Advertisement
E-Paper

চাপকে আজ যারা গোল দেবে তিন পয়েন্ট তাদেরই

ফুটবল-পৃথিবীর প্রথম আলো দেখার ষোলো মাসের মধ্যেই জোড়া ট্রফি। আই লিগ এবং ফেড কাপ। তা সত্ত্বেও অ্যাশলে ওয়েস্টউডের অশ্বমেধের ঘোড়া কিন্তু এখনও পর্যন্ত একবারও নেভাতে পারেনি লাল-হলুদ মশাল। বুধবার যুবভারতীতে বল গড়ানোর আগেই তাই আর্মান্দো কোলাসোর ইস্টবেঙ্গল ৩-০ এগিয়ে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে। চতুর্থ সাক্ষাতে স্কোরলাইনটা ৪-০ হবে, না ৩-১? তার সন্ধান দিতেই ম্যাচের আগের দিন দুই টিমের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে যা বেরিয়ে এল...

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:১৯
লাল-হলুদ কোচের আশঙ্কা ও আশা। যুবভারতীতে অনিশ্চিত ডুডু।

লাল-হলুদ কোচের আশঙ্কা ও আশা। যুবভারতীতে অনিশ্চিত ডুডু।

ফুটবল-পৃথিবীর প্রথম আলো দেখার ষোলো মাসের মধ্যেই জোড়া ট্রফি। আই লিগ এবং ফেড কাপ। তা সত্ত্বেও অ্যাশলে ওয়েস্টউডের অশ্বমেধের ঘোড়া কিন্তু এখনও পর্যন্ত একবারও নেভাতে পারেনি লাল-হলুদ মশাল। বুধবার যুবভারতীতে বল গড়ানোর আগেই তাই আর্মান্দো কোলাসোর ইস্টবেঙ্গল ৩-০ এগিয়ে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে। চতুর্থ সাক্ষাতে স্কোরলাইনটা ৪-০ হবে, না ৩-১? তার সন্ধান দিতেই ম্যাচের আগের দিন দুই টিমের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে যা বেরিয়ে এল...

সুনীল ছেত্রীদের ড্রেসিংরুম

ফেড কাপের সময় ভাস্কো থেকে নিয়মিত চল্লিশ কিলোমিটার দূরের মারগাও স্টেডিয়ামে আসতেন প্রদ্যুম রেড্ডি! সহকারী কোচের হ্যান্ডিক্যামে গোপনে তুলে রাখা ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ফাঁকফোকর আর আক্রমণের বৈচিত্র নিজের দলের ভিডিও অ্যানালিস্টদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। যেটা বেঙ্গালুরু কোচ ওয়েস্টউডের হাতে এসে গিয়েছে তিন দিন আগেই। সুনীল ছেত্রীদের টিম মিটিংয়ে সেগুলো বারবার দেখানোও হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর পেরিয়ে শহরে ঢুকল গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দল। শন রুনি-রবিন সিংহরা বিকেলেই নেমে পড়লেন সুইমিং পুলে। সুনীলের সামান্য ফিটনেস সমস্যা থাকলেও বেঙ্গালুরুর বিদেশি কোচ বলে দিলেন, “সেরা দলই নামবে। কোনও চোট-আঘাত নেই আমার টিমে।”

র‌্যান্টি-মেহতাবদের ড্রেসিংরুম

চোটের তালিকায় চার। ডুডু নেই। লালরিন্দিকা নেই! তুলুঙ্গা এ দিনই চোট পেলেন অনুশীলনে। কেভিন লোবো ফিট নন। তা হলে কারা খেলবেন? কোচ ও অধিনায়ক ছাড়া কারও মিডিয়ার সামনে কথা বলা ছাড়পত্র নেই। তা হলেই ক্লাব জরিমানা করবে। তার মধ্যেই নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক লাল-হলুদের ফুটবলারের সঙ্গে একান্তে কথা বলে মনে হল, সবাই প্রথম এগারো নিয়ে ধন্দে। দু’দিন অনুশীলনে স্টপারে মিলান সুসাকের সঙ্গে ছিলেন রাজু। গোলে শুভাশিসের জায়গায় লুই ব্যারেটো। সেটা আবার বদলেছে এ দিন। টিম করে খেলা হয়নি। শুধু সেট পিস অনুশীলন হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগের দিন। সেখানে দেখা গেল শুভাশিস আর অর্ণব ফিরেছেন! বেঙ্গালুরুর ভুলত্রুটি নিয়ে কোনও ক্লাস হয়েছে আপনাদের? “না। আমাদের কোচ মাঠেই যা দেখানোর দেখান, বোর্ডে কিছু বোঝান না” বলেই গাড়িতে উঠে পড়লেন এক ফুটবলার। বিকেলে কোচ আর্মান্দো বললেন, “ছেলেরা সবাই জেতার জন্য মুখিয়ে আছে। ঘরের মাঠ। তিন পয়েন্ট চাই-ই।”

ফর্মেশন আর ক্লান্তির চাপানউতর

বেঙ্গালুরু কোচ ফর্মেশন বদল করেন মাঝেমধ্যেই। ৪-৪-২ থেকে চলে যান ৪-৫-১। সুনীলকে বিপক্ষ মার্কিং করলে তিনি একটু নেমে চলে যান বাঁদিকে। ইস্টবেঙ্গলের ফর্মেশন ৪-৪-২। এই ম্যাচে বলজিত্‌ খেললে হয়তো ফর্মেশন সামান্য বদলাবে। ইস্টবেঙ্গলে ফেড কাপ-ব্যর্থতার পর থেকেই হাহাকার। আইএসএল সব শেষ করে দিল বারবার বলেছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। এ দিন তাঁর নতুন সংযোজন, “আমাদের মাঠ খারাপ। যুবভারতীর অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলাও আমি পছন্দ করি না। আমাদের বাইশ জন আইএসএল খেলে এসেছে। ক্লান্তি তো আসবেই।” হঠাত্‌-ই ক্লান্তি-অজুহাতে গা ভাসিয়েছেন বেঙ্গালুরু কোচও। “ফেড কাপে চোদ্দো দিনে ছয়টা ম্যাচ খেলেছি। সেই ক্লান্তিটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় তো লাগবেই।” দুই কোচের ক্লান্তির ‘গল্প’ শুনে বিতর্কের নতুন ইন্ধন যোগান দেন দুই ‘সফল’ ভট্টাচার্যমনোরঞ্জন এবং সুব্রত। “পুরো ব্যাপারটাই মানসিক। আমরা যে চাপ নিয়ে কলকাতা লিগেরই পঁচিশ-তিরিশটা ম্যাচ প্রতি বছর খেলতাম, সেটা কি এখন আছে? তারপর আরও পাঁচটা ট্রফি। আমাদের সময়ও দু’দিন অন্তর ম্যাচ খেলতাম। খেলাটা তো নব্বই মিনিটই আছে! বাড়েনি তো! জানি না, পরিশ্রমের ফারাকটা কোথায় হচ্ছে?” কোচ হিসাবে ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ দেওয়া মনোরঞ্জনের সঙ্গে একমত মোহনবাগানকে দু’বার আই লিগ জেতানো কোচ সুব্রতও। “এখন তো সেই চাপটাই নেই। আরে, আমরা বছরে ষাটটা ম্যাচ খেলতাম। পরপর টুর্নামেন্ট। এরা আমাদের চেয়ে তো বেশি ম্যাচ খেলে না? সেই চাপই বা কোথায়? আসলে নিজেদের ফিট রাখতে জানে না।”

কে ফেভারিট? ইস্টবেঙ্গল, না বেঙ্গালুরু

“যে কোনও দলকেই হারানো যায়। কেউই অপরাজেয় নয়,” বলার পর পাশে বসা অধিনায়ক খাবরার দিকে তাকান ইস্টবেঙ্গলের গোয়ান কোচ। যোগ করেন, “বেঙ্গালুরু শেষ দুটো ম্যাচে অফ ফর্মে ছিল। জেতেওনি।” যার কিছুক্ষণ আগে আর্মান্দোর আবার মন্তব্য ছিল, “ফুটবলটা কখনও সুন্দর আবার কখনও কুত্‌সিত হয়।” চাপের মুখে ইস্টবেঙ্গল কোচ ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন কারও বোধগম্য হয়নি! খাতায়-কলমে ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগের সেরা দল মানেন? বেঙ্গালুরুর ব্রিচিশ কোচের সটান জবাব, “কাগজে-কলমে যাই থাক, প্রমাণ তো করতে হবে মাঠে। গতবার আমরা সবচেয়ে খারাপ দল ছিলাম কাগজে। কিন্তু আমরাই চ্যাম্পিয়ন।” তার পর হেসে, “আগের তিন বারই ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরেছি। আমরা তো আন্ডারডগ।”

চাপের আমি, চাপের তুমি

পনেরো মাস ইস্টবেঙ্গল কোচিং করাচ্ছেন আর্মান্দো কোলাসো। কলকাতা লিগ ছাড়া কোনও ট্রফি নেই। পাশাপাশি অ্যাশলে ওয়েস্টউড ষোলো মাসে জিতেছেন দেশের সেরা দু’টো ট্রফিই। স্বভাবতই চাপটা ইস্টবেঙ্গল কোচের বেশি। সেটা মেনেও নিচ্ছেন চিন্তিত মুখে সাংবাদিকদের সামনে বসে থাকা আর্মান্দো। “মানসিক ভাবে একটা টিম ভেঙে রয়েছে। সে জন্যই প্রত্যাশা বেশি। দর্শকদের প্রত্যাশা। তবুও জেতার জন্য ঝাঁপাব আমরা।” চার দিন আগেই পুণে এফসি-র কাছে বিশ্রী হেরে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হচ্ছে বেঙ্গালুরু। কী বলছেন ওয়েস্টউড? “গত বছর মার্চে শেষ হেরেছিলাম শিলং লাজংয়ের কাছে। তার পর আবার হারলাম। কোনও চাপ নেই আমাদের। লিগ তো লম্বা। বিশ্বের সব টিম একই ছন্দে চলতে পারে না।”

বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচ জিততে আর্মান্দো কোলাসোর মতোই র‌্যান্টির দিকে তাকিয়ে ইস্টবেঙ্গল।

এ তুমি কেমন তুমি

সদ্য ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা দলের সঙ্গে খেলা। আই লিগের সবে শুরু। ট্রফিও হাতের বাইরে যায়নি। তা সত্ত্বেও বিকেলের ইস্টবেঙ্গল তাঁবু সকালের যুবভারতীর মতোই শুনশান। আরও বড় খবর এল সন্ধের পর। একটা টিকিটও নাকি বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়তে পারেনি ক্লাব। কারণ, যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির উপর টিকিটের দায়িত্ব ছিল তারা নাকি পুলিশের স্ট্যাম্পিং করিয়ে টিকিট পৌঁছে দিতে পারেনি কাউন্টারে। র্যান্টি-মেহতাব-অর্ণবদের সঙ্গে ছবি তুলতে বা হাত মেলাতে নিয়মিত যুবভারতীতে আসা আশেপাশের পাড়ার ধুলোমাখা বাচ্চা ছেলেগুলোই বা কোথায় গেল? এ যে একেবারে অচেনা ছবি! গত বছরও তো এমন দেখা যায়নি। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ কি শুষে নিল এত দিনের সব আবেগ আর উচ্ছ্বাস? না কি প্রিয় টিম নিয়ে স্বপ্ন দেখা ভুলে গেলেন ময়দানের আগুনে সমর্থকেরাও? কে জানে!

বুধবার আই লিগে

ইস্টবেঙ্গল: বেঙ্গালুরু (যুবভারতী ৭-০০)

ছবি: উত্‌পল সরকার

ratan chakraborty ileague pressure eastbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy