যেন রহস্যের মধ্যে একটা প্রহেলিকা!

রাশিয়ানদের নিয়ে চালু প্রবাদ হল যে, সবাই যখন টিভি দেখে তখন এখানকার লোকজন ক্যামেরা বসিয়ে অন্যরা কী করছে তার খোঁজ করে।

আরও একটা চালু প্রবাদ হল, এখানে সবাই নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট ভাবে।

এর সবকটাই প্রবাদ। বাস্তবের সঙ্গে হয়তো মিল নেই। কিন্তু রাশিয়ায় অঘটনের বিশ্বকাপ নিয়ে এখানকার একটি কাগজে যে মজাদার প্রবন্ধ বেরিয়েছে, তাতে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ইংল্যান্ডের হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উপরের প্রসঙ্গগুলো টেনে এনেছেন তার লেখক। তাতে ফুটবলের টেকনিক নিয়ে যতটা না লেখা হয়েছে তার চেয়ে বেশি লেখা হয়েছে প্রবাদের কথা।

যেমন, বলা হয়েছে ক্রোয়েশিয়া হারতে পারে না এটা সব রাশিয়ানই জানত। লুকা মদ্রিচের টিমের হয়ে তাই কোটি কোটি রুবল বাজি ধরেছিলেন অনেকেই। কারণ, যুগোস্লাভিয়া ভেঙে বেরিয়ে আসা কোনও দেশ লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার কোনও টিমের কাছে হারতে পারে। কিন্তু কোনও মঞ্চেই তারা ইউরোপের কোনও দেশের কাছে হারবে না। এটা নাকি সবারই বদ্ধমূল ধারণা।

কাকতালীয় হলেও বুধবার রাতে লুঝনিকি স্টেডিয়ামেও সেটাই হল। দেখা গেল হ্যারি কেনদের মতো খেতাবের সিংহাসনে বসতে যাওয়া টিমও পর্যুদস্ত। তা হলে কী ফাইনালে ফ্রান্সের অবস্থাও হবে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের মতো? সেটা নিয়ে কিছু লেখা হয়নি ওই প্রবন্ধে। তবে ইঙ্গিত সে রকমই।

রাশিয়ায় কি তা হলে সবই উলটপুরাণ!

এক মাস হতে চলল লেনিনের দেশে বিশ্বকাপ চলছে। দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ম্যাচের ফলই দলের শক্তি অনুযায়ী হয়নি। মেসি, রোনাল্ডো, নেমার, মুলারদের মতো তারকাদেরও অসহায় ভাবে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: মোরিনহোর নজর নতুন করে সেই পেরিসিচে

দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে জার্মানি হার সারা বিশ্বের কাছেই অকল্পনীয় ছিল। তেমনই ক্রোয়েশিয়ার কাছে লিয়োনেল মেসির দল হারবে কেউ ভেবেছিল কি? আর ব্রাজিল! তাদের তো সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসাবে ধরা হচ্ছিল। তিতের দল বেলজিয়ামের কাছে হেরে যাবে তা নিয়ে বিশ্বের কেউ কোথাও বাজি ধরেছে বলে মনে হয় না। আর রাশিয়ার কাছে হেরে যাবে স্পেন, সেটা তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। রুশ ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে রুটি-বিক্রেতা কেউই বিশ্বাস করেননি। এরকম হতে পারে।

কেন তাদের দলের হাল এমন হল, তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন তিতে থেকে ওয়াকিম লো, সাম্পাওলি থেকে ফের্নান্দো ইয়েরো—সবাই। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর একই অবস্থা ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটেরও। যে ম্যাচে ছয় মিনিটের মধ্যে আপনি এগিয়ে গিয়েছেন সেখানে এভাবে হেরে গেলেন? কারণটা কী?

কালো কোট, সাদা প্যান্ট, টাই পড়ে আসা সাউথগেট এক সময় ফুটবল কোচিংয়ের পাশাপাশি আইন নিয়েও নাকি পড়াশুনা করতেন ভদ্রলোক। দেশের মিডিয়ার চাঁচাছোলা প্রশ্নের সামনে তাঁকে অসহায় দেখাল। বলে দিলেন, ‘‘ফুটবলে এমন হয়। কী করা যাবে! দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে। আমার ছেলেরা বেশিরভাগই এ বার প্রথম বিশ্বকাপ খেলছে। সেটাই সমস্যা হয়ছে।’’ কিন্তু শুরুতে গোল পেয়ে কি আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল আপনার দলের? বিরতির আগেই কি মনে হচ্ছিল হেঁটে হেঁটে ফাইনালে চলে যাবেন? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের চোখাচোখা প্রশ্ন থামতেই চায় না। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড কোচ বলে দিলেন, ‘‘এটা হৃদয় বিদারক ঘটনা সন্দেহ নেই। হয়তো আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল। দলে অনেক নতুন ছেলে। পরের বার আরও পরিণত ইংল্যান্ডকে দেখতে পাবেন।’’

হ্যারি কেনরা চ্যাম্পিয়ন হবেন ধরে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা। সেজন্যই দলে দলে মস্কো চলে এসেছিলেন তাঁরা। ফাইনালের টিকিটও কেটে ফেলেছিলেন অনেকে। ইংল্যান্ডের বিদায়ের পর লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে ফেরার পথে দেখা গেল, রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন কিয়েরন ট্রিপিয়ারদের বহু সমর্থক। সবাই প্রায় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায়। আশেপাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিয়ার মগ। সত্তরোর্ধ এক সমর্থক মেট্রোর চলন্ত সিঁড়িতে মুখ থুবড়ে পড়লেন। পুলিশ তাঁকে সরিয়ে নিয়ে গেল অন্যদিকে।

ক্রোয়েশিয়ার কাছে অবাক হারের পরে ডেভিড বেকহ্যামের দেশের নতুন প্রজন্মও মিক্সড জোনে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। হ্যারি কেন বা কিয়েরন ট্রিপিয়াররা প্রায় সবাই ‘দুঃখিত’ বলে চলে গেলেন। সাউথগেটকে অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে আসতেই হল। তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘এই ম্যাচটা মুঠোয় নিয়েও আমরা কিছু করতে পারিনি। দুর্ঘটনা ছাড়া আমার কাছে কোনও ব্যাখ্যা নেই।’’ তার কিছুক্ষণ পর এসে ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো দালিচ আবার বলে গেলেন, ‘‘এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়, হওয়ারই ছিল। আমার দল গোল খাওয়ার পর জাগে। শেষ তিনটি ম্যাচে সেটাই প্রমাণিত।’’

ঘটনা হল, ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে দুই শিবির ছিল দু’রকম। ইংল্যান্ডের অনুশীলনে ছিল রবারের মুরগি নিয়ে অনুশীলন বা বিলিয়ার্ডস খেলার ব্যবস্থা। মানসিক ভাবে চাঙ্গা করার জন্য ছিল এই পদ্ধতি। অন্যদিকে ‘ইউক্রেন’ নিয়ে মন্তব্য করে রাশিয়ায় দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার এক ফুটবলার ও এক সহকারি কোচ। তা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে ছিল পুরো দল। কিন্তু ম্যাচে নেমে বাজিমাত করে গেলেন লুকা মদ্রিচরাই।

রাশিয়ায় কি তা হলে কোনও কিছুই অঙ্ক মেনে হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE