Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পিঠ আর পেস এ রকমই রেখো বরুণ

বরুণ অ্যারন নামটা শুনলে এত দিন শুধু ওর চোট-আঘাতের খবরগুলোই মনে পড়ত। এক-আধ বার নয়, অন্তত দু’তিন বার ওর পিঠের চোটের খবর পেয়েছিলাম।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০৪:০৬
Share: Save:

বরুণ অ্যারন নামটা শুনলে এত দিন শুধু ওর চোট-আঘাতের খবরগুলোই মনে পড়ত।

এক-আধ বার নয়, অন্তত দু’তিন বার ওর পিঠের চোটের খবর পেয়েছিলাম। মাঝে মাঝেই শুনতাম, ছেলেটা টিমে ঢোকার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু চোটের জন্য সুবিধে করতে পারছে না। তা ছাড়া ও যে গতিতে বল করে, আশঙ্কা হত পরপর চোটের পর কোনও দিন আর ওকে দেশের জার্সিতে পাওয়া যাবে কি না।

এক দিক থেকে ভাবলে, ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টটা অ্যারনের কাছে লিটমাস টেস্ট ছিল। টিমে ও প্রথম থেকেই ছিল, কিন্তু পঙ্কজ সিংহকে ওর আগে খেলিয়ে দিয়েছিল ধোনি। এই টেস্টেও সুযোগ হয়তো ও পেত না, যদি না মহম্মদ শামি জঘন্য ফর্মে থাকত। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অ্যারনের দুর্দান্ত বোলিং দেখার পর একটা পরামর্শ খুব দিতে ইচ্ছে করছে।

পিঠ আর পেসটা এ রকমই রেখো। বোলিংয়ের সঙ্গে-সঙ্গে নিজের শরীরের যত্নও নিও। ইরফান পাঠানের মতো পেসটা কখনও ঘণ্টায় একশো পঁচিশে নামিয়ে ফেলো না। দেখবে, আপনা-আপনিই অনেক দূর পৌঁছে যাচ্ছ।

শুক্রবার রাতে অনেককেই প্রশ্ন করতে শুনছিলাম, অ্যারনের এমন উত্থানে শামি চাপে পড়ে গেল কি না? না, পড়ল না। কারণ টিমের তৃতীয় সিমার পঙ্কজের অবস্থা বেশ খারাপ। ও বুঝতে পারছে, রঞ্জি ট্রফি এক জিনিস, আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর এক। রঞ্জিতে একটা খারাপ বলের ক্ষমা হতে পারে। টেস্টে সেটা বাউন্ডারি হবে। আমার মনে হয় পরের টেস্টেই হয়তো শামিকে ফেরাবে ধোনি। ইশান্ত চোটের খাতায় থাকায় শামি, অ্যারন, ভুবনেশ্বর এই তিন জনই এই মুহূর্তে ভারতের সেরা তিন পেসার। শামি পারছে না, কারণ ও ক্লান্ত। ধকলটা বেশি পড়ছে। ক্লান্তিটা কাটাতে পারলে আগের ফর্মে ফিরতে ওর খুব অসুবিধে হবে না।

কেউ কেউ প্রশ্ন করবেন, এ দিন ভারত লর্ডস টেস্টের পর আবার যে দাপট দেখাল, স্কোরবোর্ড তো দেখাচ্ছে তার কারণ ভুবনেশ্বর কুমার। এ দিন পড়া ইংল্যান্ডের তিনটে উইকেটের মধ্যে ভুবনেশ্বরের দু’টো। অ্যারনের একটা। তা হলে? সন্দেহ নেই, ভুবনেশ্বর খুব ভাল বল করেছে। সিরিজে পেসারদের মধ্যে ও-ই সবচেয়ে ধারাবাহিক। যে পেসার দু’দিকে সুইং করাতে পারে, তাকে খেলা ব্যাটসম্যানের কাছে খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ইংল্যান্ডেরও হচ্ছে। কিন্তু তবু বলব, ম্যাঞ্চেস্টারে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে যতটুকু যা ধাক্কা দিয়েছে ভারত, তার কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য অ্যারনের। লাইনটা নিখুঁত রেখে ও এত মারাত্মক গতিতে বলটা ছাড়ে যে, ব্যাটসম্যানের পক্ষে অ্যাডজাস্ট করা সমস্যা হয়ে যায়। ইয়ান বেল ঝামেলায় পড়েছে। অ্যালিস্টার কুক পড়েছে। বলটা যে ঘণ্টায় একশো পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটারে প্রায় বুকের কাছে লাফিয়ে আসবে, বুঝতেই পারেনি কুক। গ্যারি ব্যালান্স চলতি সিরিজে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান। ওকেও রাউন্ড দ্য উইকেট এসে ঠিক লাইনে বলটা রেখে তুলে নিল অ্যারন। আর মইন আলিকে করা ডেলিভারিটা তো অসাধারণ। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে মইন দেখল, স্টাম্প উড়ে গিয়েছে!

অ্যারনের সবচেয়ে বড় গুণ, ও এত চোট পেয়েও নিজের পেস নিয়ে কম্প্রোমাইজ করেনি। নিজেকে কখনও মিডিয়াম বা স্লো মিডিয়াম পেসার হিসেবে ভাবতে পারেনি। ওর একটা বলও ঘণ্টায় একশো চল্লিশের নীচে থাকে না। শুক্রবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তুমুল বৃষ্টির কারণে খুব অল্পই খেলা হল। প্রথম দিনের স্কোরের সঙ্গে ইংল্যান্ড আরও একশো পঁচিশ মতো রান যোগ করল। আরও তিনটে উইকেট হারিয়ে। আর এখন পর্যন্ত টেস্টে ভারতের তিনটে মনে রাখার মতো মুহূর্ত আপাতত তৈরি হয়েছে।

পনেরোটা সেশনে হারার পর একটা জেতা। অ্যারনের দুর্দান্ত বোলিং। আর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দুর্ধর্ষ ওই ৭১ রানের ইনিংস।

গত কাল ভারতীয় ব্যাটিংয়ের লজ্জার বিজ্ঞাপনের কথা লিখতে গিয়ে ধোনির ইনিংসটা নিয়ে বলা হয়নি। ধোনির টেস্ট কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে এটা থাকবে। ৮-৪ থেকে যখন কেউ ৭১ করে যায়, পরিস্থিতির বিচারে সেটা আর ৭১ নয়, সেঞ্চুরি বা দেড়শোর সমান হয়ে দাঁড়ায়। ওর টেকনিক নিয়ে এত কথা হয়। কিন্তু গত কাল অফস্টাম্প লাইনে দাঁড়িয়ে সারাক্ষণ যে অ্যাডজাস্টমেন্টটা ধোনি করে গেল, তার পর ওর টেকনিকের কথাবার্তা তোলা মূর্খামি। রানটা করা দরকার ছিল, ধোনি করে দিয়েছে। ক্যাপ্টেনস্ নক খেলে দিয়েছে।

কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বাঁচানোর জন্য এই উজ্জ্বল মুহূর্তগুলোও যথেষ্ট হবে কি না, জানি না। টেস্ট বাঁচাতে হলে দ্বিতীয় ইনিংসে পূজারা-কোহলিকে বড় রান করতেই হবে। টেস্ট বাঁচাতে হলে, ওপেনিং পার্টনারশিপেও বড় রান ওঠা দরকার। ওপেনিংয়ে শেষ কবে পঞ্চাশ উঠেছে, মনে করতে পারছি না। তবে টেস্ট বাঁচানোর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার, ইংল্যান্ডের লিড কোনও ভাবে দেড়শো পেরোতে না দেওয়া।

এক বার সেটা পেরিয়ে গেলে অবিশ্বাস্য কিছু তখন ঘটাতে হবে ধোনিদের। ম্যাঞ্চেস্টারের প্রায় একটা দিন বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়াকেও তখন আর আশীর্বাদ মনে হবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE