Advertisement
E-Paper

বিশ্বকাপে সেরা প্লেয়ার হতে চাই না, চাই কাপ জিততে, বললেন নেইমার

কথা ছিল লুই ফিলিপ স্কোলারির ম্যাচ পূর্ববর্তী সাংবাদিক সম্মেলন হবে। যেমনটা পোশাকি আর নিয়মরক্ষার মতো কোচেদের হয়ে থাকে। কেউ ভাবতেই পারেনি সেই উদ্বোধনী মিডিয়া সেশনে কোচ নিয়ে আসবেন তাঁর টিমের কোহিনুরকে। নেইমার দ্য সিলভা। একটা জলপাই রঙের জার্সি। তাতে লেখা দশ নম্বর। বাঁ হাত ভরা ট্যাটু আর কবজিতে লেপ্টে থাকা একটা কালো ব্যান্ডের দামি ঘড়ি বিশ্ব ফুটবলের আধুনিক সুপারস্টার একটা পূর্ণ রবীন্দ্র সদনের নীচের তলার ভিড় সমন্বিত মিডিয়ার সামনে বসে পড়লেন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০৩:৫৮
সাংবাদিক সম্মেলনে নেইমার। বুধবার কোরিন্থিয়ান্স এরিনায়। ছবি: এএফপি।

সাংবাদিক সম্মেলনে নেইমার। বুধবার কোরিন্থিয়ান্স এরিনায়। ছবি: এএফপি।

কথা ছিল লুই ফিলিপ স্কোলারির ম্যাচ পূর্ববর্তী সাংবাদিক সম্মেলন হবে। যেমনটা পোশাকি আর নিয়মরক্ষার মতো কোচেদের হয়ে থাকে।

কেউ ভাবতেই পারেনি সেই উদ্বোধনী মিডিয়া সেশনে কোচ নিয়ে আসবেন তাঁর টিমের কোহিনুরকে। নেইমার দ্য সিলভা। একটা জলপাই রঙের জার্সি। তাতে লেখা দশ নম্বর। বাঁ হাত ভরা ট্যাটু আর কবজিতে লেপ্টে থাকা একটা কালো ব্যান্ডের দামি ঘড়ি বিশ্ব ফুটবলের আধুনিক সুপারস্টার একটা পূর্ণ রবীন্দ্র সদনের নীচের তলার ভিড় সমন্বিত মিডিয়ার সামনে বসে পড়লেন।

আশ্চর্য লাগল স্কোলারিকে দেখে। প্রিয়জনের মৃত্যুশোক এত দার্শনিক ভাবে নিয়েছেন বলে নয়। নেইমার— তাঁর টিমের প্রধান অস্ত্রকেই বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন মিডিয়ার কাছে এগিয়ে দিলেন। অনেক কোচ হয়তো ভরসাই না করে আগলে রাখতেন। আর তাঁদের দোষও দেওয়া যেত না।

দারুণ সপ্রতিভ দেখাল নেইমারকে। এক বারের জন্যও তাঁকে কথা হারাতে বা থামতে দেখলাম না। এক্কেবারে আড্ডার মেজাজে যখন উপস্থিত মিডিয়াকে নেইমার মোটামুটি বর্ধিত পরিবার করে নিয়েছেন, হঠাৎই একটা কড়া প্রশ্ন উঠল আপনাকে আটকাতে প্রতিপক্ষ হিংসের আশ্রয় নিতে পারে ভেবে ভয় করছে না? নেইমার চোখটা কুঁচকে বললেন, “এটা কি হয় নাকি যে মাঠে হিংসের জন্য আমি খেলতে ভয় পাব? তা ছাড়া মাঠের ক্যাপ্টেন তো রেফারি। কেউ হিংসাত্মক খেললে রেফারি তো আছেন সেটা সামলানোর জন্য।”

হঠাৎ করে নেইমার এমন আবির্ভূত হবেন কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। স্কোলারিকে মোটামুটি ভুলে গিয়ে এটা এক সময় নেইমার আর মিডিয়া হয়ে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করা হল, ব্রাজিল বিশ্বকাপের নেইমার এই আখ্যাটা পাওয়া নিয়ে নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছেন? এক সেকেন্ডও সময় না নিয়ে নেইমার বললেন, “ও ভাবে একা একা ফুটবল হয় না। আমি তৈরি থাকব সতীর্থদের সঙ্গে দায়িত্ব সমান ভাগ করে নিতে।”

আবার জিজ্ঞেস করা হল যে, আপনি তো নিশ্চয়ই বিশ্বকাপের সেরা প্রোট্যাগনিস্ট হয়ে উঠতে চান? বললেন, “নাহ, আমি বিশ্বকাপ সেরা হতে চাই না। দেশের হয়ে কাপ জিততে চাই। ওটাই আমার স্বপ্ন।” একটু পরে মেসি আর রোনাল্ডোর নাম আলাদা করে নিয়ে বললেন, “আমি এই দু’জনের মস্ত বড় ফ্যান। এই বিশ্বকাপটায় ওরা দু’জনই আলো জ্বালিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধরেন।”

এত সামনে থেকে দশ নম্বর জার্সি পরে তিনি বসে থাকা। অনিবার্য প্রশ্ন হল, ব্রাজিলের দশ নম্বর হাতে পেয়ে কী মনে হচ্ছে? বললেন, “গভীর সম্মানিত লাগছে। এত সব প্রবাদপুরুষেরা এই জার্সি পরেছেন। আমি তো ঠিক করেছি আমার প্রথম জার্সিটা আমার মাকে উপহার দেব।”

বার্সা কি তাঁকে এত আত্মবিশ্বাসী করে তুলল যে, নিজের দেশে বিশ্বকাপ খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগেও এত অবিচলিত? স্কোলারি আর তিনি যেমন হাসিঠাট্টা করছিলেন তাতে এটা অন্তত বোঝা গেল ব্রাজিল পাহাড়প্রমাণ চাপে পড়বে বলে যে জল্পনা চলছিল, তার পুরোটা নিখাদ নয়। নইলে আধ ঘণ্টা ধরে বিশ্ব মিডিয়ার সামনে অভিনয় করা সম্ভব নাকি?

স্কোলারি আর তিনি দু’জনেই বললেন, “আমাদের টিমের মধ্যে প্রচুর ধৈর্য আছে। জানি খারাপ সময় আসবে এত লম্বা টুর্নামেন্টে। সেই সময়েও ধৈর্য দেখাতে আমরা তৈরি। আমরা জানি নিজেদের খেলা খেললে আমরাই টুর্নামেন্টের সেরা দল। কাপ আমাদেরই জেতা উচিত।”

স্কোলারি জানালেন, সাতটা স্টেপ তৈরি করেছেন গোটা টুর্নামেন্টে তাঁর দলের জন্য। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ হল প্রথম সিঁড়ি। আস্তে আস্তে যাবেন। একসঙ্গে সাতটা সিঁড়ি লাফ দেবেন না। স্কোলারিকেও খুব প্রাজ্ঞ আর টুর্নামেন্ট প্রাক্কালে সংযত মনে হল। ক্রোয়েশিয়া বৃহস্পতিবার মাঠে যা-ই ঘটাক, এই প্রেস কনফারেন্স ভিডিও রেকর্ডিং দেখলে চাপে পড়ত।

ভুল সিদ্ধান্তে আসা হল— এমন টেনশনহীন নেইমার দেখলে বাকি দলগুলোরও নির্ঘাৎ ঘুম কমত। অন্তত একত্রিশটা দেশের ডিফেন্ডারের!

fifaworldcup neymar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy