Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বসনিয়ার সঙ্গে কাপ্পাও আজ প্রতিদ্বন্দ্বী লিওর বিশ্বযুদ্ধে

আর্জেন্তিনার মেসি? বার্সেলোনার মেসি? না নতুন মেসি? মেসি থ্রি? ফুটবলবিশ্ব রোমাঞ্চিত ভাবে এই উত্তরের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করবে যে, লিওনেল মেসি এ বার তাঁর কোন অবতার নিয়ে ব্রাজিল এসেছেন! কলকাতায় মাসখানেক আগে আসা আটলেটিকো মাদ্রিদের শীর্ষকর্তা এবিপিকে বলে গিয়েছিলেন, “মেসি খারাপ খেলছে বলে যে রটনাটা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। ও আসলে এ বার বার্সায় খেলার মধ্যেও বিশ্বকাপ চিন্তায় ডুবে ছিল।”

শনিবার দুপুরে মারাকানার বাইরে নকল মারাদোনা। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

শনিবার দুপুরে মারাকানার বাইরে নকল মারাদোনা। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য

গৌতম ভট্টাচার্য
রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

আর্জেন্তিনার মেসি?

বার্সেলোনার মেসি?

না নতুন মেসি? মেসি থ্রি?

ফুটবলবিশ্ব রোমাঞ্চিত ভাবে এই উত্তরের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করবে যে, লিওনেল মেসি এ বার তাঁর কোন অবতার নিয়ে ব্রাজিল এসেছেন!

কলকাতায় মাসখানেক আগে আসা আটলেটিকো মাদ্রিদের শীর্ষকর্তা এবিপিকে বলে গিয়েছিলেন, “মেসি খারাপ খেলছে বলে যে রটনাটা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। ও আসলে এ বার বার্সায় খেলার মধ্যেও বিশ্বকাপ চিন্তায় ডুবে ছিল।” আটলেটিকোর শীর্ষকর্তার এই মন্তব্যটা বেশ ইন্টারেস্টিং এই জন্য যে, যেখানে তাঁর টিম কোচের এত প্রশংসা হল যে দিয়েগো সিমিওনে জানেন কোন ট্যাকটিক্সে মেসিকে রোখা যায় আর তাই রুখেও দিলেন... সেখানে তাঁর নিজের ডিরেক্টর বলছেন, মেসির কিছু হয়নি। এ বারে ক্লাব ফুটবলে ওর মনটা ছিল না।

বসনিয়া কোচের আজকের প্রেস কনফারেন্সটা আর খেলার পাতায় ধরানো যাবে না। ওটা মারাকানায় হতে হতে দেশে ভোররাত হয়ে যাবে। তবে শুনলাম সাফেত সুসিচ নাকি বলেছেন, তিনি মেসির পিছনে আলাদা করে কোনও লোক না লাগিয়ে জোনাল মার্কিংয়ে খেলার কথা ভাবছেন। বসনিয়া প্রাথমিক পর্বে ৩০ গোল করেছে। যা ওই গ্রুপে জার্মান, ডাচ আর ইংরেজ টিম ছাড়া কেউ করেনি। ক্রোয়েশিয়া যেমন তীব্র কাউন্টার অ্যাটাকে ব্রাজিলকে হার্ট অ্যাটাক দিয়েছিল, এদের পক্ষেও কি সম্ভব নয় আর্জেন্তিনীয় ডিফেন্সকে দৌড় করানো? বিশেষ করে আর্জেন্তিনা যখন এই জায়গাটায় দুর্বল?

এই সঙ্গত প্রশ্নটা নিয়ে রিও এবং এই গ্রহেও বিশেষ কৌতুহল দেখছি না। সবাই বরং জানতে চায়, মেসি কোথায় খেলবেন? ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন আগের বিশ্বকাপে মারাদোনা তাঁকে ভুল জায়গায় খেলিয়েছিলেন। ফর্মেশনে গণ্ডগোল থাকায় সামনে পুরো চাপটা মেসির উপর পড়ে যাচ্ছিল। সাবেয়া নাকি ৪-৩-৩ খেলবেন, যা আসলে ৪-২-৪। কারণ সামনে মেসি, সের্জিও আগেরো আর গঞ্জালো ইগুয়াইন ছাড়াও ডান দিকে ক্রমাগত আক্রমণে উঠবেন দি’মারিয়া। যে কোনও বিপক্ষই তা হলে আর মেসিকে একা মার্ক করে সুবিধে পাবে না।

মেসি বরাবরই কম কথার মানুষ। আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। কলকাতায় খেলতে আসার সময় স্বয়ং এআইএফএফ সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে চাননি। এ বারেও তাঁকে নিয়ে যে এত উত্তেজিত শোরগোল, তা নিয়ে আর্জেন্তিনা টিভিকে একটাই কথা বলেছেন, “দু’টো বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে নিজের কিছু খুঁত খুঁজে পেয়েছি। এ বার সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।”

গত দু’বারের সঙ্গে ব্রাজিল বিশ্বকাপের একটা উল্লেখযোগ্য তফাত, অতীতে বল পায়ে মাঠে নামার আগে এত আক্রান্ত হননি মেসি। এ বার বার্সা যত খারাপ খেলেছে, তত চাপ বাড়ানো হয়েছে তাঁর ওপর।

প্র্যাকটিসে প্রায়ই বমি করছে। শরীর একেবারে বেহাল।

ইনকাম ট্যাক্স হানা নিয়ে বিপর্যস্ত।

হতাশায় ভুগে নিজের ফুটবলীয় দক্ষতায় সব বিশ্বাস হারিয়েছে।

ফুটবল প্যাশন হারিয়ে ফেলেছে।

শেষটা সবচেয়ে মারাত্মক।

যে পর্যবেক্ষণে স্প্যানিশ ফুটবল-সমাজে হুটপাট ফেলে দেন বার্সার প্রাক্তন সহকারি কোচ এঞ্জেল কাপ্পা। ভ্যালেন্সিয়ার কাছে বার্সা ২-৩ হারার পর কাপ্পা বলেছিলেন, “ফুটবলে রাজ করতে হলে যে প্যাশনটা চাই যে আমি সর্বত্র বল খুঁজব... ডাইনে... বাঁয়ে... মাঝে... ওয়ান টু খেলব... কাটাব... দৌড়োব... মেসির সেই জায়গাটাই নড়ে গিয়েছে। খেলাকে অবিমিশ্র ভালবাসলে ওই প্যাশনটা আপনিই চলে আসে। মারাদোনা ভাবুন। ইনিয়েস্তা দেখুন। জাভি দেখুন। মেসি সেখানে উৎসাহহীন, আপন খেয়ালে চলা এক নৌকোর মতো। এক-এক সময় মনে হচ্ছে পনেরো বছর ধরে ফুটবলের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। এখন সেই বিয়েতে বুঝি ও বোর হয়ে গিয়েছে।”

মেসি ঘনিষ্ঠমহলে বলেছিলেন, এটা যে এই ভঙ্গিতে আসতে পারে দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু অভিযোগের সরাসরি কোনও জবাবও দেননি। তাঁর বরাবরের স্টাইলই হল, ফুটবল বুটের চেয়ে বড় মাইক্রোফোন পৃথিবীতে কোনও কালে আবিষ্কৃত হয়নি। এ বারও তাঁর দেশের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের বিশ্বাস, প্যাশন আছে কি নেই তার উত্তর একটা অসাধারণ কোরিওগ্রাফ করা গোলের মাধ্যমেই দেবেন মেসি। তিনি জানেন, অন্তত আর্জেন্তিনা তাঁর ওপর ভরসা হারায়নি।

প্রতি বার আর্জেন্তিনা বিপর্যয়ের পর কারণ অনুসন্ধানের রিপোর্টে জাভি বা ইনিয়েস্তার একটা অনিবার্য কোট থাকে, “বার্সায় ও সাপোর্টটা পায়। দেশের হয়ে যেটা মিস করে।” ঘুরিয়ে-ঘারিয়ে যেন বলা, মেসি করে রেখেছি আমরা! স্প্যানিশ মিডিয়া যাকে বিশ্বমঞ্চে লজ্জা অ্যাখ্যা দিয়েছে, সেই পূর্ণাঙ্গ ফুটবল-বস্ত্রহরণের পর মেসি কি হালকা করে বলবেন, “জাভিরা বার্সেলোনায় গোল করার লোক পায়।” বা একটা টেক্সটও করবেন বন্ধুদের?

মনে হয় না। ফুটবল বুটই তাঁর সবচেয়ে জোরালো এসএমএস। যা নিয়ে মারাকানায় তিনি শুরু করে দিচ্ছেন দেশ এবং নিজের বিশ্বযুদ্ধ। এঞ্জেল কাপ্পাও তো খেলছেন কাল বসনিয়ার হয়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE