Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডিনারে পেট ভরে ‘ডাক’ খেয়েও কেন পরপর দু’টো ‘ডাক’ করলাম বুঝছি না

দুবাইয়ের একটা মল-এ গিয়েছিলাম সে দিন। স্রেফ লাঞ্চের রুটিন খোঁজে। সেখানে খাবারের চেয়েও যে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি স্বস্তিতে ফিরলাম, সেটা দোকানটায় লেখা একটা আরবি বাক্যের অর্থ জানতে পেরে। বাক্যটার মানে এ রকম “আশা হল সেই জিনিস যা একইসঙ্গে ইতিবাচক মনোভাব আর সক্রিয়তা আনে।” কথাটা যেমন যুতসই, তেমনই অর্থবহ। ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের বিস্ময়কর ভাবে বাঁচিয়ে রাখেন।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে নাইটদের আড্ডা। ছবি: টুইটার

ব্রেকফাস্ট টেবিলে নাইটদের আড্ডা। ছবি: টুইটার

গৌতম গম্ভীর
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৬
Share: Save:

দুবাইয়ের একটা মল-এ গিয়েছিলাম সে দিন। স্রেফ লাঞ্চের রুটিন খোঁজে। সেখানে খাবারের চেয়েও যে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি স্বস্তিতে ফিরলাম, সেটা দোকানটায় লেখা একটা আরবি বাক্যের অর্থ জানতে পেরে। বাক্যটার মানে এ রকম “আশা হল সেই জিনিস যা একইসঙ্গে ইতিবাচক মনোভাব আর সক্রিয়তা আনে।” কথাটা যেমন যুতসই, তেমনই অর্থবহ। ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের বিস্ময়কর ভাবে বাঁচিয়ে রাখেন। আইপিএল-সাতে আমাদের ভাগ্যের উলটপুরাণের সময়ে আমার মনে হচ্ছিল, ঈশ্বর আমাকে ওই আরবি ‘প্রোভার্ব’ পড়িয়ে তাঁর এই সন্তানকে বেঁচে থাকার উপায় দেখিয়েছিলেন! গত রাতে দিল্লির বিরুদ্ধে কেকেআরের ছবি তো উলটপুরাণেরই।

এবং ম্যাচটায় হার এবং আমার দ্বিতীয় বার শূন্যতে আউট হওয়ার পরেও আমি আশাবাদী। ইতিবাচক। শনিবর আমরা যে ক্রিকেটটা খেলেছি, সেটাকে আমি বলে থাকি ‘টাইট ক্রিকেট’। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে সাহায্য করেছি। অনেক দিন ধরে, বেশ কয়েকটা মরসুমেই কেকেআর ব্যাটিং ছিল এক বা দু’জন ব্যাটসম্যানের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত দু’টো ম্যাচই দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের দলের ব্যাটিং-বোঝার ভারটা অনেকের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। যেটা একটা খুব খুব খুব স্বাগত জানানোর মতো পরিবর্তন। মণীশ পাণ্ডে টানা দ্বিতীয় বার ভাল খেলল। আমার বিচারে রবিন উথাপ্পা এক জন ক্লাস ব্যাটসম্যান আর সেই স্ট্যান্ডার্ডই রেখে চলেছে। দিল্লি ম্যাচে ওর ৪১ বলে ৫৫ রানের ইনিংসটা আমার সেই পুরনো বিশ্বাসকেই সুদৃঢ় করেছে যে, তুমি কেমন ভাবে শুরু করছ সেটা যত না গুরুত্বের, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শেষটা কেমন ভাবে করলে। রবিন ধীরে শুরু করলেও ও ঠিক সময়েই হাত খুলেছিল। এবং আমি ভেবেছিলাম সাকিব আর রবিন আমাদের বোলারদের জন্য বোর্ডে যথেষ্ট রান তুলেছে। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম। এবং আমার ভুল ভাবার একটা বড় কারণ হল, ভারতীয় ক্রিকেটের আর একজন যোগ্যতার চেয়ে কম স্বীকৃতি পাওয়া প্লেয়ার দীনেশ কার্তিক। কার্তিক হল সেই গোত্রের ব্যাটসম্যান যে অসাধারণ সব শট মারতে থাকবে আর এমনকী বিপক্ষ অধিনায়ককে ভাবতে বাধ্য করাবে, “এ রকম সব অসাধারণ শট একটা গোটা কুড়ি মাত্র টেস্ট এবং সত্তরটার মতো ওয়ান ডে খেলা লোক মারতে পারে কী ভাবে!” শনিবার রাতের ম্যাচেও সে রকম একটা কার্তিক-অধ্যায় এসেছিল। আমার বিশেষ করে মনে পড়ছে, তখন কার্তিকের রান ৪৯, আর ও সাকিবের বলের সামনে। বলটা বেশি টার্ন করল না। কার্তিক প্রথমে ‘রেগুলার স্পিন’ করা বল খেলার মতো স্টেপ আউট করার পরেও ইনসাইড-আউট হয়ে অবলীলায় একস্ট্রা কভারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিল! বিস্ময়কর শট।

এ বার একটা মজার গল্প আপনাদের শুনতে হবে। এক দিন আমি, কেকেআরের সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়া, মনবিন্দর বিসলা, আশিস নেহরা আর মিঠুন মানহাস সবাই একসঙ্গে ডিনার করছিলাম। আমি আর দাহিয়া হাঁসের মাংস, একটা ল’রাঞ্জ্ আর একটা ফরাসি ডিশের অর্ডার দিয়েছিলাম। আমি সাধারণত চেনাজানা খাবারই খেয়ে থাকি, কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক রান্নাও আছে যেগুলো চাখতে উপভোগ করি। সে দিনের ডিনারের অর্ডার সে রকমই ছিল।

হাঁসের মাংসটা সত্যিই সুস্বাদু একটা রান্না হয়েছিল। আমি আর দাহিয়া পেট ভরে খাওয়ার পরেও কিছুটা প্লেটে থেকে গিয়েছিল। সেটা আমরা বিসলাকে খাওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিলাম। কিন্তু ও তখন চাইনিজ খাবারে মজে আছে। দাহিয়া ওর নিজস্ব কায়দায় গোটা ব্যাপারটা এক বার মেপে নিয়ে বিসলাকে চোস্ত হিন্দিতে উপদেশ দিল, “ইয়ার, ডাক ইয়াহি খা লে, নাহি তো ম্যাচ মে ডাক খানা পড়েগা।” (“বন্ধু, ডাক-টা এখানেই খে নে, নয়তো তোকে ম্যাচে ডাক(শূন্য) গিলতে হবে।”) এবং শোনা মাত্র আমরা বাকিরা হেসে গড়িয়ে পড়েছিলাম।

আরও একবার দাহিয়ার কথার অনবদ্য নিঁখুত টাইমিং! যদিও সেটা আমার ক্ষেত্রে মোটেই প্রযোজ্য নয়। আমি তো বাবা ডিনারে পেট পুরে ‘ডাক’ খেয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও মাঠে নেমে পরপর দু’টো ‘ডাক’ করলাম কেন! ক্রিকেট মাঠে আমার এক জোড়া ‘ডাক’ কি সেদিন ডিনারে যে ‘ডাক’টা খেয়েছিলাম, সেটারই বদলা? কেউ কি বলবেন? প্লিজ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ipltag gautam gambhir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE