তিন পদ্মশ্রী ও এক অর্জুন। কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানে পঙ্কজ আডবাণী, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, ও চুনী গোস্বামীর সঙ্গে আই এম বিজয়ন। শুক্রবার। ছবি: উৎপল সরকার।
আবেগ। প্রতিজ্ঞা। নস্ট্যালজিয়া। রসিকতা। জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো প্রদীপের মতো মঞ্চে আলো ছড়াচ্ছিল সেই প্রথম থেকে। শেষ বেলায় তাতে আবার সংকল্পের আগুন জ্বেলে দিলেন ভারতীয় ফুটবলের ‘সচিত্র পরিচয়পত্র’-রা।
চুনী, পিকে, বিজয়ন। ভারতীয় ফুটবল বলতে লোকে যাঁদের বোঝে, চেনে। বাষট্টির জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ফুটবলের সোনাজয়ী অধিনায়ক চুনী গোস্বামী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালের প্রথম গোলদাতা পিকে বলে ফেললেন, “ভারতীয় খেলাধূলাকে সাফল্যের ঝর্ণাতলায় দাঁড় করাতে এ ভাবেই অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছে ক্রীড়া-সাংবাদিকদের কলম।” পাশে দাঁড়িয়ে যা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন ত্রিসুরের ‘কালো হরিণ’ আইএম বিজয়ন। ‘বার্থডে বয়’ বলে দিলেন, “কলকাতার প্রচারমাধ্যম আমাকে এখনও ভোলেনি। কেরলে গিয়ে সাংবাদিক বন্ধুদের বলব।” সুখস্মৃতির এ রকম মুঠো মুঠো কোলাজ নিয়েই শুক্রবারের সন্ধেয় রোটারি সদন মাতল কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব (সিএসজেসি)-এর বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে।
সম্মানপ্রাপকরা তো ছিলেনই। সঙ্গে হাজির ছিলেন আখতার আলি, দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়দীপ কর্মকার, বুলা চৌধুরী, গুরবক্স সিংহ, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো কলকাতার ক্রীড়া জগতের ‘হুজ হু’-রা। তবে অনুষ্ঠান তার ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছল একই মঞ্চে পিকে-চুনীর সম্মানিত হওয়ার মুহূর্তে। ভারতীয় ফুটবলকে তাঁদের জমানায় সাফল্যের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে দেওয়া এই দুই পদ্মশ্রীর জীবনকৃতি সম্মানের মানপত্র পড়ার সময় উঠে দাঁড়াল গোটা প্রেক্ষাগৃহ। গুরু প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফুল দিয়ে শ্রর্দ্ধাঘ্য অর্পণ করলেন ‘অর্জুন’ বিজয়ন। আর ‘বন্ধুবর’ চুনীকে পুষ্পস্তবক দিয়ে চিরাচরিত ঘরানায় রসিকতায় মজলেন পিকে। উত্তরীয়, স্মারক উপহার পেয়ে শিশুর মতো আবেগ দু’জনেরই চোখেমুখে।
ভারতীয় ফুটবলে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মানিত হলেন বিজয়নও। বহু দিন পর চেনা সাংবাদিক বন্ধুদের পেয়ে বসে গেলেন আড্ডায়। যেখানে আইএসএল থেকে সুনীল ছেত্রী, ভাইচুংয়ের ভোটযুদ্ধে আগমন, ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার জন্য গলা ফাটানোর পরিকল্পনা, কিছুই বাকি রাখলেন না আইএমভি। যাঁর মাত্র বারো সেকেন্ডে গোলের রেকর্ড ভারতীয় ফুটবলে আজও অক্ষত।
মঞ্চে সম্মানিত আর এক পদ্মশ্রী বিলিয়ার্ডসের বিশ্বসেরা পঙ্কজ আডবাণী যখন বলছেন, “চেষ্টা করলে ব্যর্থতা আসতেও পারে। আর চেষ্টা না করলে ব্যর্থতা আসবেই।” যা শুনে চোয়াল শক্ত বর্ষসেরা দুই ফুটবলার মোহনবাগানের ইচে এবং ইস্টবেঙ্গলের অর্ণব মণ্ডলের। অর্ণব বলে গেলেন, “আশা করি পরের বার ফের এই মঞ্চে আসতে পারব।” মহিলাদের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে বর্ষসেরা জলপাইগুড়ির স্বপ্না বর্মন, রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জাতীয় বাস্কেটবল দলে প্রতিনিধিত্ব করা সুকুরমণি ওঁরাওরা চাইলেন আশীর্বাদ। দাবার বর্ষসেরা দীপ্তায়ন ঘোষ, ব্যাডমিন্টনের ঋতুপর্ণা দাসদের মুখেও একই কথা। আর এক সম্মানপ্রাপক সৌরভ কোঠারি স্মৃতি হাতড়ালেন। “২৫ বছর আগে এই মঞ্চেই সম্মানিত হয়েছিলেন আমার বাবা।” পুত্রের জন্য মুখে তখন তৃপ্তির হাসি মনোজ কোঠারির।
ওএনজিসি-সিএসজেসি-র এই অনুষ্ঠানে এ ছাড়াও সম্মানিত হলেন, সায়নী ঘোষ (সাঁতার), চন্দন সিংহ (হকি), সুমতি আদিগিরি (কবাডি), অর্জুন দাস (শুটিং), সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় (টেবল টেনিস), অনুশ্রী ঘোষ (ভলিবল), চন্দন বাউড়ি (অ্যাথলেটিক্স)। শহরের বাইরে থাকায় আসতে পারেননি মহম্মদ শামি (ক্রিকেট), নীতিন সিংহ (টেনিস) এবং প্রণতি দাস (জিমন্যাস্টিক্স)। এ ছাড়াও সম্মানিত হন, বর্ষীয়ান সাংবাদিক কপিলমুনি গুপ্ত, ফুটবল কর্তা বিবেক ভৌমিক। বিশেষ সম্মান পান যতীন বিস্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy