গ্যালারিতে স্কোলারি বিরোধী প্ল্যাকার্ডও।
ব্রাজিল ফুটবল ইতিহাসের জঘন্যতম সপ্তাহের সমাপ্তি ঘটল শনিবার সন্ধের ব্রাসিলিয়ায়। সেমিফাইনালে ১-৭ ধ্বংস হওয়ার পর যেখানে শনিবার তৃতীয় স্থানের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে তিন গোল খাওয়ার পর গ্যালারিতে প্ল্যাকার্ড ভেসে উঠল ‘স্কোলারি, ২০০২-এ কাপ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এ বার আপনি আসুন। বাই-বাই!” প্ল্যাকার্ড দেখা গেল আরও একটা। এক তরুণ হতাশায় লিখে ফেলেছেন, ‘কাম ব্যাক পেলে!’
কিন্তু ব্রাজিল কোচের চেয়ার ছাড়ার লক্ষণ নেই। “আমার ভবিষ্যৎ ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার উপরই ছেড়ে দিচ্ছি,” ম্যাচের পরে বলে দেন লুই ফিলিপ স্কোলারি। চৌষট্টি বছর পরে দেশের মাটিতে বসা বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে চার জয়, দুই ড্র ও দুই হার উপহার দেওয়া স্কোলারি আরও বলেন, “ফাইনাল রিপোর্ট দেব সিবিএফকে। ওরাই দেখুক, ব্রাজিল ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য কোথায় কী দরকার!” স্কোলারির চুক্তির মেয়াদ ছিল বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের খবর, সিবিএফ প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া মারিন নাকি চলতি বছরের শেষ অবধি তাঁকেই জাতীয় কোচ রেখে দিতে পারেন। সিবিএফ বিশ্ব ফুটবলের বড় মাপের কোনও কোচকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিতে চাইছে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত স্কোলারিকেই তাঁরা রাখবেন। হোসে মোরিনহোকে ইতিমধ্যে বাজিয়ে দেখেছে সিবিএফ। কিন্তু চেলসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তির মেয়াদ থাকা মোরিনহো আপাতত ‘না’ বলে দিয়েছেন।
শনিবার রাতে নেইমারকে বেঞ্চে বসিয়ে স্কোলারি হয়তো গ্যালারির ক্ষোভে প্রলেপ দিতে চেয়েছিলেন। ম্যাচের শুরুতে নেইমার মাঠে ঢোকামাত্র গোটা গ্যালারি তাঁর নামে জয়ধ্বনিও দেয়। তবে স্কোলারিকে প্রায় নব্বই মিনিট গ্যালারির টিটকিরি শুনতে হল। ডাচদের ব্রোঞ্জ পদক নেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রথামতো হাজির না থেকেই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল টিম। তবে প্রচারমাধ্যমের রোষ থেকে তারা বাঁচেনি।
সবচেয়ে করুণ অবস্থা ব্রাজিলের আমজনতার। যে জাতির আত্মায় ফুটবল, সেই ব্রাজিলিয়ানদের একজন, ব্যবসায়ী দিয়োগো খায়ের গত রাতে শোকে-দুঃখে নেদারল্যান্ডসের কমলা জার্সি গায়ে মাঠে এসেছিলেন। “আমাদের টিম পুরো ফালতু। তাই ডাচদের সমর্থন করছি।” ব্রাজিলীয় সেনাবাহিনীর কর্মী বছর একুশের ফ্রান্সিসস্কো বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে কী মানসিকতা লাগে সেটা এরা জানেই না। বিশ্বকাপও তো একটা বিশ্বযুদ্ধই!”
এ দিন আবার আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিলেন ফ্রেড। গত বছর কনফেডারেশনস কাপে ভাল খেললেও বিশ্বকাপে শুধু একটা গোল করেন স্কোলারির দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার।
সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ব্রাজিল দলকে পাঠানো এক ‘সাধারণ ব্রাজিলিয়ান’-এর চিঠি। যিনি লিখেছেন, “ব্রাজিলের গর্ব একটাই, ফুটবল। বিশ্বকাপের তিরিশটা দিন আমরা আশায় থাকি, সেই আনন্দে, সাফল্যে বুঁদ হয়ে থেকে পরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিন নিজেদের গড়পড়তা একঘেয়ে জীবন কাটাব। কেউ জানবে না, কাল থেকে আমি কোন সাধারণ কাজে আবার ডুবে যাব! কিন্তু কত কষ্ট নিয়ে যে যাব, সেটা আমিই জানি। এই চিঠি আপনারা পড়বেন কি না জানি না। কিন্তু প্লিজ, আমাদের আর কষ্ট দেবেন না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy