দুই অধিনায়ক। দুই ভিন্ন মেজাজ। এক জন ম্যাচ শুরুর আগেই চাপ মুক্ত হতে নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন। তাতেও লাভ হল কোথায় শিখর ধবনের! আর এক অধিনায়ক আউট হওয়ার পর ম্যাচের মধ্যেই মাথা গরম করে বসলেও শেষ হাসিটা দেখা গেল তাঁর মুখেই। তিনি-- গৌতম গম্ভীর।
নাইটদের অধিনায়কের অবশ্য ম্যাচের মধ্যে মাথা গরম করে ফেলাটা প্রথম নয়। আইপিএল সিক্সেই বিরাট কোহলির সঙ্গে প্রায় হাতাহাতি হতে বসেছিল গম্ভীরের। এ দিন জল অতটা না গড়ালেও ডেল স্টেইনের বলে আম্পায়ার নাইজেল লং কট বিহাইন্ড দিতেই ক্ষোভে হাত-পা ছুড়তে শুরু করেন গম্ভীর। ডাগ আউটে গিয়ে ব্যাট ছুড়ে ফেলেন। বলটা কি তাঁর ব্যাটে লাগেনি? ম্যাচের পর গম্ভীর বলে দেন, “যদি খোঁচা দিতাম আমার প্রতিক্রিয়া ও রকম হত না। হঠাৎ করে মাঠে মাথা গরম করে ফেলেছিলাম। ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব বড় ছিল। টিমের বাকিরা যে ভাবে ব্যাট করেছে দারুণ খুশি।” শুধু ব্যাটসম্যানদেরই নয়, পাশাপাশি বোলারদের প্রশংসা করে গম্ভীর বলেন, “আমরা ১৬০ বা তার বেশি রান তাড়া করতে হবে বলে ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু যে ভাবে বোলাররা, বিশেষ করে আমাদের তিন স্পিনার ওদের রানটা আটকে রাখতে পেরেছে, সত্যি অনবদ্য।”
ম্যাচের আগে আবার অন্য দৃশ্য। সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটি, জোকস আওড়ানো সবেতেই আছেন ধবন। হোটেলে দেখে তখন বোঝার উপায় নেই কয়েক ঘণ্টা পরেই মরণ-বাঁচন ম্যাচ খেলতে নামছেন। রবিবার সকালে হায়দরাবাদে টিম হোটেলের লাউঞ্জে এমনই দৃশ্য। সন্ধ্যায় বোঝা গেল, কেন তাঁকে অতটা চাপমুক্ত মনে হচ্ছিল। সানরাইজার্স দলের নেতৃত্ব থেকে অব্যহতি পাওয়ার সিদ্ধান্তটা যে তখন জানা হয়ে গিয়েছে তাঁর।
এ বারের আইপিএলে ৩৩, ৩৭, ৩৮-এর পর সে দিন কিংস ইলেভেনের বিরুদ্ধে একটা ৪৫ সব মিলিয়ে রবিবারের ম্যাচের আগে দশ ইনিংসে ২১৫। স্ট্রাইক রেট ১১৫.৫৯। সে জন্যই রবিবারের হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের আগে টিম মিটিংয়ে ঠিক হল শিখরকে নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। ধবন এ দিন করেন ১৯।
প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, অধিনায়কত্বের চাপ ধবন সামলাতে পারছেন না। দলের কোচ টম মুডি অবশ্য বলেন, “জাস্ট ব্যাড প্যাচ চলছে।” শিখর নিজে স্পিকটি নট। দলের মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণের পরামর্শে তাঁকে অব্যহতি দেওয়া হল। লক্ষ্মণ এ দিন বলেন, “ক্যাপ্টেন শিখরের চেয়ে ব্যাটসম্যান শিখরকে আমাদের বেশি দরকার। সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”
তবে শিখরের মনে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে লর্ডস, ট্রেন্ট ব্রিজ, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। তিনি নাকি জুলাইয়ে ইংল্যান্ড সফরের কথা ভেবে সানরাইজার্সের দুই মেন্টর কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত ও ভিভিএস লক্ষ্মণের কাছ থেকে টেস্ট ব্যাটিংয়ের নানা দিক নিয়ে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন।
শিখর নিজেও তা অস্বীকার করলেন না। রবিবার কেকেআরের বিরুদ্ধে আইপিএলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামার কয়েক ঘন্টা আগে টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে আনন্দবাজারকে বললেন, “সব সময় চোখের সামনে দু’জন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ কেউ ছাড়ে?”
তাঁর ব্যাটিংয়ের টেকনিক নিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে এক বার দীর্ঘ সেশনও করেছেন লক্ষ্মণের সঙ্গে। লক্ষ্মণ বললেন, “ছেলেটা খুবই প্রতিভাবান। যা বলি খুব মন দিয়ে শোনে। তা ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ও। হাতে দারুণ সব শট আছে। নিজের ভাবনাগুলো ওর সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পেরে ভালই লাগে।”
ও দিকে গৌতম গম্ভীর আর বীরেন্দ্র সহবাগও তো ক্রমশ রানে ফিরছেন। চাপে আছেন? প্রশ্নটা শুনে হালকা হাসি হেসে শিখর বললেন, “আমি রান পাচ্ছি না বুঝি?” তার পর সিরিয়াস হয়ে বললেন, “ওদের রানে ফেরাটা তো ভাল। তবে ও সব নিয়ে আমি ভাবি না। কী করে ব্যাটে আরও বেশি রান আসবে, তা নিয়ে বেশি ভাবি।” শ্রীকান্তের সাফ জবাব, “ওরা তো টি-টোয়েন্টিতে রান পাচ্ছে। আইপিএলে রান পেলেই টেস্ট সফরে নিয়ে যেতে হবে? আমার তো মনে হয় গৌতম, বীরুকে হয়তো আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। তত দিনে শিখরও আরও উন্নতি করে ফেলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy