যুবভারতীর নবনির্মিত মাঠের দফারফা হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে টনক নড়ল কর্তৃপক্ষের।
বন্ধ করে দেওয়া হল বাইপাসের ধারের আইন কলেজের বাকি চার দিনের আন্তঃক্লাস ফুটবল টুর্নামেন্ট। ফেরত দিয়ে দেওয়া হল ভাড়ার টাকা। মাঠের হাল ফেরাতে সকাল থেকেই প্রায় চুরাশি জন কর্মীকে নামানো হল মেরামতির কাজে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও।
নতুন ঘাসকে বিশ্রাম দেওয়ার বদলে বাইপাসের ধারের একটি আইন কলেজের ফুটবলের জন্য যুবভারতী ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এবং ছাত্রদের বুটের স্পাইকে মাঠের বহু জায়গা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আনন্দবাজারে মঙ্গলবার এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আলোড়ন পড়ে যায় সর্বত্র। দিল্লির ফুটবল হাউস থেকে কলকাতায় দুই প্রধানের তাঁবু, ময়দান— সর্বত্র নিন্দার ঝড়। মুম্বই থেকে আইএসএল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি মাঠের খোঁজ নিতে শুরু করেন। ছবি চান মাঠের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায়। রাজ্য ক্রীড়া দফতরেও শুরু হয়েছে চাপানউতর।
কেন সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাঠ ভাড়া দেওয়া হল? দায় কার? সব প্রশিন নিয়ে শুরু হয়েছে ঝামেলা। অস্থায়ী ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মঙ্গলবার বলে দিলেন, ‘‘আমার অজান্তে এই ঘটনা ঘটেছে। আমিই সভা করে আইএফএ এবং দুই ক্লাবের কর্তাদের অনুরোধ করেছিলাম মাঠকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। ওঁরা আমার কথা রেখেছেন। ডার্বি ছাড়া কোনও ম্যাচ করেননি। তা সত্ত্বেও কেন এমন হল তদন্ত করে দেখছি। সামনে আইএসএল রয়েছে। যুব বিশ্বকাপ রয়েছে। কাজটা খুবই অন্যায় হয়েছে। আমি সেক্রেটারির কাছে এটা কী ভাবে হল তা জানতে চেয়েছি। প্রয়োজনে দায়ী অফিসারকে কারণ দর্শাতে বলব।’’
মন্ত্রী পুরো ব্যাপারটা না জানলেও তাঁর দফতরের সচিব সব জানতেন বলে দাবি করেছেন যুবভারতীর সিইও জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায়। আইন কলেজকে মাঠ ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর দিকেই সবথেকে বেশি অভিযোগের তির। জ্যোতিষ্মানবাবু এ দিন বলে দিলেন, ‘‘আমাকে কেউ মাঠ ভাড়া দেওয়া যাবে না বলেনি। পিডব্লিউডি-র হাতে মাঠ তুলে দিয়েছিলেন তৈরির দায়িত্বে থাকা কোম্পানি। তাদের কেউ বলেনি এটা ভাড়া দেওয়া যাবে না। আমি ক্রীড়া সচিবকে জানিয়েই মাঠ ভাড়া দিয়েছি। এখন দেখছি, সব দায় আমার উপর পড়ছে। কী আর করা যাবে, সব দোষ আমার। আর কী বলব?’’
আনন্দবাজারে মাঠের ছবি দেখে এবং খবর পড়ে সাত সকালেই মাঠে চলে আসেন স্টেডিয়ামের সিইও। মাঠের হাল দেখে তিনিও অবাক। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ডেকে পাঠান আইন কলেজের কর্তৃপক্ষকে। জানিয়ে দেন, মাঠ ভাড়া বাবদ জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য। বলে দেন, ‘‘বাকি চার দিন মাঠ দেওয়া যাবে না।’’ ফোন করেন এটিকে সচিবকেও। দুপুরে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেল প্রচুর কর্মী কাজ করছেন মাঠের হাল ফেরাতে।
জ্যোতিষ্মানবাবু বলেন, ‘‘আইন কলেজটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ। ওরা অনেক দিন ধরে মাঠ চাইছিল। আমি ভেবেছিলাম পঁচিশ মিনিটের একটা খেলা হলে তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। ছাত্ররা তো খেলবে। কিন্তু ওরা দু’টো করে নব্বই মিনিটের ম্যাচ খেলে প্রচুর ক্ষতি করে দিয়েছে। স্বীকার করছি মাঠের মাঝখানে, গোল পোস্টের পাশাপাশি অংশে অনেক জায়গায় বালি বেরিয়ে পড়ছে। প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি পড়ছে। তবে আশা করছি এটিকের প্রথম হোম ম্যাচের আগে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
আইন কলেজকে মাঠ দিয়ে ভুল করেছেন স্বীকার করে নিয়েও মাঠ প্রস্তুতকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগে দিয়েছেন ক্রীড়া দফতরের ওই অফিসার। বলে দিলেন, ‘‘ডার্বির পর এত দিন হয়ে গেল তা সত্ত্বেও মাঠ তৈরি হল না কেন? সবথেকে বড় ব্যাপার, সবুজ ঘাস আবার হলুদ হয়ে যাচ্ছে কেন? কেন সেখানে এখন অক্সিজেন দিতে হচ্ছে ফের সবুজ ফেরানোর জন্য।’’ তীব্র চাপের মুখে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে দিয়েছেন ওই অফিসার। যা থেকে দুর্নীতির গন্ধ বেরোতে শুরু করেছে। ‘‘ওই লোকটাকে তো পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তারই কোম্পানি কেন মাঠের দায়িত্ব পেল খুঁজে দেখুন।’’
চাপানউতর চলছে চলুক। কিন্তু আসল কথা— হাবাসের টিম নামার আগে যুবভারতীয় মাঠ পুরোপুরি তৈরি থাকবে তো? অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে এর প্রভাব পড়বে না তো?