দুরন্ত: হাইতির বিরুদ্ধেও নিজেকে উজাড় করে দিলেন মেসি। বুধবার বুয়েনস আইরেসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে করলেন হ্যাটট্রিক। ছবি: গেটি ইমেজেস
বিশ্বকাপের অধরা স্বপ্ন পূরণ করার শেষ সুযোগই হয়তো পাচ্ছেন তিনি। হয় রাশিয়ায় কাপ জিতে দিয়েগো মারাদোনার পাশে বসো, নয়তো বাকি জীবন শুনতে হবে— দিয়েগো বিশ্ব জয় করেছিলেন, তিনি পারেননি।
মস্কোর ফাইনালে সত্যিই তাঁর হাতে বিশ্বকাপ উঠতে দেখা যাবে কি না, সময় বলবে। কিন্তু রাশিয়ার যাত্রা দারুণ ভাবেই শুরু করে দিলেন লিয়োনেল মেসি। প্রস্তুতি ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে তিনি বাড়িয়ে দিলেন আর্জেন্তিনীয় ফুটবল ভক্তদের আশাও। ম্যাচ জিতে উঠে আর্জেন্তিনীয় ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করলেন তিনি। ধন্যবাদ দিলেন, তাঁদের দলকে সমর্থন করার জন্য। স্পেনের কাছে ১-৬ হারার পরেও যে ভাবে সমর্থকেরা পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটার প্রশংসা করলেন মেসি। বুয়েনস আইরেসের মাঠে হ্যাটট্রিকের পরে যখন দ্বিতীয়ার্ধে মেসিকে তুলে নেওয়া হচ্ছে, দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালিতে ভরিয়ে দিয়েছিলেন মাঠ। এই দৃশ্য কিন্তু মোটেও মেসিদের কাছে পরিচিত নয়। বরং দেশের মাঠে যখন তাঁদের দল কষ্ট করে এগোচ্ছিল, নানা রকম বিদ্রুপের মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে যোগ্যতা অর্জন পর্বে যখন আর্জেন্তিনার রাশিয়া যাত্রা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, ঘরের মাঠের দর্শকরাই ছিলেন সব চেয়ে বেশি সরব। তখন সমর্থন নয়, জুটছিল শুধুই বিদ্রুপ।
দর্শকদের মনোভাব বদলে নিশ্চয়ই প্রভাবিত মেসি। না হলে খুশি হয়ে বলে ফেলবেন কেন, ‘‘আমি সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই মাঠে আসার জন্য। জানি, যোগ্যতা অর্জনের পথ সহজ হয়নি। তবু আমরা রাশিয়ার টিকিট অর্জন করতে পেরেছি। এই ম্যাচে সমর্থকদের স্নেহ, ভালবাসা পেলাম। যা আগে অনেক ম্যাচে পাইনি।’’
কোনও সন্দেহ নেই স্পেনের কাছে দুরমুশ হওয়া এবং যোগ্যতা অর্জন পর্ব জুড়ে এলোমেলো ফুটবল আর্জেন্তিনার ফুটবল ভক্তদের মনেও আশার চেয়ে হতাশাই বেশি তৈরি করেছিল। সম্ভবত তাঁরাও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আরও একটা স্বপ্নভঙ্গের। কিন্তু ভারতীয় সময় বুধবার ভোর রাতের এই প্রস্তুতি ম্যাচে মেসির জাদুকাঠির ছোঁয়াতেই যেন ফের জেগে উঠল আর্জেন্তিনা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৬৪ গোল হয়ে গেল তাঁর। হাইতিকে ৪-০ হারানোর স্কোরকার্ডে তিন গোল তাঁর। অন্যটি সের্খিয়ো আগুয়েরোর। ‘‘আমরা সেই একটাই কারণে রাশিয়ায় যাচ্ছি। বিশ্বকাপ জিততে। যেটা আমার স্বপ্ন। সকলের স্বপ্ন। আমাদের দেশের স্বপ্ন,’’ বলেছেন মেসি। দ্রুত যোগ করছেন, ‘‘আমরা ফেভারিট নই কাপ জেতার ব্যাপারে, জানি। কিন্তু আমরা ভাল খেলছি। ট্রেনিংয়ে খুব পরিশ্রম করছি সকলে। উন্নতিও হচ্ছে। আমাদের দলে ভাল ফুটবলার রয়েছে। আমরা শক্তিশালী দল হয়ে উঠছি। যে কোনও দলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’’ সাবধানী অথচ প্রত্যয়ী ঘোষণা যে, কাপ জেতার লক্ষ্য নিয়েই রাশিয়া যাচ্ছি। আরও বললেন, ‘‘বিশ্বকাপে যুক্তি-তর্ক দিয়ে সব কিছু হয় না। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটা জিততে হবে। তা হলে স্নায়ুর চাপ কমবে।’’ এর পর তাঁর ক্লাব ফুটবলে বেড়ে ওঠার শহর বার্সেলোনাতে যাবে আর্জেন্তিনা। মেসি বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা শক্তিশালী দল নিয়ে যাচ্ছি। মাঠে সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চাই।’’
বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার প্রথম ম্যাচ ১৬ জুন আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২১ জুন তারা খেলবে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে, ২৬ জুন প্রতিপক্ষ নাইজিরিয়া। ফুটবল বিশ্ব দু’চোখ ভরে মেসিকে দেখার অপেক্ষায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy