অ্যালিস্টার কুকদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দুর্দশার অন্ধকার ক্রমশ গভীরতর হওয়ার মধ্যেই আলো ফোটালেন ভারতের মেয়েরা। আট বছর পর ইংল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের মাটিতেই টেস্টে ধরাশায়ী করে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিলেন মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীরা।
এই জয়ে এক টেস্টের সিরিজে ইংরেজদের ৬ উইকেটে হারানোর পাশাপাশি পরপর দু’টেস্টে হারানোর কৃতিত্বও দেখাল ভারতের মেয়েরা। এর আগে টনটনে আট বছর আগে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ভারত। সেটাই ছিল ভারতীয় মেয়েদের খেলা শেষ টেস্ট ম্যাচ। আট বছর পর সেই নজিরই অক্ষত রাখতে দুরন্ত লড়াই করেন অধিনায়ক মিতালি রাজ (৫০ ন.আ.) ও শিখা পাণ্ডে (২৮ ন.আ)। তাও ৮ জন অভিষেক করা ক্রিকেটার নিয়ে। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ৯২ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পর জবাবে ভারত তুলেছিল ১১৪। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে এ বার বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন ঝুলন। বাংলার অলরাউন্ডারের (৪-৪৮) দুরন্ত বোলিংয়ে ২০২ রানে শেষ হয়ে যায় ইংরেজদের ইনিংস। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১৮১ রান চার উইকেট হারিয়ে তুলে নেয় ভারত।
ঠিক কতটা স্পেশ্যাল এই জয় ম্যাচের পর ভারতের ক্যাপ্টেনের কথাতেই সেটা পরিষ্কার। মিতালি বলে দেন, “ইংল্যান্ড এমন একটা টিম যাঁরা বিশ্বকাপ জিতেছে, অ্যাসেজ জিতেছে। আমরা এমন একটা টিমের বিরুদ্ধে জিতলাম যাঁরা বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাই ২০০৬ জয়ের থেকেও এই জয়টা আরও মধুর।” পাশাপাশি এমন পারফরম্যান্সে ভারতীয় বোর্ড মেয়েদের টিমকেও কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় নিয়ে আসবে বলে আশাবাদী মিতালি, “আশা করি এ রকম টেস্ট জয়ের পর বোর্ড আমাদের সঙ্গে চুক্তি করার ব্যাপারটা নিয়ে ভাববে।”
এই নিয়ে ভারতের মেয়েরা চারটি টেস্ট জিতল। ১৯৭৬ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, ২০০২ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর আট বছর আগে টনটনে ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে ছিলেন মিতালি। এই টিমের আরও দুই সদস্য ছিলেন সেই ম্যাচে, ঝুলন আর করুণা জৈন। তবে টনটনের থেকেও এ দিনের জয় যে কতটা কঠিন ছিল সে ব্যাপারে ভারতের ক্যাপ্টেন বলেন, “সেই টিমে অনেক সিনিয়র প্লেয়ার ছিল। টিমটাও সেট হয়ে গিয়েছিল তখন। এই টেস্টে ব্যাপারটা অন্য রকম। ইংল্যান্ড সেট টিম আর আমরা নেমেছিলাম আট জন অভিষেক হবে এমন প্লেয়ার নিয়ে।” পাশাপাশি ৩১ বছরের ভারত অধিনায়ক খুশি যে ক্রিকেট ছাড়ার আগে তাঁর কেরিয়ারে আরও একটা জয়ের সংখ্যা বাড়ল। মিতালি বলেন, “টনটনে টেস্ট জেতার পর আমাদের বলা হয়েছিল আর কোনও টেস্টে আমাদের খেলা হবে না। জানি না আর কত বছর খেলতে পারব। তবে অবসরের আগে আরও একটা টেস্টে নামার সুযোগ পেয়ে দারুণ লাগছে।”
মেয়েদের এই ঐতিহাসিক জয়ের পরই আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ধোনিদের সমালোচনা আর মিতালিদের প্রশংসার ঝড় বয়ে যায়। ‘কী ভাবে ইনিংস গড়তে হয় সেটা মেয়েদের টিমের কাছে ধোনিদের শেখা উচিত,’ ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের এমন টুইট যেমন দেখা যায়, তেমনই সাহিত্যিক শোভা দে টুইট করেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ইজ্জত’ বাঁচাল মেয়েরাই। দুরন্ত মিতালি। দুরন্ত ভারতীয় টিম।’