Advertisement
E-Paper

বিশ্বকাপেও শাস্ত্রী-ধোনি জুটিটা চাই

ওয়ান ডে সিরিজ যত এগোচ্ছে, তত যেন মনে হচ্ছে সিরিজে একটাই টিম। এক জনই ক্যাপ্টেন। স্পিন খেলার বেসিকগুলো একটা টিমই জানে। এখন পর্যন্ত সিরিজটা দেখে মনে হচ্ছে, পাঁচটা ম্যাচ যেন সূচিতে আছে বলে খেলতে হবে। সিরিজ কে জিতবে যেন ঠিক হয়েই আছে! টিমটার নাম, ভারত। ক্যাপ্টেনের নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। স্পিন যে টিমটা খেলতে পারছে, সেটাও ভারত। ইংল্যান্ড যে ওয়ান ডে-তে ভাল টিম নয়, বুঝতে বিশেষজ্ঞ লাগে না।

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২১
টিম ডিরেক্টরের পাশে ক্যাপ্টেন কুল। নটিংহ্যামে ম্যাচের আগে।

টিম ডিরেক্টরের পাশে ক্যাপ্টেন কুল। নটিংহ্যামে ম্যাচের আগে।

ওয়ান ডে সিরিজ যত এগোচ্ছে, তত যেন মনে হচ্ছে সিরিজে একটাই টিম। এক জনই ক্যাপ্টেন। স্পিন খেলার বেসিকগুলো একটা টিমই জানে। এখন পর্যন্ত সিরিজটা দেখে মনে হচ্ছে, পাঁচটা ম্যাচ যেন সূচিতে আছে বলে খেলতে হবে। সিরিজ কে জিতবে যেন ঠিক হয়েই আছে!

টিমটার নাম, ভারত। ক্যাপ্টেনের নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। স্পিন যে টিমটা খেলতে পারছে, সেটাও ভারত। ইংল্যান্ড যে ওয়ান ডে-তে ভাল টিম নয়, বুঝতে বিশেষজ্ঞ লাগে না। কিন্তু ওরা যে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ভারতীয়দের ফেলতে পারবে না, এতটা আশা করিনি। টেস্টে ধোনিদের যতটা দুর্দশায় পড়তে দেখেছিলাম, ওয়ান ডে-তে অ্যালিস্টার কুকের টিমের একই অবস্থা দেখছি। কার্ডিফে রায়না একা ওদের ধ্বংস করে দিয়ে গেল। ১৩৩ রানে উড়ে গেলে ফিরে আসা খুব কঠিন হয়। নটিংহ্যামে ম্যাচটা শেষ হল সাত ওভার আগে। ছ’ উইকেটে জিতল ভারত। দেখে ঘোরতর সন্দেহ হবে যে, সিরিজটা আদৌ ইংল্যান্ডে হচ্ছে তো? ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দাপট, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিনে ইংরেজদের নাকানিচোবানি খাওয়া দেখে তো মনে হচ্ছে ওয়াংখেড়ে বা চিন্নাস্বামীতে ম্যাচ হচ্ছে!

ভারত ওয়ান ডে ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। কিন্তু তার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকা বা নিউজিল্যান্ডে ওয়ান ডে সিরিজে সুবিধে করতে পারেনি। সেখানে ইংল্যান্ডকে তাদের দেশের মাঠে এমন একপেশে ভাবে পরপর উড়িয়ে চলা দেখে দু’জনের নাম মাথায় আসছে। জয়ের কারণ বলতে হলে, এরাই কারণ। টিমে এদের ভূমিকা কারণ।

এক জন অবশ্যই ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন। ওয়ান ডে-তে শুধু ওর স্ট্র্যাটেজি বা ব্যাটিং ফর্ম নয়, ওর নিজের গ্রুপ-টাও এখন ম্যাচ বার করে দিচ্ছে। অন্য জন, টিমের ডিরেক্টর। রবি শাস্ত্রীকে ভারতীয় টিমের সঙ্গে রাখলে কিন্তু বিদেশি কোচদের জামাই আদরের দরকার পড়বে না।

রবিকে যতটুকু দেখেছি, ওকে আপনি কোনও ভাবে উপেক্ষা করতে পারবেন না। অত্যন্ত ডাকাবুকো ব্যক্তিত্ব। ও যা বলবে, সেটা কিন্তু সবাই শুনতে বাধ্য হয়। ইংল্যান্ডে ও কী কী করছে, ভারতে বসে নির্ভুল বলতে পারব না। কিন্তু টিমের শরীরীভাষা দেখে একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। রায়না-রায়াডুদের দেখে এটুকু অন্তত পরিষ্কার যে, টেস্টের ভারত আর ওয়ান ডে-র ভারত দু’টো আলাদা টিম। টেস্টে ফ্লেচার ছিল বস্। আর এখানে রবি বস্।

ক্রিকেটারদের সঙ্গে রবি প্রচুর কথাবার্তা বলছে শুনেছি। রায়নাকে খারুশ ক্রিকেট খেলো বলে তাতিয়ে দিয়েছিল। রবি-র একটা অ্যাটিটিউড আছে। যেটা আপনাকে প্রভাবিত করবেই। অবশ্যই সেটা ভাল। যে ভাবে টিমটা ‘দেখে নিচ্ছি’ মার্কা ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে, সেটা রবি-র সিগনেচার স্টাইল।


নতুন বিতর্ক।

আসলে এই পর্যায়ের ক্রিকেটে কোচিংয়ের দরকার পড়ে না। দরকার পড়ে এমন এক জনের যে কি না ক্রিকেটারদের সুবিধে-অসুবিধে ধরতে পারবে। বন্ধুর মতো তার সঙ্গে মিশে যেতে পারবে। তার সঙ্গে বসে সেগুলো শোধরাতে পারবে। আর সেখানেই এক জন দেশি কোচের সঙ্গে বিদেশি কোচের তফাত হয়ে যায়। রবি যে ভাষায় কথা বলবে, যে ভাবে ভারতের মাঠে ব্যবহৃত টার্ম প্রয়োজনে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ব্যবহার করবে, সেটা ডানকান ফ্লেচারের পক্ষে আগামী জন্মেও করা সম্ভব হবে না। এগুলো ক্রিকেটারদের অনেক বেশি সহজ করে দেয়। আমি বরাবরই মনে করি, বিদেশি কোচ এনে হাতি-ঘোড়া কোনও লাভ হয় না। দেশিরা ওদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। এত দিন ধরে তো আছে ডানকান। ক’টা ওয়ান ডে সিরিজ দেশের বাইরে জিতেছে ও? দেশে তো সিরিজ জিততে কোচ দরকার পড়ে না।

আর ওর কথাবার্তার ব্যাপারটা ছেড়েই দিলাম। ক’টা প্লেয়ার নিজের সমস্যা নিয়ে ফ্লেচারের কাছে যেত, সন্দেহ আছে। ক’জন প্লেয়ারকে তাদের সমস্যা ও ধরিয়ে দিয়েছে, সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। কোহলিদের টেস্টে ব্যাটিং দেখে মনে হত, ওদের সমস্যা এক, আর কোচ দেখাচ্ছে আর এক। রবি-র ভাবমূর্তি বা অ্যাটিটিউড দু’টোর একটাও ফ্লেচারের তো নেই-ই, ক্রিকেটীয় জ্ঞানেও রবি ওর চেয়ে বেশি বই কম হবে না। অন্তত ও আসার পর বিরাট কোহলিকে চেষ্টা করতে দেখছি। আজ যেমন বিরাট ৪০ করল। কার্ডিফে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের থিওরিতে গিয়েছিল। কাজ করেনি দেখে উইকেটে পড়ে থাকার স্ট্র্যাটেজি এই ম্যাচে নিল। এ সব ছোট ছোট ব্যাপারগুলো বলে দেওয়ার জন্যই কোচের দরকার।

ধোনির কথাও বলতে হবে। ওয়ান ডে-তে ও কেমন অধিনায়ক, সবাই জানে। ওর গ্রুপটাও এখন জেতাতে শুরু করেছে। যেমন রায়না। কার্ডিফে সেঞ্চুরি। এ দিনও চল্লিশের উপর করে গেল। অম্বাতি রায়ডু বুঝতে দেয়নি রোহিত শর্মা বলে কেউ এক জন নেই। স্পিনের সামনে ইংল্যান্ড কী বস্তু, অশ্বিনের তিন উইকেট এ দিন দেখিয়ে দিল। ইংরেজরা এখন দাঁড়িয়ে স্পিন খেলতে চায়। মনে হয় না, ইংল্যান্ড এই সিরিজে একটা ম্যাচও জিততে পারবে বলে। আর উইকেটে যদি স্পিন থাকে এ রকম, তা হলে তো আরওই নয়। যা দেখছি, অল্প কয়েক দিন সময় পেয়ে রবি অন্তত টিমটাকে বোঝাতে পেরেছে ওদের ক্ষমতাটা কী। ধোনির সঙ্গে ফ্লেচারের সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখেও বলছি, রবি-র সঙ্গে ওরও জমে যেতে অসুবিধে হবে না। আর কম্বিনেশনটা দাঁড়িয়েও যাবে। ধোনির ঠান্ডা মাথা। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ধুরন্ধর ক্যাপ্টেন্সি। আর রবি-র আগ্রাসন। শরীরীভাষা। ক্রিকেটীয় জ্ঞান।

মহামান্য ভারতীয় বোর্ড, দয়া করে ফ্লেচারকে এখনই বিদায় করে রবি শাস্ত্রীকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত আপনারা রেখে দিন। ওখানে কিন্তু শাস্ত্রী-ধোনি জুটিটা লাগবে।

শনিবার। ছবি: রয়টার্স

স্কোর

ইংল্যান্ড

কুক স্টাঃ ধোনি বো রায়ডু ৪৪
হেলস ক ধোনি বো রায়না ৪২
বেল রান আউট ২৮
রুট স্টাঃ ধোনি বো জাডেজা ২
মর্গ্যান ক ধোনি বো অশ্বিন ১০
বাটলার বো অশ্বিন ৪২
স্টোকস ক রায়না বো অশ্বিন ২
ওকস ক মোহিত বো শামি ১৫
ট্রেডওয়েল ক এবং বো ভুবনেশ্বর ৩০
ফিন রান আউট ৬
অ্যান্ডারসন নঃআঃ ০
অতিরিক্ত ৬।
মোট ২২৭।
পতন: ৮২, ৯৩, ৯৭, ১২০, ১৩৮, ১৪৯, ১৮২, ২০২, ২২৬।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৮-০-৪৫-১, মোহিত ৩-০-১৭-০, শামি ৯-০-৪০-১, অশ্বিন ১০-০-৩৯-৩, রায়না ৮-০-৩৭-১, রায়ডু ২-০-৮-১, জাডেজা ১০-০-৩৮-১।

ভারত

রাহানে ক বাটলার বো ফিন ৪৫
শিখর ক মর্গ্যান বো ওকস ১৬
বিরাট ক ট্রেডওয়েল বো স্টোকস ৪০
রায়ডু নঃআঃ ৬৪
রায়না ক ওকস বো ট্রেডওয়েল ৪২
জাডেজা নঃআঃ ১২
অতিরিক্ত ৯।
মোট ২২৮-৪ (৪৩ ওভারে)।
পতন: ৩৫, ৮৫, ১২০, ২০৭।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৭-০-২৯-০, ওকস ৮-১-৪৩-১, ট্রেডওয়েল ১০-১-৪৬-১, ফিন ৮-০-৫০-১, স্টোকস ৬-০-৩১-১, রুট ৪-০-২৭-০।

MS Dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy