Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘গ্রিজ়ম্যানের থেকে এগিয়ে রাখছি লুকাকুকে’

আদর্শ স্ট্রাইকারের প্রায় সব গুণই রয়েছে লুকাকুর মধ্যে। প্রচণ্ড গোলের খিদে। সব সময় বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে ছটফট করেন। সব চেয়ে বড় কথা নিজের সীমাবদ্ধতা খুব ভাল জানেন তিনি।

চ্যালেঞ্জ: বিপক্ষকে নকআউট করার প্রস্তুতি লুকাকুর ।ছবি: রয়টার্স

চ্যালেঞ্জ: বিপক্ষকে নকআউট করার প্রস্তুতি লুকাকুর ।ছবি: রয়টার্স

শিশির ঘোষ
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০৫:১১
Share: Save:

রাশিয়া বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত চার ম্যাচে চার গোল করেছেন রোমেলু লুকাকু। এক ম্যাচ বেশি খেলে তিন গোল করেছেন আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যান। আজ, মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে এই দুই স্ট্রাইকারের দ্বৈরথই আমাকে আকর্ষণ করছে।

লুকাকু ও গ্রিজ়ম্যান দু’জনেই স্ট্রাইকার। কিন্তু ওঁদের খেলার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। লুকাকুর খেলার মধ্যে শিল্প কম। ধ্বংসাত্মক ফুটবলই বেলজিয়াম স্ট্রাইকারের প্রধান অস্ত্র। দুর্দান্ত ভাবে শরীর ব্যবহার করে বিপক্ষের রক্ষণ কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়ে গোল করেন। গ্রিজ়ম্যানের বাঁ পায়ে দুর্দান্ত স্কিল রয়েছে। তাই ওঁর খেলা ফুটবলপ্রেমীদের বেশি মুগ্ধ করে। অনায়াসে তিন-চার জন কাটিয়ে বল নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন ফরাসি তারকা।

কিন্তু আমি মনে করি, দলের জন্য লুকাকু অনেক বেশি কার্যকরী। নিজে স্ট্রাইকার ছিলাম, তাই জানি, গোল করার চেয়ে মূল্যবান কিছু হয় না। স্ট্রাইকারকে সবাই মনে রাখেন তাঁর গোল দিয়ে। কোন স্ট্রাইকার বিপক্ষের কত জনকে কাটিয়ে বল নিয়ে বেরিয়ে গেল, তা নিয়ে কারওরই খুব একটা আগ্রহ থাকে বলে মনে হয় না।

আদর্শ স্ট্রাইকারের প্রায় সব গুণই রয়েছে লুকাকুর মধ্যে। প্রচণ্ড গোলের খিদে। সব সময় বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে ছটফট করেন। সব চেয়ে বড় কথা নিজের সীমাবদ্ধতা খুব ভাল জানেন তিনি। অন্যান্য স্ট্রাইকারদের চেয়ে একটু মন্থর লুকাকু। এই কারণেই খুব কমই ওঁকে দেখা যায় গোলকিপারকে কাটিয়ে আলতো প্লেসিংয়ে গোল করতে। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে বল পেলেই গোল লক্ষ্য করে জোরালো শট নেন। দু’পায়েই গোলার মতো শট রয়েছে লুকাকুর। হেড খুব ভাল। এই কারণেই জোসে মোরিনহো লুকাকুকে এত পছন্দ করেন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার খোলাখুলিই বলেন, সুন্দর ফুটবলের চেয়েও তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলের জয়। লুকাকুর খেলার মধ্যে মোরিনহোর দর্শনই ফুটে ওঠে।

আরও পড়ুন: ফাইনালে উঠতে আক্রমণই অস্ত্র দুই কোচের

গ্রিজ়ম্যানের মানসিকতা অনেকটা লিয়োনেল মেসির মতো। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে কাটিয়ে গোল করতে পছন্দ করেন। যদিও সেটা করতে গিয়ে বহুবার অবশ্য আটকে গিয়েছেন গ্রিজ়ম্যান। পাশাপাশি, মাঝমাঠে নেমে এসে আক্রমণে নেতৃত্বও দেন। তাই শুধু গোল করেন না, করানও। ফ্রি-কিকে গোল করতেও দক্ষ ফরাসি তারকা। ২০১৭-১৮ মরসুমে ক্লাবের হয়ে দুই স্ট্রাইকারের পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান দিলেই বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। ম্যান ইউয়ের হয়ে লুকাকু ৫১ ম্যাচে ২৭ গোল করেছেন। গোলে সহায়তা নয়টি। আতলেতিকো দে মাদ্রিদের হয়ে ৪৯ ম্যাচে ২৯ গোল করেছেন গ্রিজ়ম্যান। সহায়তা ১৫টি। এখানেই শেষ নয়। এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত মোট ৪৪ কিলোমিটার দৌড়েছেন গ্রিজ়ম্যান। সেখানে লুকাকু দৌড়েছেন মাত্র ২৭. ৭ কিলোমিটার।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কি তা হলে গ্রিজ়ম্যান এগিয়ে রয়েছেন লুকাকুর চেয়ে? একেবারেই না। সেন্ট পিটার্সবার্গের দ্বৈরথে আমি এগিয়ে রাখব লুকাকুকে। বেলজিয়ামের রক্ষণে ভ্যানসঁ কোম্পানির মতো অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী ডিফেন্ডার রয়েছেন। গ্রিজ়ম্যান যদি ওঁকে এড়িয়ে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে গোল করার কথা ভাবেন, ভুল করবেন। ফরাসি তারকাকে গোল করার চেষ্টা করতে হবে দূর পাল্লার শটে বা ফ্রি-কিক থেকে। প্রশ্ন উঠতে পারে ফ্রান্সের রক্ষণে স্যামুয়েল উমতিতি ও রাফায়েল ভারানের মতো ডিফেন্ডার রয়েছেন। তা হলে কেন এগিয়ে থাকবেন লুকাকু? প্রথমত বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার শক্তিনির্ভর ফুটবল খেলেন। দ্বিতীয়ত, কেভিন দে ব্রুইন ও এডেন অ্যাজারের মতো দুই সতীর্থ রয়েছেন। যাঁরা গোল করার জন্য বল সাজিয়ে দেবেন লুকাকুকে। গ্রিজ়ম্যানকে যে খেলাটাও তৈরি করতে হয়। লুকাকুর মতো গোল করাই একমাত্র লক্ষ্য নয় ওঁর। তা-ই সামান্য হলেও এগিয়ে রয়েছেন লুকাকু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE