Advertisement
E-Paper

ধোনির বিকল্প নিয়ে আর ভাবতে হবে না

অনেকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেছি। ঋদ্ধিকে নিয়ে। এই সিরিজের আগে যখন দল বাছাই হল, তখন অনেককেই বলতে শুনেছি কেএল রাহুল দলে থাকতে ঋদ্ধিমান সাহাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিয়ে যাওয়ার কী দরকার?

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩২
ঋদ্ধিমান সাহা- রান ১০৪ | বল ২২৭ | বাউন্ডারি ১৩

ঋদ্ধিমান সাহা- রান ১০৪ | বল ২২৭ | বাউন্ডারি ১৩

অনেকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেছি। ঋদ্ধিকে নিয়ে।

এই সিরিজের আগে যখন দল বাছাই হল, তখন অনেককেই বলতে শুনেছি কেএল রাহুল দলে থাকতে ঋদ্ধিমান সাহাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিয়ে যাওয়ার কী দরকার? বিশেষ করে যেখানে পাঁচটা বোলার খেলবে, সেখানে ঋদ্ধি কেন? তাদের বোঝাতে গিয়ে বারবার তর্কে জড়িয়েছি। কারণ, আমি জানতাম, ঋদ্ধি এক দিন না এক দিন ওদের মুখ বন্ধ করবেই।

বুধবার এল সেই দিন। এর পর থেকে ওরা নিশ্চয়ই আর ঋদ্ধি সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তুলবে না?

আসলে ওদের কথাও যে পুরোপুরি অযৌক্তিক, তাও বলতে পারছি না। ওরা এত দিন প্রশ্ন তুলত ওর ব্যাটিং নিয়ে। বলত, ছেলেটা তো উইকেটে দাঁড়িয়ে ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করতে পারে না। এখনকার ক্রিকেটে উইকেটকিপারকে শুধু কিপ করলেই হয় না, তাকে ব্যাটিংটাও ভাল করতে হয়। এ বার নিশ্চয়ই ঋদ্ধি বুঝিয়ে দিল ও ব্যাটিংটাও খারাপ করে না। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সঙ্গে নিয়ে যে জায়গা থেকে দলকে টেনে তুলল ও, তার পর আর ওকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গাই নেই।

আমার নিজেরও যে এই কথা মনে হয়নি, তা নয়। দেখা হলে অনেকবার বলেওছি ওকে। বারবার তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আউট হত। আউটগুলো দেখে রাগও হত। ওকে বলতাম, কেন তাড়াহুড়ো করছিস? আর একটু বেশি সময় ক্রিজে থাক না ভাই। নিজেকে আরও একটু সময় দে না। কিপিং করার সময় ও যেমন ফোকাস্ড আর ঠান্ডা মাথায় থাকে, ব্যাটিংটা করতে গিয়ে নিজেকে তেমন রাখতে পারে না কেন? এই প্রশ্নটা বারবার মনে এসেছে।

বুধবার সেই আবদারগুলো সব মেনে নিয়েই ব্যাটিংটা করল ঋদ্ধি। অযথা তাড়াহুড়ো নয়। অনর্থক শট নয়। বোলারদের শাসানোর জন্য বেশি মস্তানি নয়। ঠান্ডা মাথায়, নিখুঁত ক্রিকেট বেসিকস মেনে ব্যাটিংটা করে গেল। নতুন বল, পুরনো বল, রিভার্স সুইং, স্পিন— সব কিছুরই জবাব ছিল ওর ব্যাটে। অশ্বিন তো আরও ফোকাস্ড, আরও নিখুঁত ও সাবধানী। ও সঙ্গে থাকায় বোধহয় আরও সুবিধা হয়েছে ঋদ্ধির। উল্টো দিকে এমন একটা বরফশীতল মাথার ব্যাটসম্যান থাকলে নিজেকেও সে রকমই রাখতে সুবিধা হয়। তাও যে সব সময় অশ্বিনকেই অনুসরণ করে গিয়েছে, তা কিন্তু নয়। একটা সময় অশ্বিনের সঙ্গে ওর প্রায় ৪০-৫০ রানের তফাত ছিল। অথচ ওরা দু’জনে কয়েক বলের ব্যবধানে সেঞ্চুরিতে পৌঁছয়।

টেস্ট ক্রিকেট থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর যে রকম গেল গেল রব উঠেছিল, তাতে বেশ অবাক হয়েছিলাম। যেন ধোনির পর আর তার জায়গা নেওয়ার কেউ নেই। ঋদ্ধিমান সাহা বলে ছেলেটার যে কোনও অস্তিত্ব আছে, সেটাই যেন অনেকে মানতে রাজি ছিল না। জানি ধোনি অনেক বড় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওর কোনও বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে না, এটা কেউ বলতে পারে না। আসলে আমাদের অভ্যাসটাই এ রকম। কেউ অবসর নিলে রাতারাতি ঠিক তার মতোই একটা বিকল্পকে তার জায়গায় দেখতে চাই আমরা। ধোনির ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। এ বার নিশ্চয়ই টেস্ট দলে ধোনির বিকল্প নিয়ে কাউকে আর ভাবতে হবে না। সবচেয়ে বড় কথা পুরো ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের ঋদ্ধির উপর আস্থা আছে। ক্যাপ্টেন নিজে প্রেস কনফারেন্সে জোর গলায় বলেছে, ঋদ্ধিই তার দলের এক নম্বর উইকেটকিপার আছে, থাকবেও। এটাই তো ঋদ্ধির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আর বুধবারের ইনিংস দেখার পর আমার বিশ্বাস, ও যতক্ষণ না ফিটনেসের সমস্যায় পড়ছে, তত দিন টেস্ট দলে ওকে আর কেউ ছুঁতেও পারবে না।

নিজের ভাই এ রকম একটা কাণ্ড ঘটালে যে অনুভুতি হত, বুধবার রাতে টিভিতে ঋদ্ধির সেঞ্চুরিটা দেখতে দেখতে তেমনই মনে হচ্ছিল। আমার আর ওর মধ্যে ক্রিকেট মাঠে দু-দুটো মিল আছে। প্রথম শ্রেণির অভিষেকে আমাদের দু’জনেরই সেঞ্চুরি রয়েছে। আর আমরা দু’জনেই টেস্টে বাঙালি উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি পেয়েছি। তবে সে জন্য নয়, ঋদ্ধি আমার ছোট ভাইয়ের মতো ওর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য। ওর স্বভাবের জন্য। এত ভাল ছেলে ক্রিকেট বিশ্বে আমি আর দেখিনি। এ বার চাই ওর মতো আর কোনও উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানও যেন আর না দেখতে হয়।

Wriddhiman saha Ms Dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy