Advertisement
E-Paper

ফুচকাওয়ালা কিশোর এখন জাতীয় দলে অর্জুন তেন্ডুলকরের সতীর্থ

উত্তর প্রদেশের এক দোকানির ছেলে ভাগ্যের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিল মুম্বইয়ের উদ্দেশে। সঙ্গে টাকা নেই। অভাবের সংসারে ক্রিকেট ছিল বিলাসিতা। তবুও ইচ্ছেটা অদম্য ছিল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ১৯:২৩
যশস্বী জায়সবাল। ছবি: ফেসবুক।

যশস্বী জায়সবাল। ছবি: ফেসবুক।

উত্তর প্রদেশের বাহোদি থেকে মুম্বইয়ে পৌঁছেছিল এগারো-বারো বছরের ছোট্ট ছেলেটি। সঙ্গী ছিল একরাশ স্বপ্ন। কিন্তু গরিবের ছেলে হয়ে ‘বড়লোকের খেলা’ ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখা যত সহজ, বাস্তবটা ততই কঠিন— তা কয়েক বছরেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে যশস্বী। কিন্তু হারতে হারতেও ফিরে এসেছে বার বার।

যশস্বী জায়সবাল। এই মুহূর্তে দেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নতুন সদস্য। এই দলে তার অন্যতম সতীর্থ অর্জুন তেন্ডুলকর। হ্যাঁ, সচিনপুত্র অর্জুন। ছোট থেকে ক্রিকেটকে পাখির চোখের মতো দেখেছেন দু’জনেই। কিন্তু যশস্বীর উঠে আসার গল্পটা নিয়ে রীতিমতো সিনেমা হতে পারে।

উত্তর প্রদেশের এক দোকানির ছেলে ভাগ্যের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিল মুম্বইয়ের উদ্দেশে। সঙ্গে টাকা নেই। অভাবের সংসারে ক্রিকেট ছিল বিলাসিতা। তবুও ইচ্ছেটা অদম্য ছিল। বাবার সঙ্গে মুম্বই আসার পর, কাকার সঙ্গে থাকতে শুরু করে যশস্বী। কিন্তু এক মাস থাকতে পেরেছিল। জায়গার অভাবে কাকার বাড়ি থেকে বিতারিত হতে হয় এই বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে।

ক্রিকেট খেলবে কি! আগে তো মাথা গোঁজার ঠাঁই লাগবে একটা! পেটে খাবার লাগবে... যশস্বী কাজ নিল এক দুধের দোকানে। কাজ করার পাশাপাশি সেখানেই কোনও ভাবে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই জুটে যায়। কিন্তু সমস্যা অন্য। দোকানে কাজ করে ক্রিকেটে সময় দিতে পারছিল না। রোজ সকাল ৫টায় অনুশীলনে যেত, দুপুরে ফিরত। দোকানে ঠিক সময়ে হাজিরা দিতে পারত না। ফলে, এক দিন মালিক বের করে দিল দোকান থেকে।

আরও পড়ুন
১৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান

সেই সময়কার কথা ভুলতে পারে না যশস্বী। তবে কি সব শেষ? ফিরে যেতে হবে স্বপ্ন ছেড়ে? যশস্বীর কথায়, ‘‘আমার মনে আছে রাতে আমি ফুচকা বিক্রি করতাম নিজের খরচ মেটানোর জন্য। খাওয়ার জোগার করার জন্য।’’

যশস্বী পৌঁছে যায় আজাদ ময়দানে। সেখানে দেখা হয় ইমরান স্যারের সঙ্গে। তিনি যশস্বীকে বলেন, ভাল খেলতে পারলে তাঁকে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। এর পর আজাদ ময়দানের মুসলিম ইউনাইটেড টেন্টই ছিল যশস্বীর তিন বছরের ঠিকানা। যেখানে তাঁকে থাকতে হয় মালিদের সঙ্গে। তবে সেটাও খুব স্বস্তির ছিল না। যশস্বীকে দিয়ে রান্না করানো হতো। সঙ্গে খারাপ ব্যবহার। যশস্বীর কষ্টের কথা শোনার মতো তখন কেউ নেই। ক্লাবের টেন্টে থাকাই সার, ক্রিকেটটা হারিয়ে যাচ্ছিল।

একাকিত্ব আর হতাশায় ডুবে যাচ্ছিল যশস্বী। সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, ফিরেই চলে যাবে উত্তর প্রদেশের বাড়িতে। কিন্তু এই সময়েই দেখা হয়ে যায় জ্বালা সিংহের সঙ্গে। এই ক্রিকেট কোচ যশস্বীকে দেখেছিলেন মাঠে খেলতে। দেখেই ভাল লেগে যায়। সে দিন থেকে আজ পর্যন্ত যশস্বীর সব থেকে বড় সাপোর্ট সিস্টেম এই জ্বালা। সান্তাক্রুজে নিজের অ্যাকাডেমি চালান জ্বালা।

জ্বালার কথায়, ‘‘আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও কোথায় থাকে। ও বলেছিল, যখন যেখানে জায়গা পাই সেখানেই থাকি। এটা শুনে আমি চূড়ান্ত অবাক হয়েছিলাম।’’ সেই থেকে আজকের জাতীয় দল, যশস্বীর ক্রিকেট জীবনের পিছনে এক দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প। শ্রীলঙ্কা সফরে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য আজ সেই লড়াকু ছেলে।

Cricket Cricketer Yashasvi Jaiswal যশস্বী জায়সবাল।
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy