Advertisement
E-Paper

রেফারিং নিয়ে অগ্নিশর্মা জিকো

কিংবদন্তি জিকোও তা হলে রাগে ফেটে পড়েন এবং এ ভাবে! ‘‘এ রকম রেফারিং হলে আমি ব্যাগপত্তর নিয়ে ব্রাজিল ফিরে যাব। এখানে আমি ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করতে এসেছি। টাকা কামাতে নয়।’’ পাশে দোভাষী নিয়ে পর্তুগিজে বলছেন আর কাঁপছেন। মনে হচ্ছিল সামনে রেফারিকে পেলে এখনই একহাত নেবেন হয়তো।

তানিয়া রায় ও সোহম দে

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৮
বিস্ফোরণ। রবীন্দ্র সরোবরে জিকো। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বিস্ফোরণ। রবীন্দ্র সরোবরে জিকো। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

কিংবদন্তি জিকোও তা হলে রাগে ফেটে পড়েন এবং এ ভাবে!

‘‘এ রকম রেফারিং হলে আমি ব্যাগপত্তর নিয়ে ব্রাজিল ফিরে যাব। এখানে আমি ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করতে এসেছি। টাকা কামাতে নয়।’’

পাশে দোভাষী নিয়ে পর্তুগিজে বলছেন আর কাঁপছেন। মনে হচ্ছিল সামনে রেফারিকে পেলে এখনই একহাত নেবেন হয়তো। ফর্সা মুখ রেগে আরও লাল, অনর্গল রেফারির মুণ্ডপাত করে চলেছেন। ‘‘এটা রেফারিং? এটা যদি ফিফা রেফারি হয়, তা হলে ফিফার কী হাল! বরং দেশি রেফারি আনা দরকার।’’

রবিবার আটলেটিকো দে কলকাতার বিরুদ্ধে ম্যাচে মেক্সিকান রেফারির নানা সিদ্ধান্তে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ঢুকে তারই বিস্ফোরণ ঘটল এফসি গোয়ার সঙ্গে তিন বছর যুক্ত কোচ জিকোর। ‘‘প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে এক সঙ্গে তিনটে হলুদ কার্ড! আসলে ওরা (রেফারি) ম্যাচের শুরুতেই আমার টিমকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। আমি জানি না, কেন রেফারিদের সিদ্ধান্ত বারবার আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তিন বছর ধরে একই ঘটনা!’’

জিকোকে তখন দেখাচ্ছে যেন ময়দানের ডার্বিতে হেরে যাওয়ার পর কোনও ইস্ট-মোহন কোচ! সুভাষ-সুব্রত-সঞ্জয়দের মতো ভাষা এবং ক্ষোভ জিকোর গলাতেও! তাঁর দাবি অনুযায়ী রেফারির সিদ্ধান্ত গোয়ার বিরুদ্ধে গিয়েছে। কিন্তু মজার বিষয়, বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফিরিয়েছে জিকোর টিমই। প্রথম লালকার্ড দেখেও মাঠে ছাড়তে হয়েছিল আটলেটিকো দে কলকাতার স্টিভন পিয়ারসেনকে। এটিকের আবার দাবি, গোয়ার পেনাল্টি ন্যায্য ছিল না। ম্যাচের পর বোরহা নিজেই বলছিলেন, ‘‘আমার হাতে বল লেগেছিল ঠিকই, তবে সেটা একেবারেই ইচ্ছাক়ৃত ছিল না। আর রেফারি যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেখান থেকে তো পরিষ্কার করে দেখতে পাওয়ার কথা নয় যে কী ঘটছে! তা হলে কী করে উনি পেনাল্টি দিলেন?’’

একই প্রশ্ন ইয়ান হিউম, জাভি লারাদের। লারা যেমন ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বললেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলব, ওটা একেবারেই পেনাল্টি ছিল না। আর ওই পেনাল্টির জন্যই আমরা এক পয়েন্ট পেলাম।’’

ম্যাচের পর মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর কাছে আফসোস করছিলেন এটিকে কোচ জোসে মলিনা। পেনাল্টি নিয়ে কথা হচ্ছিল কর্তা-গিন্নির। সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য মলিনা বললেন, ‘‘আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বুঝতে পারিনি পেনাল্টি ছিল, না ছিল না?’’ জিকোর মতো অগ্নিশর্মা না হলেও এটিকে শিবির অবশ্য ঘুরিয়ে আঙ্গুল তুলেছে রেফারি ফের্নান্দো রামিরেজের বিরুদ্ধে।

রেফারির দিকে আঙ্গুল তুললেও লিগ টেবল তো আর বদলে যাবে না। এ দিনের ম্যাচ ড্র হওয়ার ফলে জিকোর গোয়া চার ম্যাচ পর এক পয়েন্ট পেয়ে আইএসএলে খাতা খুললেও লাস্ট বয়-ই রয়ে গেল। এটিকে চার ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে তিনে। দিল্লি (৫) এবং চেন্নাই (৪) এক ম্যাচ করে কম খেলে কলকাতার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। মলিনার অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা কিন্তু এখনও একটা ম্যাচও হারিনি। তবে দুটো হোম ম্যাচের দু’টোই ড্র, এটা খারাপ। কিন্তু এ সব ভেবে আমি কান্নাকাটি করতে রাজি নই। হাতে এখনও ম্যাচ রয়েছে, উঠে দাঁড়াতে হবে।’’ হিউম আবার বললেন, ‘‘দু’পয়েন্ট হারানোর চেয়েও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এক পয়েন্ট পেলাম। গোয়া ম্যাচ ভুলে পরের দিল্লি ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চাই।’’

জিকো রেফারিকে একহাত নিলেও নিজের টিমের প্লেয়ারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেন, ‘‘আমার ছেলেরা প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু রেফারি সব ভণ্ডুল করে দিল।’’ রেফারি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি টেনে আনেন গত আইএসএল ফাইনালকেও। যেখানে জিকো চেন্নাইয়ানের প্রাক্তন স্ট্রাইকার মেন্ডোজাকে মারদোনার সঙ্গে তুলনা করলেন। ‘‘গত বছর ফাইনালে মেন্ডোজা তো মারাদোনা হয়ে গিয়েছিল। হ্যান্ড অব গড-এর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। এর পরেও কী করে বলি রেফারি আমাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না?’’

জিকোর ক্ষোভ, মলিনার আফসোস, দু’দলের ফুটবলারদের হতাশা— এই দৃশ্যগুলো ড্র ম্যাচের পরে খুব স্বাভাবিক। কিন্তু চার ম্যাচ পরেও আটলেটিকো কোচকে চিন্তায় রাখবে টিমের গোলের খরা এবং ভঙ্গুর ডিফেন্স। এটাই বোধহয় আসল!

Zico Referee FC Goa ISL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy