রিয়ান ব্রিউস্টার। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। লিভারপুল অ্যাকাডেমির ছাত্রকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন লিভারপুল কোচ য়ুর্গেন ক্লপ। এ বারের টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
আবেল রুইস। স্পেনের সবচেয়ে আলোচিত নাম এই বিশ্বকাপে। লিও মেসিদের বিখ্যাত লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছে। ব্রিউস্টারের সঙ্গে ফাইনাল পর্যন্ত যার টক্কর চলল, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়ে কে জিতবে সোনার বল? আর কে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে জিতবে সোনার বুট?
কিন্তু খুদেদের বিশ্বকাপ যারা মাতিয়ে তুলছে, সত্যিই কতটা উজ্জ্বল তাদের ভবিষ্যৎ? ভারতে এ বার নজর কাড়া ব্রিউস্টার বা রুইসদের কি দেখা যাবে লিও মেসি, নেমার বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো হয়ে উঠতে?
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ইতিহাস ঘেঁটে কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই পর্যায়ে সফলরা খুব কমই বড়দের ফুটবলে গিয়ে ঠাঁই পেয়েছে। যেমন পশ্চিম জার্মানির মার্সেল উইটেকজেক বা আইভরি কোস্টের মুসা ত্রাওরে। প্রথম দু’টি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের দুই সর্বোচ্চ গোলদাতা এই দু’জন। কিন্তু খুব একটা এগোয়নি তাঁদের কেরিয়ার। উইটেকজেক তবু জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ দলের হয়ে বুন্দেশলিগা খেতাব জিতেছিলেন। কখনও জার্মানির হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। মুসা সেটুকুও করতে পারেননি।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। প্রত্যেক দু’বছর অন্তর এই টুর্নামেন্ট হয়। এ বারেরটা ধরে এখনও পর্যন্ত সতেরোটি বিশ্বকাপ হয়েছে। তার সতেরো জন সর্বোচ্চ গোলদাতার মধ্যে একটিই নাম খুঁজে পাওয়া যাবে, যিনি পরেও তারকার খ্যাতি অর্জন করেছেন— সেস ফাব্রেগাস। ২০০৩-এর টুর্নামেন্টে পাঁচটি গোল করে স্পেনের ফাব্রেগাস সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। তার পরেই ফাব্রেগাসকে তুলে নিয়েছিল আর্সেনাল।
কেন এমন হয়? বিশ্ব ফুটবল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল চিমা ওকোরি বলছেন, ‘‘ক্লাব ফুটবলে বা দেশের হয়ে সিনিয়র পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে ২০ বা ২২ বছর পর্যন্ত ভাল খেলে যেতে হবে। অনেকে মাঝের এই সময়টায় পথ হারিয়ে ফেলে। তাই হয়তো অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে সফলদের কথা আমরা পরে গিয়ে খুব বেশি শুনতে পাই না।’’
আরও একটি ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্ব জুড়েই ফুটবল পুরো মাত্রায় ক্লাবভিত্তিক হয়ে উঠেছে, অতটা দেশ কেন্দ্রিক আর নেই। ক্লাবে খেলেই এক-এক ফুটবলার ধনকুবের হয়ে উঠছেন। উচ্চ মানের দিক থেকেও দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ক্লাব। বার্সেলোনায় একসঙ্গে খেলেছেন এমএসএন। মেসি, নেমার, সুয়ারেজ। রিয়াল মাদ্রিদে একসঙ্গে খেলছেন রোনাল্ডো, গ্যারেথ বেল, বেঞ্জেমা। এমন দল দেশ কী ভাবে নামাবে?
কোন ফুটবলার দেশের হয়ে কত ম্যাচ খেলবে, এখনকার যুগে সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে ক্লাব। কয়েক দিন আগেই বার্সেলোনার পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে আর্জেন্তিনার হয়ে মেসিকে টানা খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে। এই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপেই ব্রাজিলের হয়ে খেলতে আসেনি তাদের সেরা ফুটবলার ভিনিসিয়াস। রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়েনি। মাঝপথে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড তুলে নিয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডের সেরা অস্ত্র জেডন স্যাঞ্চো-কে।
২০১৫ সালে অর্থাৎ গত বারের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিল নাইজিরিয়ার ভিক্টর ওসিমহেন। এখন তার বয়স ১৮। গত জুনিয়র বিশ্বকাপে ১০টি গোল করা নাইজিরীয় প্রতিভা দারুণ কোনও উন্নতি করতে পারেনি। জার্মানির উল্ফসবার্গের প্রথম দলে সুযোগ পেয়েছে এবং বয়স কম হওয়ায় এখনও তার সামনে অনেকটা পথ অতিক্রম করার সুযোগ রয়েছে।
হারিয়ে গিয়েছেন ব্রাজিলের হয়ে ২০০৫ সালে ‘গোল্ডেন বল’ জেতা অ্যান্ডারসন। ব্রাজিল সে বার রানার্স হয়েছিল। ‘গোল্ডেন বল’ পায় টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার। আর ‘গোল্ডেন বুট’ পায় সর্বোচ্চ গোলদাতা। অ্যান্ডারসন সেরা নির্বাচিত হয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন। তার পর ক্রমশ তলিয়ে গেলেন। ২৯ বছর বয়সি অ্যান্ডারসন এখন খেলেন ব্রাজিলের কোরিতিবা ক্লাবে। যারা কি না ব্রাজিলের লিগে টপ টিয়ার থেকে অবনমন বাঁচানোর জন্য লড়ছে।
লুইস ফিগো, নেমার, ফাব্রেগাস বা টোনি ক্রুসের মতো কয়েক জন এই টুর্নামেন্টে খেলার পরে উচ্চতর স্তরে গিয়েও দারুণ সফল হয়েছেন। তবে তাঁরা অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগে দারুণ সফল হয়েছিলেন, এমন নয়। ফিগো যেমন পর্তুগালের হয়ে ১৯৮৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলে মাত্র দু’টি গোল করেছিলেন। ১৯৯৭-তে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দলে ছিলেন রোনাল্ডিনহো। কিন্তু তাঁরও গোটা টুর্নামেন্টে গোলসংখ্যা ছিল দু’টি। টোনি ক্রুস ব্যতিক্রম। ২০০৭ সালের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ‘গোল্ডেন বল’ জেতা ক্রুস পরে জার্মানি এবং রিয়াল মাদ্রিদের অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠেন। ২০০৯ সালে নাইজিরিয়ায় প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল। তিন ম্যাচে ব্রাজিলের সেরা প্রতিভা করে মাত্র এক গোল। তাঁর নাম? নেমার!
কেউ নায়ক বনেও হারিয়ে যেতে পারে। আবার কেউ অনামী থেকেও পরবর্তী কালে হয়ে উঠবেন মহানায়ক। এই হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy