Advertisement
E-Paper

অ্যারন থেকে স্লিপ কর্ডন, যুদ্ধের প্রাক্কালে রমরমা শুধু পার্শ্বনায়কদের

এমন লোক বা লোক-সমষ্টির নাম হঠাৎ করে সম্ভাব্য নির্ণায়ক হিসেবে উঠে আসছে, টেস্ট ম্যাচ প্রাক্কালে যাঁদের কোনও গুরুত্ব পাওয়ারই কথা ছিল না! এরা তথাকথিত নায়ক তো ননই। নায়কের ছোট ভাইও না! বরুণ অ্যারন। মাইকেল লয়েড। ভারতীয় স্লিপ কর্ডন। ভারত যখন টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের দেওয়া ভেন্যু-নির্ঘণ্ট পায়, এক ঝলক তাতে চোখ বুলিয়ে রবি শাস্ত্রী খুব হেসেছিলেন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯
আত্মবিশ্বাসী কোহলি। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

আত্মবিশ্বাসী কোহলি। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

এমন লোক বা লোক-সমষ্টির নাম হঠাৎ করে সম্ভাব্য নির্ণায়ক হিসেবে উঠে আসছে, টেস্ট ম্যাচ প্রাক্কালে যাঁদের কোনও গুরুত্ব পাওয়ারই কথা ছিল না! এরা তথাকথিত নায়ক তো ননই। নায়কের ছোট ভাইও না!

বরুণ অ্যারন।

মাইকেল লয়েড।

ভারতীয় স্লিপ কর্ডন।

ভারত যখন টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের দেওয়া ভেন্যু-নির্ঘণ্ট পায়, এক ঝলক তাতে চোখ বুলিয়ে রবি শাস্ত্রী খুব হেসেছিলেন। প্রতিবেশী দিলীপ বেঙ্গসরকরকে বলেছিলেন, “এঁরা এত বছরেও বদলালো না! অ্যাডিলেডে প্র্যাকটিস ম্যাচ দিয়ে ব্রিসবেনেই ফার্স্ট টেস্ট খেলতে পাঠাচ্ছে। কিছুতেই বাউন্সের জন্য তৈরি হতে দেবে না।” বেঙ্গসরকর সহানুভূতি প্রকাশের কোনও কারণ দেখেননি, “সে তো জানাই কথা,” বলে সরে যান।

তখন কেউ জানত না ফিল হিউজ নামক আবেগ আগ্নেগিরির লাভাস্রোত যে সব কিছুর গতিপথ বদলে সিরিজকে নতুন চেহারায় দাঁড় করাবে! ভারত এমন মাঠ থেকে সিরিজ শুরু করার সুযোগ পাবে, যেখানকার ড্রপ ইন পিচে বাউন্স অনেক কম। তা-ও এমন অবস্থায় পাবে যখন প্রতিপক্ষ মানসিক দিক দিয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। সাতষট্টি বছর ধরে এ দেশে আসছে ভারতীয় দল। সিরিজ আগমনীতেই এমন সোনার সুযোগ কখনও আসেনি!

মাইকেল ক্লার্ক-সহ একাধিক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার বলছেন, ঘটনার দশ দিন বাদেও তাঁরা নাকি ক্রিকেটে মন বসাতে পারছেন না। ডাকসাইটে ওয়ার্নার নেটে ব্যাট করতে নামার সময় নাকি হঠাৎ করে সিডনি মাঠে দেখা দুর্ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাক দেখতে শুরু করেন। নিরুপায় তাঁকে ব্যাট না করে বেরিয়ে আসতে হয়। ক্লার্ককেও তো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পরপর দু’দিন মিডিয়ার সামনে বাধ্যতামূলক ক্যাপ্টেন্স প্রেস কনফারেন্স করা থেকে অব্যাহতি দিল। চাপ যাতে তাঁর ওপর কম থাকে। ক্লার্ক, ওয়ার্নার আর হিউজ প্রগাঢ় বন্ধুত্বের একটা ত্রিভুজ ছিল। এঁদের শক সামলানো সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু টিমে সম্পূর্ণ বিপরীত ক্যাম্পের শেন ওয়াটসন দাবি করছেন, তাঁর মনের ভেতরও নাকি দত্যিদানো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি সামলাতে পারছেন না। আরও কেউ কেউ বলছে, তারা খেতে পারছে না ভাল করে। কারও কারও ঘুমোতে অসুবিধে হচ্ছে।

আর এঁরা সবাই ছুটছেন মাইকেল লয়েডের কাছে। মাইকেল এত দিন টিমের সঙ্গে যুক্ত। তাঁকে কেমন দেখতে দূরে থাক, নামটাও কেউ এত দিন জানত না। আর প্রথম টেস্টে তিনি কি না কেন্দ্রীয় চরিত্রের একজন হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এমন একটা আজব টেস্ট যেখানে লোকে কভার ড্রাইভের চেয়ে বেশি লক্ষ্য করবে হেলমেটটা ঘাড়ের কতখানি ঢাকছে? আর অপেক্ষা করে থাকবে প্রথম বাউন্সার কখন আসে দর্শককেও শিহরিত করার জন্য? সেখানে মনোবিদ না খেলেও বাইশ গজেই রয়েছেন।

আর অভাবিত ভাবে এসে গিয়েছেন বরুণ অ্যারন। মিচেল জনসনের দেশে তাঁকে নিয়ে প্রাক্-সিরিজ কাড়ানাকাড়া বাজবে ভাবাই যায়নি। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে বরুণ ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার তোলামাত্র রসিকতা শুরু হয়, এনসিএ ফিজিও তুমি যেখানেই থাকো, ওর ঘরটা বুক করে রেডি হও। অথচ এখানে তাঁকে ঘিরে অজি সাংবাদিকেরা উচ্ছ্বসিত। ইশান্ত শর্মা অনেক অভিজ্ঞ। তাঁরও দেড়শোর কাছাকাছি গতি। কিন্তু এঁরা দেখছি সম্ভাব্য ঘাতক হিসেবে বরুণকেই বেছেছেন।

মনে করা হচ্ছে ম্যাচে আরও একটা গোষ্ঠীর পারফরম্যান্স খুব তাৎপর্যপূর্ণ হবে ভারতীয় স্লিপ ফিল্ডারদের। ভারত তো নিশ্চয়ই, বিশ্বেরও সর্বকালের সেরা স্লিপ ফিল্ডারের অন্যতম তাঁর সঙ্গে দেখা হল নেট প্র্যাকটিসেই। তিনি স্লিপে দাঁড়ালে কাল কোহলিদের পেসারদের দীর্ঘশ্বাস হয়তো কম পড়ত। ইংল্যান্ড সিরিজে যেমন বারবার পড়েছিল। কিন্তু এঁর তো চুল সাদা হতে শুরু করেছে। ক্রিকেট কফিনও সঙ্গে আনেননি। তিনি রাহুল দ্রাবিড় প্রায় তিন বছর আগে অ্যাডিলেড ওভালেই না শেষ করেছিলেন ভ্রাতা লক্ষ্মণ সমেত।

ওভালের উত্তর দিকে যে গোষ্ঠীকে কোচ ডানকান ফ্লেচার মহাযত্নে স্লিপ ক্যাচিং করাচ্ছেন, সেই সমষ্টিতে তাই তিনি নেই। টিভি ক্যামেরার সামনে উল্টো দিকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। সেই গ্রুপে আছেন আবার ভারতীয় উইকেটকিপিং গ্লাভস হাতে প্রত্যাবর্তনকারী ঋদ্ধিমান। পাশে ধবন, অশ্বিন, রোহিত আর বিরাট। ভারত যে গতিমান আক্রমণকে হাতিয়ার করে চলতি সিরিজ খেলছে তা সৌরভ-সহ কোনও ভারতীয় অধিনায়কের কখনও ছিল না। ধরেই নেওয়া যায়, অ্যাডিলেডের ড্রপ ইন উইকেটের বাউন্স যতই অপেক্ষাকৃত নিচু হোক, নতুন বলে এরা সুযোগ তৈরি করবেই। তখন স্লিপ আর কিপার, কার কত বেশি কুশলী, ম্যাচ তার দিকেই হেলে থাকবে।

বিরাটকে সাংবাদিক সম্মেলনে খুব ঝকঝকে আর আক্রমণাত্মক লাগল। ওয়ার্নারের যেমন ফ্ল্যাশব্যাক হল ব্যাট হাতে নেটে গিয়ে। আর আমাদের মিডিয়া কনফারেন্সে সেটাই হল পেন হাতে। কোহলি বললেন, “বাউন্সার হবে না মানে? অফকোর্স হবে। শর্ট পিচড বোলিং তো খেলার অঙ্গ। আর ওভারপিছু দু’টো বাউন্সারের নিয়ম তো আমরা, প্লেয়াররা করিনি ভাই।” তাঁকে দেখে মনে হল আপাদমস্তক শোকের বাটখারা চাপিয়ে রাখা একটা ম্যাচ অন্তত ভারত অধিনায়কের আগ্রাসী মনোভাবে দাঁড়িপাল্লায় ও দিকটা আবার ওপরে উঠতে পারে।

ভারত অধিনায়ক না। সরি, কেয়ারটেকার ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন। নতুন চুলের ছাঁটে অধিনায়ক এ দিন নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করলেন। এত দূর এলেনই যখন, টেস্ট খেলছেন না কেন? আর যদি খেলবেনই না ঠিক করেছেন, তা হলে দেশে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে এলেন না কেন? এখানে তো আর ব্রিসবেনের আগে প্র্যাকটিসের কোনও সুযোগ নেই। নাকি সুপ্রিম কোর্টে চলতে থাকা মামলার আঁচ থেকে সরিয়ে রাখলেন নিজেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে?

কে জিজ্ঞেস করবে? মিডিয়ার সামনে তিনি আসেন না। মোটামুটি ভাবে অ-মিডিয়াস্পশ্যা। আর এমন একটা অবস্থানও তাঁর যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে এই জাতীয় প্রশ্ন করার সাহস ভারতীয় ক্রিকেটে কারও নেই! তার চেয়ে ঘাড় অবধি না ঢাকা পুরনো হেলমেট ব্যবহারে শন অ্যাবট খেলা সহজ!

adelaide phil hughes india-australia test gautam bhattacharyay virat kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy