পাঁচ সেটের যুদ্ধ জিতে নাদাল। বুধবার। ছবি: এএফপি
রহস্যময় কামড়ের যন্ত্রণায় প্রথম সেট হেরে কোর্টে ডাক্তারি শুশ্রূষা নিয়ে পরের তিন সেট জিতে (৩-৬, ৬-৩, ৬-২, ৬-২) তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে হল ফেডেরারকে! যে কামড়ের কোনও ব্যাখ্যা নেই স্বয়ং রজারের কাছে। একবার বলছেন, “সমস্যাটার পিছনে স্থানীয় বন্যপ্রাণী।” আবার একটু পরে বলেন, “অদ্ভুতুড়ে!”
আসলে অস্ট্রেলীয় ওপেনের তৃতীয় দিনটাই যেন অদ্ভুতুড়ে।
দেশোয়ালি কোয়ালিফায়ার, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দেড়শো নম্বর পানোভার কাছে মীমাংসাসূচক তৃতীয় সেটে ১-৪, ১৫-৪০ পিছিয়েও রুশ টেনিস সুন্দরী শারাপোভা শেষমেশ ম্যাচ জিতলেন। ৬-১, ৪-৬, ৭-৫।
দিনের মতোই রাতের রড লেভার এরিনাতেও অবিশ্বাস্য স্কোরলাইন। আর এক কোয়ালিফায়ার, বিশ্বের ১১২ নম্বর স্মাইকজেকের হাতে ছিটকে যেতে যেতে কোনওক্রমে টিকে গেলেন নাদাল। শারাপোভার মতোই গুচ্ছের ডাবল ফল্ট (৭) আর আনফোসর্ড এররের (৫৩) ধাক্কায় আচমকা ১-২ সেটে পিছিয়ে পড়ে শেষে সওয়া চার ঘণ্টার ম্যারাথন ফাইভ সেটার-এ দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধা টপকান মহাতারকা। ৬-২, ৩-৬, ৬-৭ (২-৭), ৬-৩, ৭-৫। তাও আবার চূড়ান্ত সেটে ৬-৫ অবস্থায় দর্শকের বিদ্রুপাত্মক চিৎকারে নাদাল একটা সার্ভিসে বল টস-এ ভুল করে বসলে অখ্যাত প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁকে ওই সার্ভিসটাই ফের করার সুযোগ দেন। এটাও ম্যাচের পরিপ্রেক্ষিতে কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে! নাদাল পরে স্বীকার করেন, “খুব কম প্লেয়ারই পঞ্চম সেটে ৬-৫ স্কোরে এ রকম দৃষ্টান্ত দেখাবে।” ২৫২ মিনিটের দীর্ঘ ম্যাচে শুধু তৃতীয় সেটই চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা! যার একটা অন্য তাৎপর্যও খুঁজে পাচ্ছেন টেনিস বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ—জোড়া অস্ত্রোপচার আর পেশাদার ট্যুরে সাত মাসের অনুপস্থিতির পরেও রাফার স্ট্যামিনায় কিন্তু ঘাটতি পড়েনি! গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রত্যাবর্তনের দ্বিতীয় ম্যাচেই সেই বিখ্যাত ‘নাদাল-পাওয়ার’ প্রমাণিত। যদিও নাদাল ফাঁস করেন, এ দিন প্রথম সেটের পর তাঁর পেটে ক্র্যাম্প ধরেছিল।
মেলবোর্নে খেতাব জিতলে শারাপোভা সেরেনাকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর হবেন। এ রকম মোটিভেশন থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বাছাই মহাতারকা দ্বিতীয় সেট থেকে এলোমেলো সার্ভিস (হাফডজন ডাবল ফল্ট) আর অত্যাধিক আনফোর্সড এরর (৫১টা) করে দ্বিতীয় রাউন্ডেই ছিটকে যেতে বসেছিলেন। পানোভা দু’টো ম্যাচ পয়েন্ট পেয়েও গ্র্যান্ড স্ল্যাম-অনভিজ্ঞতার মাশুল দিলেন। শেষ সেটের দশম গেমে মোক্ষম সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্রেক করে ৫-৫ করার পর শারাপোভা আর পিছন ফিরে তাকাননি। পরের দু’টো গেম জিতে ম্যাচ সাঙ্গ করে দেন।
গত বছরের সেই ভয়ঙ্কর তাপমাত্রা (৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এ দিন মেলবোর্নে না থাকুক, ৩২ ডিগ্রিতেই ভরদুপুরের ম্যাচে কোর্টে শারাপোভা, মারেদের দিকে বলবয়-গার্লরা বরফজলে ভেজানো তোয়ালে ছুড়ে দেন আজ। অবিশ্বাস্য জিতে উঠে শারাপোভা বলে দেন, “সত্যি বলতে কী, এই গরমে আড়াই ঘণ্টা কোর্টে কাটানোর মোটেই ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু যখন আপনি খারাপ খেলেন, তখন তার একটা কিছু শাস্তি তো আপনাকে ভোগ করতেই হবে! তবু রক্ষে সেই শাস্তিটা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া হয়নি আমার জন্য।”
ফেডেরার আবার ইতালির বোলেল্লির বিরুদ্ধে কী শাস্তি ভোগ করলেন সেটাই যেন বুঝতে পারছেন না। “প্রথম সেটে আঙুলের গোড়ায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হওয়ায় তাকিয়ে মনে হল, এটা মৌমাছির কামড়। তার পর মনে হল সেটাই বা কী করে সম্ভব! তবে এ রকম যন্ত্রণা আগে কখনও হয়নি। ব্যাপারটা ঠিক ফোস্কাও নয়। অথচ ওই রকমই পুঁজ জমে গিয়েছিল! কেমন একটা অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার। আঙুলে ব্যান্ডেজ করতে দিইনি ডাক্তারকে। কারণ তা হলে ব্যাপারটা আরও বড় করে দেখা হত। আরও অদ্ভুতুড়ে লাগত। ব্যথাটা পরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার হচ্ছে।” সাংবাদিকদের কাছে ফেডেরারের শেষ কথার পর তাঁর আঙুলের কামড়-রহস্য নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy