Advertisement
E-Paper

আর্মান্দোর ‘ভীষণ কঠিন ম্যাচ’ জিততে মরিয়া সঞ্জয়

সাত সকালে আর্মান্দো কোলাসোর গলায় হঠাৎ-ই যেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের সুর? একশো আটত্রিশ বছর আগের এ রকমই এক ১০ মার্চ বিশ্বের প্রথম টেলিফোন বার্তাটি বন্ধু ওয়াটসনকে পাঠাতে গিয়ে আবিষ্কর্তা আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল যে ভাবে বলেছিলেন, “ওয়াটসন, আমার কাছে এসো। কথা আছে।”

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৭
যুদ্ধের আগে মৈত্রী। ইদানীং বড় ম্যাচের আগের দিনের চেনা ছবি। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক-কোচ খাবরা-আর্মান্দো ও মহমেডানের কোচ-অধিনায়ক সঞ্জয়-ধনরাজন।

যুদ্ধের আগে মৈত্রী। ইদানীং বড় ম্যাচের আগের দিনের চেনা ছবি। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক-কোচ খাবরা-আর্মান্দো ও মহমেডানের কোচ-অধিনায়ক সঞ্জয়-ধনরাজন।

সাত সকালে আর্মান্দো কোলাসোর গলায় হঠাৎ-ই যেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের সুর?

একশো আটত্রিশ বছর আগের এ রকমই এক ১০ মার্চ বিশ্বের প্রথম টেলিফোন বার্তাটি বন্ধু ওয়াটসনকে পাঠাতে গিয়ে আবিষ্কর্তা আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল যে ভাবে বলেছিলেন, “ওয়াটসন, আমার কাছে এসো। কথা আছে।” সোমবার সকালে ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনের শেষ বেলায় ফুটবলারদের সে ভাবে ডেকেই আর্মান্দো বললেন, “আমার কাছে এসো। কথা আছে।”

দলে যিনি চার মাসে ‘নেতা’ খুঁজে পাননি, ফুটবলারদের মধ্যে ‘স্বার্থপর মনোভাব’ খুঁজে পেয়েছেন, মহমেডানের বিরুদ্ধে ‘বাঁচা-মরার’ যুদ্ধের আগে তিনি আর কী বা বলবেন? মোগা-চিডিরা কাছে ছুটে যেতেই ইস্টবেঙ্গল কোচ তৈরি করলেন ‘হাডল্’। তার পর লাল-হলুদের গোয়ান কোচের ভোকাল টনিক, “যে ভাবে হোক মঙ্গলবার তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়বে। তা হলেই হারাতে বসা আই লিগ খেতাবের স্বপ্ন আবার দেখা যাবে। এত দিন যা হয়েছে সব ভুলে মহমেডান ম্যাচ জেতার জন্য ঝাঁপাও। লিগ জয়ের ট্র্যাকে থাকার এটাই শেষ সুযোগ।”

এবং কোচের কথাতে চোয়াল শক্ত ওপারা-সুয়োকাদের।

ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে লাল-হলুদের নাইজিরিয়ান স্টপার বলে গেলেন, “আমি পুরো ফিট। মহমেডান ম্যাচে খেলছি। জিততে আমাদের হবেই।” আর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে কাবু চিডিও ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “আমি খেলছি।” অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ খাবরার সাফ কথা, “প্রথম কুড়ি মিনিটেই গোল চাই। না হলেই চাপ বাড়বে।”

লাল-হলুদ গোলপোস্টের নীচে দাঁড়ানোর আগের দিন ক্লাবের জাকুজিতে অভিজিৎ মণ্ডল।

ইস্টবেঙ্গল ফুটবলরাররা যখন এ সব কথা বলছেন, তখন যুবভারতীতে অনুশীলন সেরে পাল্টা তাল ঠুকলেন মহমেডানের ব্রাজিলীয়-নাইজিরীয় জুটি। সাদা-কালো ব্রিগেডের স্টপার লুসিয়ানো বলছেন, “ওডাফার পর এ বার চিডি-মোগা। ওদের আটকে তিন পয়েন্ট পেতেই হবে।” আর সঞ্জয় সেনের ‘মিডফিল্ড জেনারেল’ পেন ওরজি বলে গেলেন, “আর তো সাতটা ম্যাচ! সব ক’টাতেই জীবন দিয়ে লড়ব। টিমকে সেফ জোনে নিয়ে যেতে তিন পয়েন্ট পেতেই হবে।”

ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ডার্বির আগে দুই শিবিরেরই লক্ষ্য একতিন পয়েন্ট চাই। কিন্তু উদ্দেশ্য আলাদা। আর্মান্দো যখন চাইছেন মহমেডান ম্যাচ জিতে আই লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-কে তাড়া করতে, তখন সঞ্জয় সেন আবার ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে যেন তেন প্রকারেণ অবনমনের রক্তচক্ষু এড়াতে মরিয়া।

আর্মান্দো তাই বলছেন, “জিততেই হবে। তিন পয়েন্ট পেলেই আত্মবিশ্বাস আসবে। পাল্টে যাবে দলের চেহারাটাই।” অবনমনের আওতায় থাকা সতেরো ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট পাওয়া বারো নম্বর মহমেডানকে নিয়ে এত চিন্তা! শুনেই মুখের ভূগোল পাল্টে গেল আর্মান্দোর। তাঁর মন্তব্য, “কী বলছেন, আই লিগে প্রথম পাঁচ দল ছাড়া যে কোনও দলের অবনমন হতে পারে। কেউ সেফ নয়।”

আর মহমেডান কোচ? তিনি আবার বলে গেলেন, “এ বছর যত দলের সঙ্গে খেলেছি তার মধ্যে সেরা দল ধানমন্ডি। ওদের যখন দু’বার হারানো গিয়েছে তা হলে ইস্টবেঙ্গলকে হারানো যাবে না কেন?”

ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে এ দিন বল নিয়ে প্র্যাকটিসের চেয়েও বাস্তব ছবি তুলে এনে বোঝানো হল বারবার। লোবো, অর্ণবদের কোচ বুঝিয়েছেন, বাকি দশ ম্যাচের মধ্যে আটটাই হোম ম্যাচ। সেখানে বেঙ্গালুরুর বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটাই অ্যাওয়ে ম্যাচ। সুতরাং মঙ্গলবার জিতলে ‘সোনে পে সোহাগা’। তাই খড়কুটোর মতো শেষ সুযোগ আঁকড়ে ধরতে বিপক্ষের জোসিমার, নবি, পেনের ত্রিভুজ আক্রমণ ভোঁতা করতে আর্মান্দোর ব্যাক ফোর রাজু-অর্ণব-ওপারা-রবার্ট। দুই সেন্ট্রাল মিডিও খাবরা, লোবো। দুই উইং ধরে লুসিয়ানোদের রক্ষণ দুমড়ে দিতে অস্ত্র সুয়োকা, ডিকা। সামনে জোড়া ফলাচিডি, মোগা। মোহনবাগান ম্যাচে হাস্যকর গোল হজম করে বাগদান পর্ব সারতে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন কিপার গুরপ্রীত। তাই মহমেডান ম্যাচ জিততে পুরনো ছাত্র অভিজিৎ-ই গোলে ভরসা গোয়ান কোচের।

মহমেডানে আবার প্র্যাকটিসের মাঝে মৃদু অশান্তি। তাও আবার ফুটবলারদের ঘড়ভাড়া দেওয়া নিয়ে। তবে কর্তারা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের বরং চিন্তা লুসিয়ানোর কুঁচকির চোট। আর যদি লুসিয়ানো খেলেন তা হলে তাঁর সঙ্গী কে হবেন? মোহনবাগান ম্যাচে ভাল খেলা সন্দীপ সাঙ্ঘা, না ম্যাচ সাসপেনশন কাটিয়ে ফেরা মেহরাজ? মহমেডান কোচ সেই রহস্য ভাঙেননি রাত পর্যন্ত। তবে পাল্লা ভারি মেহরাজের দিকেই।

কোচিং কেরিয়ারে তিন বার মুখোমুখি হয়েছেন আর্মান্দো-সঞ্জয়। দু’জনেই জিতেছেন এক বার করে। আর এক বার ড্র। মঙ্গলবার দু’জনেরই পাখির চোখ তিন পয়েন্টে।

আই লিগে অষ্টম স্থানে থাকা ১৪ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট সংগ্রহ করা আর্মান্দো আই লিগের চূড়া ফের দেখতে পাবেন কি? না কি সঞ্জয় সেন অবনমনের বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলে তলিয়ে যাওয়ার বদলে তিন পয়েন্টের লাইফ জ্যাকেট হাতে পাবেন?

মহমেডান কোচ বলছেন, “হাত গুণতে তো পারি না।” আর আর্মান্দো? তিনি বলছেন, “না রে বাবা! ম্যাচ বহুত টাফ হ্যায়।”

মঙ্গলবার আই লিগ

ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান (যুবভারতী, ৫-০০)।

ছবি: উৎপল সরকার।

east bengal mohammedan i league
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy