Advertisement
E-Paper

এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ক্ষমা নাও হতে পারে

এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে এক বড় অসুবিধে আছে। এ রকম ছোট টুর্নামেন্টে সব সময় ভুলের ক্ষমা হয় না। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের ভরাডুবি কতটা ক্ষতি করল, তা সময়ই বলবে। টুর্নামেন্টে এখন বিরাট কোহলিদের কাজ বেশ কঠিন হয়ে গেল। যা পরিস্থিতি, তাতে টুর্নামেন্টে বেঁচে থাকতে হলে রবিবার পাকিস্তানকে হারাতেই হবে ভারতকে। এক কথায়, ডু অর ডাই ম্যাচ। আর এমন পরিস্থিতি তৈরির কারণ যতটা না সঙ্গকারার ইনিংস, তার চেয়ে অনেক বেশি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। পাঁচটা কারণ দেখতে পাচ্ছি এ রকম হারের।

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৯:১৭
৮৪ বলে ১০৩

৮৪ বলে ১০৩

এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে এক বড় অসুবিধে আছে। এ রকম ছোট টুর্নামেন্টে সব সময় ভুলের ক্ষমা হয় না। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের ভরাডুবি কতটা ক্ষতি করল, তা সময়ই বলবে। টুর্নামেন্টে এখন বিরাট কোহলিদের কাজ বেশ কঠিন হয়ে গেল। যা পরিস্থিতি, তাতে টুর্নামেন্টে বেঁচে থাকতে হলে রবিবার পাকিস্তানকে হারাতেই হবে ভারতকে। এক কথায়, ডু অর ডাই ম্যাচ। আর এমন পরিস্থিতি তৈরির কারণ যতটা না সঙ্গকারার ইনিংস, তার চেয়ে অনেক বেশি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। পাঁচটা কারণ দেখতে পাচ্ছি এ রকম হারের।

এক) সঙ্গকারায় সর্বনাশ: টিভিতে ওর দুর্ধর্ষ ইনিংসটা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম শ্রীলঙ্কা না হয়ে যদি কুমার সঙ্গকারার জন্ম ভারতে হত, কী কী ঘটতে পারত! দুর্ভাগ্যক্রমে শ্রীলঙ্কার বলে সঙ্গকারা কোনও দিনই সেই প্রচার বা মর্যাদাটা পায়নি, যেটা ওর পাওয়া উচিত। ব্যাটসম্যান হিসেবে ওর অর্ধেকও নয়, এমন কিছু ক্রিকেটারকে নিয়ে আমাদের দেশে নাচানাচি হতে দেখি। প্রায় দেড় মাস ধরে খেলে চলেছে বাংলাদেশে। প্রথমে বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ, তার পর এখন এশিয়া কাপ। উইকেট সব জানে, তুখোড় ফর্মেও আছে। দীনেশ কার্তিকরা ওকে দেখলে শিখলে পারে। শিখলে পারে যে, চাপে পড়লে প্যানিকে কাজ হয় না। সঙ্গকারার মতো ধৈর্য ধরলে বরং লাভ আছে। শিখলে পারে, ২০০-৬ হয়ে গিয়েও কী করে ৮৪ বলে ১০৩ করে যাওয়া যায়। ভারতীয় বোলারদের কাউকে দেখে মনে হল না, সঙ্গকারাকে আউট করার ক্ষমতা বা আত্মবিশ্বাস দু’টোর একটাও আছে।

দুই) উইকেটের চরিত্র বুঝতে না পারা: অনেকে ম্যাচটার পর বলবেন যে, টস হারাটাই বিরাট কোহলিদের কাছে ফ্যাক্টর হয়ে গেল। কিন্তু সেটা ম্যাচে বিরাট প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করি না। এটা ঠিক যে, শ্রীলঙ্কা ইনিংসের সময় বল গ্রিপ করতে অসুবিধে হয়েছে ভারতীয় বোলারদের। কিন্তু তার পরেও জাডেজা-অশ্বিন বেশি রান দেয়নি। উইকেট পেয়েছে। মূল গণ্ডগোলটা হল, উইকেটের চরিত্র ধরতে না পারায়। ফাতুল্লাহয়ে পরপর ম্যাচ হয়ে চলেছে। শুরুর মতো ব্যাটিং ট্র্যাক আর নেই। রাফ তৈরি হয়েছে অনেক। টার্ন হচ্ছে। অজন্তা মেন্ডিসের যে বলটায় বিরাট বোল্ড হল, দেখে বোঝা যাচ্ছিল টার্নের হদিশই পায়নি। শ্রীলঙ্কা মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিল, তিন স্পিনার নামিয়ে। আর উইকেট অনুযায়ী প্ল্যানিং না করায় কখনও রোহিত শর্মা, কখনও অম্বাতি রায়ডুকে দিয়ে তৃতীয় স্পিনারের কাজ চালাতে হল বিরাটকে।

তিন) কুৎসিত ব্যাটিং: দীনেশ কার্তিক, অজিঙ্ক রাহানে এবং স্টুয়ার্ট বিনিকে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে তোমরা ঠিক কী ভেবে নেমেছিলে? রাহানে স্টেপ আউট করতে গিয়ে যে শটটায় আউট হল, এক কথায় অপ্রয়োজনীয়। দীনেশ কার্তিকের ব্যাপার আরও দুর্বোধ্য। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জায়গায় টিমে এসেছ, আর তুমি কি না তৃতীয় বলেই পুল মারতে চলে যাবে? শিখর আর বিরাট যতক্ষণ ছিল, মনে হয়েছে স্কোরটা তিনশোর আশেপাশে যাবে। সেখানে উঠল ২৬৪। মাঝে একটা সময় চল্লিশ রানের মধ্যে চারটে উইকেট চলে গেল! আর সত্যি বলতে, ২৬৪ দিয়ে ভারতের পক্ষে ম্যাচ বার করা সম্ভব নয়। তেমন বোলিং কোথায়?

চার) দল নির্বাচনে গণ্ডগোল: কেন চেতেশ্বর পূজারা থাকবে না, অথচ অম্বাতি রায়ডু থাকবে? বিদেশের মতো উপমহাদেশেও ব্যর্থ হতে শুরু করা রোহিত শর্মাকে আর কত দিন টানা হবে? স্টুয়ার্ট বিনির টিমে ভূমিকাটা কী? ও কী বোলার যে ব্যাটটা করতে পারে? নাকি উল্টোটা?

তিনটেরই কোনও উত্তর পেলাম না। একটা জিনিস বিরাটকে বুঝতে হবে। রায়ডু আর পূজারা এক নয়। ধোনি না থাকায় মিডল অর্ডারে যে নির্ভরতা দরকার, সেটা পূজারা দিতে পারবে। কিংবা রোহিতকে বসিয়েও পূজারাকে আনা যায়। ব্যাপারটা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, লাভ ওদেরই।

পাঁচ) ক্যাচ ফেলা: একটা নয়, পড়ল তিনটে। জাডেজা ফেলে দিল। রাহানে আর ধবন ধাক্কাধাক্কি করে একটা ফেলল। শেষে ধবন আরও একটা ফেলে দিল। ব্যাটিংয়ের মতো ফিল্ডিংও আজ খারাপ হয়েছে ভারতীয়দের। ডাইভ দিতে গিয়ে পায়ের ফাঁক দিয়ে বাউন্ডারি গলানো, ওভারথ্রো-এ বাড়তি রান ২৬৪ হাতে নিয়ে এত বিলাসিতা চলে না।

মোটামুটি এই। ম্যাচের শেষ দিকে দেখছিলাম, কোহলি চোখের সামনে পরপর ক্যাচ পড়তে দেখে, ভুবনেশ্বর কুমারদের ভুল লাইনে বল ফেলতে দেখে রেগে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। খারাপ লাগছে। অধিনায়ক হিসেবে এটাই ওর প্রথম বড় টুর্নামেন্ট। সত্যি। এমন একটা টিম যারা বিদেশে খেলতে পারে না, টার্নারেও পারে না। পারে শুধু পাটা উইকেটে।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মাথার চুলগুলো কেন এত তাড়াতাড়ি সাদা হয়ে যাচ্ছে, কয়েক দিনে বিরাটও বুঝতে পারবে!

শেষ দিকে এত শিশির পড়বে ভাবিনি। বোলাররা তাই ভাল বল করতে পারল না। গত কাল কিন্তু এত শিশির পড়েনি। তবু শামিরা যে ম্যাচটা শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পেরেছে, এটা ওদের কৃতিত্ব।

বিরাট কোহলি

ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের স্কোর

রোহিত এলবিডব্লু সেনানায়কে ১৩
ধবন বো মেন্ডিস ৯৪
কোহলি বো মেন্ডিস ৪৮
রাহানে ক থিরিমানে বো সেনানায়কে ২২
রায়ডু ক থিসারা বো চতুরঙ্গ ১৮
কার্তিক ক চতুরঙ্গ বো মেন্ডিস ৪
জাডেজা ন.আ. ২২
বিনি এলবিডব্লু সেনানায়কে ০
অশ্বিন বো মালিঙ্গা ১৮
ভুবনেশ্বর স্টাম্প সঙ্গকারা বো মেন্ডিস ০
শামি ন.আ ১৪
অতিরিক্ত ১১
মোট ৫০ ওভারে ২৬৪-৯।
পতন: ৩৩, ১৩০, ১৭৫, ১৯৬, ২০০, ২১৪, ২১৫, ২৪৫, ২৪৭।
বোলিং: মালিঙ্গা ১০-০-৫৮-১, অ্যাঞ্জেলো ৩.২-১-৯-০, সেনানায়কে ১০-০-৪১-৩, থিসারা ৬.৪-০-৪০-০, মেন্ডিস ১০-০-৬০-৪, চতুরঙ্গ ১০-০-৫১-১।

শ্রীলঙ্কা

কুশল ক কার্তিক বো অশ্বিন ৬৪
থিরিমানে এলবিডব্লু অশ্বিন ৩৮
সঙ্গকারা ক অশ্বিন বো শামি ১০৩
জয়বর্ধনে ক রোহিত বো জাডেজা ৯
চান্দিমল বো জাডেজা ০
অ্যাঞ্জেলো এলবিডব্লু শামি ৬
সেনানায়কে ক রোহিত বো শামি ১২
চতুরঙ্গ এলবিডব্লু জাডেজা ৯
থিসারা ন.আ ১১
মেন্ডিস ন.আ ৫
মোট ৪৯.২ ওভারে ২৬৫-৮।
পতন: ৮০, ১৩৪, ১৪৮, ১৪৮, ১৬৫, ১৮৩, ২১৬, ২৫৮।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৯.২-১-৪৫-০, শামি ১০-০-৮১-৩, অশ্বিন ১০-০-৪২-২, বিনি ৪-০-২২-০, জাডেজা ১০-১-৩০-৩, রায়ডু ১-০-৯-০, রোহিত ৫-০-২৯-০।

india sri lanka asia cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy