নিজের ইভেন্টে নামার জন্য তাঁকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে গেমসের শেষ লগ্নের। অলিম্পিক্স শুরুর পর থেকে ভারতীয়দের ব্যর্থতার মিছিলে ক্রমশ ভারাক্রান্ত হয়েছে তাঁর আশপাশটা। হঠাৎই সাক্ষী মালিকের ব্রোঞ্জে ঝড়ের মতো উড়ে গিয়েছিল হতাশার সেই আচ্ছাদন। কিন্তু সিন্ধুর রুপোয় আকাশ রোদ ঝলমলে হওয়ার আগেই কুস্তি টিমের কাছে চলে আসে দুঃসংবাদটা। ডোপ কলঙ্ক মাথায় নিয়ে সরতে হচ্ছে নরসিংহ যাদবকে। এই অবস্থায় রবিবার শুধু অলিম্পিক্স গৌরবের লক্ষ্যেই নয়, ভারতীয় কুস্তির মর্যাদা রক্ষার লড়াইটাও লড়তে নামছেন যোগেশ্বর দত্ত।
লন্ডনের ব্রোঞ্জজয়ীর কাছে রিও থেকে শেষ পদকের আশায় প্রহর গুনছে ভারতীয় শিবির। শেষ লগ্নে হুঙ্কারের প্রত্যাশায় আসমুদ্র হিমাচল।
সেই চাপের সামনে নিজেকে যত দূর সম্ভব গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত তেত্রিশের কুস্তিগির। সংবাদমাধ্যমের সামনে আসছেন না। তবে তাঁর চাপটা কোন পর্যায়ের তার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে ভারতের ফ্রিস্টাইল কুস্তির কোচ জগমিন্দর সিংহের কথায়। যিনি বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে এ বার সবই খারাপ হচ্ছে। এই অবস্থায় যোগেশ্বর এখন শেষ ভরসা। সবাই প্রার্থনা করছি, ও যেন ড্র-টা ভাল পায়।’’
ডোপ কলঙ্কে নরসিংহের পাশে ছিলেন যোগেশ্বর। রিওতেও তাঁরা কাছাকাছি ছিলেন। কিন্তু নির্বাসনের শাস্তির পর গেমস ভিলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে নরসিংহকে। যিনি উঠেছেন একটা হোটেলে। জগমিন্দর বলেছেন, ‘‘গত দু’দিন যা হল তাতে টিম স্তম্ভিত। তবে সবাই চেষ্টা করছি যাতে এর প্রভাব যোগেশ্বরের উপর না পড়ে। সবাই চেষ্টা করছি ওকে এই সব কিছু থেকে দূরে রাখতে। ও-ই যে আমাদের পদক জেতার শেষ আশা।’’
নরসিংহের ধাক্কা তো আছেই। সঙ্গে সাক্ষী মালিককে বাদ দিলে এ পর্যন্ত কুস্তি টিমের বলার মতো কিছুই নেই। মেয়েদের বিভাগে যাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশা ছিল, সেই বিনেশ ফোগত কোয়ার্টার ফাইনালে চোট নিয়ে স্ট্রেচারে ম্যাট ছাড়েন। বাকিরা কেউ প্রি-কোয়ার্টার পেরোননি। এই অবস্থায় যোগেশ্বরের অভিজ্ঞতায় আস্থা রাখছে মরিয়া টিম। তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশাটা আরও বেশি কারণ লন্ডন গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। রিও তাঁর চতুর্থ অলিম্পিক্স।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বাদ দিলে এশিয়া ও কমনওয়েলথ পর্যায়ের সব প্রতিযোগিতায় পদক আছে যোগেশ্বরের। ৭ সোনা ২ রুপো ১ ব্রোঞ্জ। যার মধ্যে আছে এশিয়ান গেমসের একটি ও কমনওয়েলথ গেমসের দু’টি সোনা। আর আছে অলিম্পিক্সের ব্রোঞ্জ। যে পদকের রংটা রিওয় বদলে যাক, চাইবেন নিজেই।
কিন্তু অলিম্পিক্স পদক জয়ীর গত বছরটা মোটেই ভাল যায়নি। ২০১৫-এ দুই হাঁটু-সহ তিনটি অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। তার পরেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেমে রিওর টিকিট পেয়েছিলেন। তবে রবিবার কী হয়, সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে ড্রয়ের উপর। অবশ্য হরিয়ানার ছেলে অলিম্পিক্স মঞ্চে যত বার নেমেছেন, তত বারই আগের অলিম্পিক্সের চেয়ে বেশি ভাল ফল করে ফিরেছেন।
রিও আসার আগে যোগেশ্বর নিজেই বলেছিলেন, ‘‘গত চার বছর শুধু একটাই স্বপ্ন দেখেছি। অলিম্পিক্সে সোনা জেতার। সম্ভবত রিওই আমার শেষ অলিম্পিক্স। তাই এটাই শেষ সুযোগ।’’
যোগেশ্বরই শেষ সুযোগ, বলছে ভারতও। রবিবার তিনি পারলে সেটা হয়ে থাকবে ভারতীয় খেলার দুনিয়ার অন্যতম সেরা চিত্রনাট্য। শেষটা সোনালি স্বপ্নের হয়ে থাকবে কি?
রূপকথায় কলঙ্কমোচনের প্রার্থনায় মগ্ন ভারতীয় শিবির।