খেলার সুযোগ আর জুটল না! হাফ টাইমে মহমেডান রিজার্ভ বেঞ্চে হতাশ মেহরাজ।
ইস্টবেঙ্গল ৩ (সুয়োকা, জোয়াকিম, চিডি)
মহমেডান ১ (জোসিমার)
রবিবার তো আপনি করিম বেঞ্চারিফার সমর্থক?
শুনে গোঁফের নীচ থেকে হাল্কা হাসি বের করে আনলেন আর্মান্দো কোলাসো। যা সুখের সময়ে দেশের সফলতম ক্লাব কোচের ব্র্যান্ড। “মোহনবাগান-বেঙ্গালুরু ম্যাচে অনেক কিছুই হতে পারে। মোহনবাগানও জিততে পারে,” মনের ইচ্ছেটা হঠাৎ বেরিয়ে পড়ছে দেখে পরক্ষণেই অবশ্য সতর্কতা। “আমি কারও দিকে তাকাচ্ছি না। নিজেদের কথাই ভাবছি। আরও চারটে হার্ডল আছে। কেউ তো ভাবেইনি আমরা চৌত্রিশ পয়েন্টে পৌঁছে যাব। প্রথম তিনে ঢুকব।”
উঁকি দিচ্ছে খেতাব জয়ের হাতছানি। চৈত্রের প্রখর রোদেও ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে বসন্তের আবহাওয়া। তবুও পাঁচ-পাঁচটি আই লিগ জেতা কোচ ভাসতে রাজি নন উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে। কারণ লিগের সাপ-লুডোর অঙ্কটা তাঁর চেয়ে কে-ই বা বেশি জানেএ দেশে!
আর্মান্দো সতর্ক হতেই পারেন। কিন্তু তাঁর দলের সদস্য-সমর্থকরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করেছেন। গোটা ভারতের মতো বাংলায়ও আলোচনা চলছে, লোকসভা নির্বাচনে কোন দল কত আসন পাবে? বিজেপি কত ভোট কাটবে? যুবভারতীতে মহমেডানকে অবনমনের আরও অন্ধকারে পাঠিয়ে ইস্টবেঙ্গল নতুন মশাল-দৌড় শুরুর পর আরও একটা আলোচনা বাজারে চালু হয়ে যাবে-ই যাবে শেষ চার ম্যাচে চিডি-সুয়োকারা কি পারবেন জিততে? আজ বেঙ্গালুরুর থেকে পয়েন্ট কেটে লাল-হলুদকে খেতাবের দিকে কি আরও এগিয়ে দিতে পারবে বাগান? সালগাওকর, ডেম্পো পয়েন্ট নষ্ট করলে কি হবে?
দশ বছর পর কলকাতায় আবার আই লিগ আসবে কি না সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। কিন্তু এটা বলা যায়-ই আর্মান্দোর বিখ্যাত চ্যাম্পিয়ন্স লাক কাজ করতে শুরু করেছে। গোয়ার ফুটবল মহলের একটা চালু কথা রিজার্ভ বেঞ্চে আর্মান্দো বসলে হারা ম্যাচও তাঁর টিম জিতে যায়। খারাপ খেলেও তিন পয়েন্ট পায়!
শনিবারের যুবভারতী এই ‘গোয়ান ফুটবল প্রবাদ’-কে কিন্তু সমর্থন দিয়ে গেল। দু’হাত উঁচু করে। আই লিগে প্রথম বার পরপর দু’ম্যাচ না জেতার ‘কলঙ্ক’ মুছে দিয়ে।
তিনটে গোল। যার মধ্যে দুটি মহমেডান ডিফেন্সের উপহার! অন্যটি রেফারির। মিনি ডার্বিতে অতীতে এ রকম কখনও হয়েছে নাকি?
অবনমনের অতলে আরও তলিয়ে যাওয়ার আগে এ দিনের ম্যাচটা মহমেডানের কাছে ছিল ডু অর ডাই। সেই ম্যাচেই মাঠে এবং মাঠের বাইরের গোটা চারেক বিশ্রী ভুল শেষ করে দিয়ে গেল সঞ্জয় সেনের দলকে।
মাঠে নামার আগেই দু’টো ভুল করে বসলেন সাদা-কালো কোচ নিজেই। এক) অভিজ্ঞ মেহরাজকে না নামিয়ে লুসিয়ানোর সঙ্গী করেছিলেন সন্দীপ সাংঘাকে। দুই) ইসফাক, অসীম-সহ একঝাঁক নিয়মিত ফুটবলারকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর মাঠের ভিতরের দু’টো ভুলের দু’টোই দেশের অন্যতম ইউটিলিটি ফুটবলার রহিম নবির।
ভিভিআইপি বক্সে বসে থাকা জাতীয় কোচ উইম কোভারম্যান্সের সামনে সম্ভবত জীবনের জঘন্যতম ম্যাচ খেললেন পান্ডুয়ার ছেলে। সুয়োকার গোলটার পাস এল নবির উইংয়ের দিক থেকেই। জোয়াকিম আব্রাঞ্চেজের গোলও নবি এবং মহমেডান কিপার ব্যারেটোর ভুল বোঝাবুঝিতে। জোসিমার ১-২ করার পর যখন মহমেডান ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তখন ভুল করলেন রেফারি প্রতাপ সিংহ। গত বছর প্রতাপের তাপে মর্গ্যান-বিগ্রেড দগ্ধ হয়েছিল। নজিরবিহীন ভাবে ময়দানে লাল-হলুদ তাঁবুর সামনে বিশাল পোস্টার পড়েছিল রেফারিকে ধিক্কার দিয়ে। সেই প্রতাপ এ বার সম্ভবত হাজির হতে চেয়েছিলেন নতুন পোস্টার হাতে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ বোঝাতে। না হলে রবার্ট বল ছাড়ার পর সুয়োকা অফসাইডে থাকা অবস্থায় কার্যকরী দৌড় দেওয়া সত্ত্বেও রেফারি কেন গোল করার সুযোগ করে দিলেন চিডিকে? শুধু তাই-ই নয়, লুসিয়োনোর শট গোললাইন থেকে ফেরানোর সময় ইস্টবেঙ্গল রাইট ব্যাক অভিষেক দাসের হাতে লাগা সত্ত্বেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। দু’টো ক্ষেত্রেই টিভি-র অ্যাকশন রিপ্লেতে ধরা পড়েছে রেফারির ভুল।
গোলের পথে চিডি। শনিবার।
তবে রেফারির ভুলের জন্যই ইস্টবেঙ্গলকে জিতেছে, এটা বলা যাবে না। আবার এটাও বলা যাবে না চিডি-লোবো-খাবরারা মাঠ জুড়ে ফুল ফুটিয়েছেন। হাসনুহানা, টগর, রজনীগন্ধার গন্ধ ছড়িয়েছেন। বরং বলা যায়, প্রথম পনেরো মিনিট ছাড়া ইস্টবেঙ্গলকে দেখে কখনও মনে হয়নি এই দলটা খেতাব জেতার দিকে পা বাড়িয়েছে। বরং বল পজেশন থেকে ভাল মুভ, গোলের সুযোগ থেকে উইং প্লে কোনও জায়গাতেই সাদা-কালোকে টেক্কা দিতে পারেনি লাল-হলুদ। বরং একটা সময় মহমেডানের পেন এবং জোসিমার ফরোয়ার্ড হয়ে যাওয়ার পর আট জনে মিলে রক্ষণ সামলেছেন অর্ণব-রাজুরা। যা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবীদার দলের পক্ষে দৃষ্টিকটু।
ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ পুণে এফসি-র সঙ্গে। তার আগে অবশ্য চিন্তায় ইস্টবেঙ্গল কোচ। কারণ, এ দিন মোগা-উগার সঙ্গে চোটের তালিকায় যুক্ত হয়েছে চিডি আর লোবোর নাম। চিডির ঘাড়ের হাড় সরেছে। যা বিপজ্জনক। লোবো তো হাঁটতেই পারছেন না। তা সত্ত্বেও ছ’নম্বর আই লিগ তো ক্রমশ আপনার হাতে আসছে? সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে যাওয়ার সময় আর্মান্দো দেখান ঈশ্বরের দিকে। “সবই উনি জানেন।”
যার কাউন্টডাউন শুরু আজ, রবিবার থেকেই!
আজ লিগ শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরুকে মোহনবাগান হারাতে পারলে আর্মান্দো আরও এগোবেন। পুরো ব্যাপারটায় বেশ মজা পাচ্ছেন করিম। বাগান কোচকে একেবারে পছন্দ করেন না আর্মান্দো। গোয়ায় দু’জন যখন কোচিং করাতেন, দু’জনের সম্পর্ক ছিল অনেকটা ভাসুর-ভাদ্র বউয়ের মতো। অথচ সেই আর্মান্দো এখন করিমের দিকেই তাকিয়ে। “ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা অনেকেই বলছেন, যে করেই হোক বেঙ্গালুরুকে হারান। এসএমএসও আসছে প্রচুর। খারাপ লাগছে না কিন্তু,” এ দিনের ম্যাচ দেখার পর হাসতে হাসতে বলছিলেন করিম। অন্য সময় হলে এই হাসিটা হয়তো জ্বালা ধরাত আর্মান্দোর শরীরে।
কিন্তু এখন সবই যে গোয়ান ভদ্রলোকের কাছে ‘ফিল গুড’!
ছবি: উৎপল সরকার
ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, অভিষেক, রাজু, অর্ণব, রবার্ট, লালরিন্দিকা, লোবো (লেন), খাবরা, আব্রাঞ্চেজ (বলজিৎ), সুয়োকা, চিডি (গুরবিন্দর)।
মহমেডান: ব্যারেটো, নির্মল, লুসিয়ানো, সন্দীপ, নবি, মণিরুল (জেরি) (গগনদীপ), তারো, মণীশ, পেন, অজয় (স্যামসং), জোসিমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy