Advertisement
E-Paper

ম্যাক্সওয়েলের যা ফর্ম দেখছি, মনে হচ্ছে টুথব্রাশটা নিয়ে নামতে হবে

কেকেআরের অন্দরমহলের সব খবর নিয়ে পূর্ব ভারতে একমাত্র আনন্দবাজারে কলম ধরছেন নাইটদের ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরআমার মুড বোঝার একটা উপায় হল, আমার টুথব্রাশ খেয়াল করা। যখন আমার সব কিছু ঠিকঠাক চলে, ব্রাশের দাঁড়াগুলো খুব সুন্দর দেখায়। মসৃণ, সোজা। টুথব্রাশের বিজ্ঞাপণে যেমন দেখা যায় আর কী। কিন্তু যখন মন মেজাজ ভাল থাকে না, তখন আমার টুথব্রাশ দেখলে মনে হবে, এখুনি বোধহয় কায়দা করে চুল ছাঁটিয়ে এসেছে! ঘুম থেকে উঠলে চুলের যে রকম অবস্থা হয়, ওটাকেও তখন তেমন দেখায়।

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৪ ০২:৫২

আমার মুড বোঝার একটা উপায় হল, আমার টুথব্রাশ খেয়াল করা। যখন আমার সব কিছু ঠিকঠাক চলে, ব্রাশের দাঁড়াগুলো খুব সুন্দর দেখায়। মসৃণ, সোজা। টুথব্রাশের বিজ্ঞাপণে যেমন দেখা যায় আর কী। কিন্তু যখন মন মেজাজ ভাল থাকে না, তখন আমার টুথব্রাশ দেখলে মনে হবে, এখুনি বোধহয় কায়দা করে চুল ছাঁটিয়ে এসেছে! ঘুম থেকে উঠলে চুলের যে রকম অবস্থা হয়, ওটাকেও তখন তেমন দেখায়। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটা আমরা জিতেছি ঠিকই, কিন্তু আট ম্যাচে মাত্র তিনটে জয় পাওয়ার পর আগামী দিনে আমার টুথব্রাশের দাঁড়াগুলো কেমন দেখাবে সেটা আমার ছোট্ট মেয়েটাও বলে দিতে পারবে!

দিল্লির বিরুদ্ধে জয় পাওয়ার আগে আমার ব্রাশ করার সময় স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি দীর্ঘ ছিল। কারণ পরপর কয়েকটা ম্যাচ হেরে গিয়েছিলাম আমরা। তাই ব্রাশ দিয়ে যত না দাঁত পরিষ্কার করছিলাম, তার চেয়ে ব্রাশ চিবোচ্ছিলাম বেশি। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে দু’টো ক্লোজ ম্যাচের কথা ভেবে এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে নির্মম ভাবে ব্রাশটাকে চিবোচ্ছিলাম। বেচারি! ওর তো একমাত্র মোটিভ আমার দাঁত পরিষ্কার করা। ভাবনাচিন্তার সুনামি মোটামুটি দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়েছিল মুখের ভেতর। জানি না, বিজ্ঞানীরা স্ট্রেস মিটার আবিষ্কার করতে পেরেছেন কি না। কিন্তু আমি আমার স্ট্রেস মিটার আবিষ্কার করে ফেলেছি। ওই টুথব্রাশ।

গত দু’দিনের আমার ‘স্ট্রেস মিটারে’র উপর খুব চাপ যায়নি। কিন্তু মনে হচ্ছে শনিবার যখন ঘুমোতে যাওয়ার আগে ওর সঙ্গে আবার আমার দেখা হবে, ফের একটা একটা লম্বা সেশনের পাল্লায় ওকে পড়তে হবে। রবিবার কটকে আমরা কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলতে নামছি। আর চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের যে সাম্প্রতিক লুঠতরাজ দেখলাম, তাতে ভাবছি ব্রাশটা নিয়েই মাঠে নামব কি না! আমি ম্যাক্সওয়েলকে খুব ভাল করে জানি না। কিন্তু মনে হয় মানুষ হিসেবে ও খুব সৃষ্টিশীল। স্ট্রোক খেলার ক্ষেত্রে ও নতুন নতুন অ্যাঙ্গেল বার করছে। বাউন্ডারিগুলো মাাঠের এমন সব জায়গা দিয়ে যাচ্ছে, যে সব জায়গা দিয়ে আগে কেউ তেমন মারেনি। অনেকে বলে যে, ও স্কোয়্যার লেগ থেকে লং অন অঞ্চলটাকে বেছে নেয় পেটানোর জন্য। অফে বরং ওর সীমাবদ্ধতা আছে। যাক গে। ও সব ভ্রান্ত ধ্যানধারণার মধ্যে আমি অন্তত নেই।

ম্যাচের সময় টুথব্রাশ আমি পকেটে রাখি বা না রাখি, ম্যাক্সওয়েল এবং ওর টিমমেটদের জন্য যে আমার প্ল্যান থাকবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিংস ইলভেনের বিরুদ্ধে জেতা মানে, ন’টা ম্যাচের মধ্যে চারটেয় জিতে থাকব। এবং অবশ্যই আমার টুথাব্রাশ আরও কয়েকটা নিশ্চিন্ত দিন পাবে।

টুথব্রাশ চিবোনো, ক্রিকেট খেলা এবং আমার নতুন কন্যাসন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোর ফাঁকে আমি চিনের ই-কমার্স গুরু জ্যাক মা-র উপর কিছু পড়াশোনাও করেছি। উনি ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে শুরু করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেটে বিয়ার দিয়ে সার্চ করে উনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ওই ঘটনার পরেই নিজের জীবনের উদ্দেশ্য তিনি খুঁজে পান। ওই ব্যর্থতার পরেও ইন্টারনেটের শক্তি কতটা হতে পারে, বুঝেছিলেন মা। চিনে ভাষার অনুবাদ করতে পারে এমন একটা ওয়েব পেজ তিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি ই-মেল পেতে থাকেন। যেখানে তাঁর কাছে প্রচুর তথ্য চেয়ে অনুরোধ আসতে থাকে।

আস্তে আস্তে মা চিনকে ই-কমার্সের দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে ফেললেন। এবং তার পর খুব তাড়াতাড়ি মা, যিনি কি না কলেজ পরীক্ষায় দু’বার ফেল করেন, যাঁকে কি না রাস্তায় ফুল বেচতে হত, আলিবাবা ডট কম নামে এক কোম্পানি খুলে ফেললেন! যে সংস্থাকে কি না এখন চিনের আমাজন ডট কম বলা হয়। কয়েকটা মিডিয়া রিপোর্টের কথা ধরলে, মা-র কোম্পানি খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের শেয়ার বিক্রি করতে চলেছে। যার পর তিনি বিশ্বে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম হয়ে যাবেন, আশা করাই যায়!

মজার হচ্ছে মা-র নিজেরও কিছু ‘টুথব্রাশ মোমেন্ট’ ছিল। যখন তিনি যা চাইতেন, সে সব হত না। উনি চায়না পেজেস নামে একটা বিজনেস ইন্ডেক্স সাইট খুলতে চেয়েছিলেন, পারেননি। বাণিজ্যমন্ত্রকের জন্য ওয়েবসাইট খোলার চেষ্টা করেছিলেন, এবং ব্যর্থ হয়েছিলেন। মিডিয়া ওঁকে ছিটগ্রস্ত বলত। উনি একবার কোম্পানির একটা অনুষ্ঠানে কোমর পর্যন্ত সোনালি চুলের উইগ পরে চলে গিয়েছিলেন। চোখে সানগ্লাস, ঠোঁটে লিপস্টিক। এবং অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া ষোলো হাজার কর্মীর উদ্দেশ্যে প্রথম যে লাইনটা বলেছিলেন সেটা হল, “আপনারা কি আজ রাতের উষ্ণতাটা টের পাচ্ছেন?” উষ্ণতার অংশটা নিয়ে নিশ্চিত নই, তবে মা-র এই পাগলামি আমার বেশ লাগে। নেতাদের মধ্যে কিছু পাগলামি থাকা দরকার যা তাদের কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরোতে সাহায্য করে। সেটা কখনও সোনালি পরচুলা হতে পারে, কখনও লিপস্টিক হতে পারে। কিংবা কখনও কখনও হতে পারে ক্ষতবিক্ষত একটা টুথব্রাশ!

kkr gautam gambhir ipltag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy