রূপকথার মুখ সিমিওনে। ছবি: এপি
তারিখটা ছিল ২৯ মার্চ ২০১৪। আটলেটিকো বিলবাওর সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ২-১ জিতেছিল তারা। যার পর থেকেই ফুটবল বিশ্বে শুরু তাদের রূপকথার সফর। লা লিগার শীর্ষে থাকা ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে। তারা-- আটলেটিকো মাদ্রিদ, এখন ইউরোপের ‘সিন্ডারেলা স্টোরি’। ফুটবলের নতুন রূপকথা। যে দল স্বপ্নের সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে আজ মুখোমুখি হতে চলেছে চেলসির।
প্রশ্ন এখন একটাই-- চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে কি আটলেটিকোর স্বপ্নের দৌড় অব্যাহত থাকবে? নাকি রূপকথার জগৎ থেকে আবার আটলেটিকোকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনবেন হোসে মোরিনহো? আটলেটিকোর এই ‘স্পেশ্যাল’ দলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ করবেন ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’।
চল্লিশ বছর পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে খেলা ছাড়াও এখন লা লিগার শীর্ষস্থানে রয়েছে আটলেটিকো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠার পথে যাঁরা হারিয়েছে এসি মিলান, বার্সেলোনার মতো ইউরোপের সেরা দলগুলোকে। ফুটবল বিশ্বে প্রশ্ন, কী এমন জাদুকাঠি নাড়ালেন সিমিওনে যে দলের মধ্যে হার না মানা জেদ ঢুকে গেল? বহু জিনিস বেরিয়ে আসছে, আটলেটিকোর সাফল্যের কারণ হিসেবে। সেন্টার ফরোয়ার্ডে দিয়েগো কোস্তার অবিশ্বাস্য ফর্ম। রক্ষণভাগে মিরান্ডা ও গোদিনের আঁটোসাঁটো জুটি। সিমিওনের ছক। যা হল, রক্ষণভাগ শক্ত রেখে প্রতিআক্রমণে বিপক্ষকে নাজেহাল করা। কিন্তু আরও একটা কারণ উঠে আসছে স্প্যানিশ প্রচারমাধ্যমে।
২৯ মার্চ ২০১৪, আটলেটিকো বিলবাওর সঙ্গে ম্যাচের আগে স্প্যানিশ সাংবাদিক আইরিন ভিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সিমিওনে। যিনি ১২ বছর বয়সে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে তাঁর দুটো পা হারিয়েছিলেন। ভিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোর পিছনে সিমিওনের একটাই লক্ষ্য ছিল, দলকে আরও উদ্বুদ্ধ করা। “সিমিওনে চেয়েছিল আমি ওর দলকে আরও শক্তি জোগাই। আরও উদ্বুদ্ধ করি ভাল খেলার জন্য। ফুটবলারদের মুখ দেখে মনে হয় আমার গল্প ওদের উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে।”
সেই ভোকাল টনিকের রেশ এখনও চলছে। চলছে আটলেটিকোর রূপকথার সফরও। চেলসি ম্যাচের আগে মাঝমাঠ তারকা দিয়েগোর আশা, আটলেটিকোর ঘরের মাঠ ভিসেন্তে কালদেরনে খেলার সুবিধাটা তাঁরা নিতে পারবেন। “ঘরের মাঠের অ্যাডভান্টেজ নিতে হবে। দুটো দলের খেলার পদ্ধতিও এক রকম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে উঠতে হলে খুব ভাল খেলতে হবে,” বলেন দিয়েগো।
আটলেটিকো বধের দিকে এগোচ্ছেন মোরিনহো। সোমবার। ছবি: এএফপি
চেলসি থেকে লিয়েনে আসলেও, ম্যাচে খেলতে চলেছেন আটলেটিকো মাদ্রিদের গোলকিপার থিবাও কুর্তোয়া। ঠিক ২০০৩-০৪ মরসুমের মতো। যখন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে লিয়েনে আসলেও ফের্নান্দো মোরিয়েনতেসের গোলেই ছিটকে গিয়েছিলেন জিদান-ফিগোরা। ম্যাচের আগে কুর্তোয়া বলেন, “চেলসিও আমার ক্লাব। কিন্তু এই দুটো ম্যাচের জন্য ভুলতে চাই যে আমি চেলসি সমর্থক।”
কিন্তু রূপকথার সফর শ্যাম্পেন স্নান দিয়ে শেষ করতে হলে আটলেটিকোকে মাত করতে হবে মোরিনহোর মগজাস্ত্রকে। নিজের প্রিয় ক্লাব চেলসিকে নিয়ে কোনও দিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে পৌঁছননি মোরিনহো। কিন্তু ইউরোপজুড়ে বড় ম্যাচের কোচ হিসাবেই পরিচিত তিনি। যাঁর ছক ঘুরিয়ে দিতে পারে কোনও ম্যাচের ছবি। পাল্টে দিতে পারে অনেক অঙ্ক। সাধারণত ৪-২-৩-১ ছকেই দল সাজান মোরিনহো। তাঁর দলের ট্রেডমার্ক হচ্ছে শক্ত রক্ষণ। যার ছাপ আছে বর্তমান চেলসি দলেও।
তবে আটলেটিকো ম্যাচের আগে অনিশ্চিত চেলসি তারকা এডেন হ্যাজার্ড। রয়েছে আবার স্ট্রাইকার সমস্যাও। তোরেস, এটো, দেম্বা বা-দের মধ্যে কেউ ধারাবাহিক ভাবে গোলে নেই। শনিবার সান্ডারল্যান্ডের কাছে ১-২ হেরে প্রশ্নচিহ্ন উঠতে শুরু করেছে যে তীরে এসে কি তরি ডুববে চেলসির? নাকি নিজের প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে পারবেন মোরিনহো?
আজ টিভিতে
আটলেটিকো মাদ্রিদ : চেলসি (টেন অ্যাকশন, রাত ১২-১৫)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy