Advertisement
E-Paper

নৌকো ভাসিয়ে রাখা আর মশাল জ্বালানো, দুই দায়িত্বই ওডাফাদের

ওডাফা। প্রার্থনা সফল। সাড়ে তিন বছর মোহনবাগান কোনও ট্রফি জেতেনি? অবাক থুবরথি কান্দুনি চাত্তুন্নি। “কলকাতা লিগও জেতেনি?” নিজেই প্রশ্ন করার পর বাগানকে প্রথম আই লিগ দেওয়া কোচ বলে ফেলেন, “এ বার মনে হচ্ছে এখানে জিতবে। মঞ্জেরিতে খেলা টিমগুলোকে দেখিনি। তবে এখানে আমার টিম যা খেলছে, চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। দেখুন আমার লাকেই জেতে কি না?”

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:১৯

ওডাফা। প্রার্থনা সফল।

সাড়ে তিন বছর মোহনবাগান কোনও ট্রফি জেতেনি?

অবাক থুবরথি কান্দুনি চাত্তুন্নি।

“কলকাতা লিগও জেতেনি?” নিজেই প্রশ্ন করার পর বাগানকে প্রথম আই লিগ দেওয়া কোচ বলে ফেলেন, “এ বার মনে হচ্ছে এখানে জিতবে। মঞ্জেরিতে খেলা টিমগুলোকে দেখিনি। তবে এখানে আমার টিম যা খেলছে, চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। দেখুন আমার লাকেই জেতে কি না?” ভিভিআইপি বক্সে একটু দূরে বসে থাকা বর্তমান বাগান কোচকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েও দিলেন প্রাক্তনী।

হাঁটুর ব্যথায় কাবু টি কে চাত্তুন্নি পনেরো বছর পর তাঁর ‘প্রিয়’ দলের খেলা দেখতে এসেছিলেন কোচিতে। তাঁর ‘ভাগ্যে’ বাগানে চূড়ান্ত আলো ফেরে কি না সেটা সময় বলবে। তবে করিমের ময়লা হয়ে যাওয়া হাল্কা ক্রিম জামাটা মনে হচ্ছে এ বার পয়মন্ত হতে যাচ্ছে। কলকাতা ডার্বি থেকে সে জন্যই ওই জামাটা রেখেছেন শুধু রিজার্ভ বেঞ্চে বসার পোশাক হিসাবে।

বাগানের জন্য জন্য ফুটবল-ঈশ্বর এখন পর্যন্ত তাঁর আশীর্বাদ উপুড় করে দিয়েছেন মনে হচ্ছে। মঞ্জেরিতে মাঠে ঢোকার আগেই ইস্টবেঙ্গল জেনে গিয়েছিল তাদের বিদায় পরোয়ানা জারি হয়ে গিয়েছে। শেষ ম্যাচ জিতেও তাই তাদের লাভ হয়নি। আর কোচিতে সালগাওকরের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগেই করিমের মুখে হাজার ওয়াটের হাসি।

হবেই বা না কেন? মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে কর্নেল গ্লেনের হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে শিলং লাজং ৪-০ হারিয়ে দিয়েছিল মুম্বই এফসি-কে। ফলে মাঠে নামার সময়ই ওডাফারা জেনে গিয়েছিলেন, বাগান শেষ চারের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার তাদের ফাইনালে ওঠার লড়াই চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গে। কারণ অঙ্কের হিসাবে ডেরেক পেরিরার দলকে সেমিফাইনাল উঠতে হলে এ দিন জিততে হত অন্তত ছ’গোলে।

তবু করিম তাঁর উইনিং কম্বিনেশন ভাঙেননি। দুটো কারণে। এক) জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেয়েছিল বাগান। দুই) সেমিফাইনালের প্রস্তুতি সেরে নেওয়া। মাঠে নামার আগে ড্রেসিংরুমে বাগান কোচ পইপই করে বলে দিয়েছিলেন, “আমরা জিততে চাই। কিন্তু কার্ড বা চোটের বিনিময়ে নয়।”

ডেরেকের টিমের বিরুদ্ধে খেলা শেষে দেখা যাচ্ছে, গুরুত্বহীন ম্যাচ থেকে করিম চেষ্টা করেছেন যতটা সম্ভব পারের কড়ি তুলে নিতে। যেমন জল-দুধের মিশ্রণ থেকে হাঁস শুষে নেয় দুধ। করিমকে অবশ্য পুরো ‘দুধ’ খেতে দিলেন না সালগাওকরের বিকাশ জাইরু। বিশ্বমানের একটা গোলে ১-১ করে। প্রায় পঁয়ত্রিশ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের শট। ‘ডেড লিফট’ শটের পরিবর্তিত সংস্করণ মনে হল। উড়ে গিয়েও বাগান কিপার শিল্টন বাঁচাতে পারলেন না। টুর্নামেন্টে প্রথম গোল হজম করলেন ইচে-প্রীতমরা।

ম্যাচটা অবশ্য জিততে পারত বাগান। রাম মালিকের ক্রস নিজেদের গোলে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন বহু দিন আগে বাগানে খেলে যাওয়া গোয়ান দলের রোকাস লোম্যারে। ওডাফার শট গোললাইন থেকে বাঁচান নিকোলাও কোলাসো। বলটার পঁচাত্তর ভাগ ঢুকে গিয়েছিল গোললাইনের ভেতর। ক্রিস্টোফারও ওয়ান-টু-ওয়ানে গোল করতে ব্যর্থ। তবে ক্রিস্টোফার একটি পেনাল্টি এনে দেন দলকে। গোল বক্সে তাঁকে ফাউল করেন অগাস্টিন। ওডাফা পেনাল্টি মারলেন বাঁ দিকে। একেবারে মাটি ঘেঁষে।

জিততে না পারলেও মঙ্গলবারের ম্যাচ থেকে মোহনবাগান অন্তত তিনটে কড়ি যোগাড় করে নিল। ডার্বির পর টানা তিন ম্যাচ অপরাজিত। গ্রুপ লিগের শীর্ষে। দলে কারও চোট নেই। কোনও কার্ড নেই। রাম মালিক, উজ্জ্বল হাওলাদারের মতো পরিবর্তকে দেখে নেওয়ার সুযোগও পেয়ে গেলেন করিম। ম্যাচ শেষে তাই মরক্কান কোচের চোখ-মুখ প্রাণবন্ত। “জানি এক দিন পরেই চার্চিলের মতো টিমের সঙ্গে খেলতে হবে। ওরা এক দিন বেশি বিশ্রাম পেয়ে গেল। কিন্তু তাতে চিন্তিত নই। ফাইনালে ওঠার জন্য আমরা তৈরি।”

করিম সালগাওকর ছেড়ে আসার পর মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি গোয়ার ক্লাবটি। এ দিন শুরুতে অবশ্য বাগান কিছুটা ছন্দ হারিয়েছিল। তাদের গত দু’ম্যাচের দাপট নিয়ে খেলতে পারছিলেন না কাতসুমি-ডেনসনরা। “আমার ড্রেসিংরুমে ঢুকে গিয়েছিল ‘হারলেও সমস্যা নেই’ মনোভাব। এই অবস্থায় মোটিভেশন ঠিক রাখা কঠিন। সমস্য হচ্ছিল সে জন্যই” স্বীকার করে নিলেন বাগান কোচ। সঙ্গে যোগ করলেন, “বহু দিন পর বাগান কিন্তু ফেড কাপে ভাল খেলছে। এখনও দুটো ফাইনাল জিততে হবে। তবেই পৌঁছনো যাবে লক্ষ্যে।”

ওডাফাকে চুয়াত্তর মিনিটে তুলে নিলেন করিম। ম্যাচের পর দেখা গেল বাঁ পায়ে বরফ বেঁধে হাঁটছেন বাগানের গোলমেশিন। “দেখলেন, আমি বসে যাওয়ার পর ম্যাচটা ড্র হয়ে গেল। সালগাওকর ঝাঁপাল। বসতে চাইনি। কিন্তু খুব লাগছিল। পারলাম না,” বোঝাই যাচ্ছিল, পুরনো ক্লাব চার্চিলের বিরুদ্ধে রসদ জমা রাখতেই অনিচ্ছা নিয়েও মাঠের বাইরে চলে এসেছিলেন ওডাফা।

ফেড কাপে বাগান বরাবরই ফেভারিট। এ বার আবার সঙ্গে করিমের ‘তুঙ্গে বৃহস্পতি’। বাংলার আলো এবং মশাল দুটো জ্বালানোর দায়িত্বই এখন ওডাফাদের হাতে। যা গত তিন বছর ছিল পড়শি ইস্টবেঙ্গলের হাতে। কারণ টুর্নামেন্টের শেষ চারে এ বার বাকি তিনটেই গোয়ার টিম স্পোর্টিং ক্লুব, ডেম্পো এবং চার্চিল।

“আমি সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখতেও আসব। তা সে যত কষ্টই হোক। আমার টিমকে চ্যাম্পিয়ন করতেই হবে,” স্টেডিয়াম থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরের বাড়ি ফেরার আগে বলে গেলেন চাত্তুন্নি।

করিমের টিমবাস তখন স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোচ্ছে। বাইরে ইতিউতি উড়ছে সবুজ-মেরুন পতাকা। যা দেখে জানালা দিয়ে কাতসুমি-ইচে-প্রীতমদের মুখগুলো আলোয় ঝকঝক করে ওঠে।

মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, ইচে, আইবর, শৌভিক, পঙ্কজ (উজ্জ্বল), ডেনসন, কাতসুমি, জাকির (রাম), ওডাফা (সাবিথ), ক্রিস্টোফার।

mohunbagan odafe federation cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy