শহরের টেনিস কুঁড়িদের সঙ্গে হেনম্যান। রবিবার দক্ষিণ কলকাতা সংসদে। ছবি: উত্পল সরকার
যাঁর ওই রকম ঝলমলে পারিবারিক টেনিস ব্যাকগ্রাউন্ড, তিনি যে নিজের শৃঙ্গ কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন না জানা কথা!
উইম্বলডন দর্শনার্থীদের কাছে ‘হেনম্যান হিল’ একটা অবশ্য দ্রষ্টব্য টেনিস-স্থাপত্য। সাতাত্তর বছর পর প্রথম ব্রিটিশ পুরুষ উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন অ্যান্ডি মারের নামেও কি উইম্বলডনে একটা ‘হিল’ হওয়া উচিত? না কি হেনম্যান হিলের নাম পাল্টে ‘হেনম্যান-মারে হিল’ রাখা উচিত বলে আপনি মনে করেন? একদল মারে-প্রেমী তো ওটাকে ‘উইকিপিডিয়া’য় বেসরকারি ভাবে ‘মারে মাউন্ট’ বলে উল্লেখও করেন!
রবি-বিকেলে দক্ষিণ কলকাতা সংসদের কনফারেন্স রুমে প্রশ্নটার সামনে কে?
স্বয়ং টিম হেনম্যান!
“না, অ্যান্ডির সঙ্গে ওই হিলের নাম আমি ভাগাভাগি করব না,” বলাতেই না থেমে থেকে মারের পূর্বসূরি এক নম্বর ব্রিটিশ টেনিস তারকা এ বার আরও সোজাসাপ্টা “আমি যখন বিবিসিতে উইম্বলডনের ধারাভাষ্য দিই, তখন মাঝেমধ্যে ক্যামেরা হেনম্যান হিলকে ধরে। টিভিতে দেখায়। আর আমি প্রতিবার সেই সময় গর্বের সঙ্গে মাইকে বলি, ওই হিলটা আমার!”
এ রকম গর্বের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ সারা দিন শহরের তারকা টেনিস অতিথির কথাবার্তায়, হাবেভাবে। কখনও সাউথ ক্লাবে ‘রোড টু উইম্বলডন’-এর বালক-বালিকা চ্যাম্পিয়নদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। কখনও দেশপ্রিয় পার্কে আইটিএফ জুনিয়র্স টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করতে গিয়ে।
হাঁটতে শেখামাত্র যাঁকে টেনিস কোর্টে নামিয়ে দিয়েছিলেন জুনিয়র উইম্বলডন খেলা মা জেন হেনম্যান, সেই টিম হেনম্যানের শ্বশুরবাড়ির টেনিস ব্যাকগ্রাউন্ড রীতিমতো ঐতিহাসিক! প্রমাতামহী এলেন ব্রাউন উইম্বলডনে প্রথম মহিলা যিনি ওভারহেড সার্ভ করেছিলেন ১৯০১-সালে। দাদাশ্বশুর এবং দিদাশাশুড়ি হেনরি ও সুসান বিলিংটন পঞ্চাশের দশকে নিয়মিত উইম্বলডনে খেলা ছাড়াও সেন্টার কোর্টে যুগলে মিক্সড ডাবলস খেলেছেন। তাঁদের নাতজামাই যে নিজের উত্তরসূরি যতই ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতুন না কেন, তাঁকে বিশেষ নম্বরটম্বর দেবেন না, সেটাই যেন স্বাভাবিক। টেনিসবিশ্বে মারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে হেনম্যানের স্পষ্ট কথা, “চোট থেকে ফিট হয়ে গিয়েছে ঠিকই। তবে ওর খেলায় নিজস্বতা আর চিন্তার দৈন্যতা প্রকাশ পাচ্ছে ইদানীং। যেটা নিয়ে ওর উচিত কোচ মরেসমোকে প্রশ্ন করা।”
এর পর আর মারের মহিলা কোচ নিয়োগ করা নিয়ে প্রশ্ন করার বোধহয় মানে হয় না। প্রশ্ন উড়ে গেলও না। গেলে হয়তো মারে নিয়ে আরও একটা নেতিবাচক উত্তর পাওয়া যেত হেনম্যানের থেকে! মজা হল, মারে বছর দেড়-দুই আগে মোটামুটি একটা মরসুমে এক জোড়া গ্র্যান্ড স্ল্যাম আর অলিম্পিক সোনা জিতেছেন যেখানে, সেখানে ‘হেনম্যান-হিল’ মানে ১৯৯৮ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে চার বার উইম্বলডন সেমিফাইনালে ওঠা। সব মিলিয়ে হাফডজন গ্র্যান্ড স্ল্যাম শেষ চার। কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব নেই ঝুলিতে। তবু নরেশ কুমার যখন জানতে চাইলেন, মারের কি ওর স্বর্ণ সময়ের মতো আবার স্পেনে গিয়ে ট্রেনিং করা উচিত? হেনম্যান তখন টিপিক্যাল উন্নাসিক ব্রিটিশের ঢঙে জবাব দিলেন, “টেনিসের প্রাথমিক ব্যাপারগুলো কিন্তু মারে বা আমি ব্রিটেনেই শিখেছি। অন্য কোথাও নয়। আর সেগুলোই আমার মতে প্লেয়ারের সাফল্যের আসল রসদ।”
এখন বছরভর এটিপি ট্যুরের পাঁচ শতাংশ টুর্নামেন্টও ঘাসের কোর্টে না হোক, হেনম্যানের ব্যাখ্যা, “গ্রাসকোর্ট আর গ্রাসরুট দু’টো টেনিসেরই ভারতে প্রচুর উন্নতির দরকার। সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মঞ্চে চূড়ান্ত সাফল্য পেতে গেলে। কারণ, খেলাটার প্রাথমিক দিকগুলো খুব কমবয়সে শেখা যেমন উচিত, তেমনই ঘাসের কোর্টে সেই শিক্ষাগুলো বেশি ঠিকঠাক হয়।”
এক পাশে উইম্বলডনের (অর্থাত্, অল ইংল্যান্ড ক্লাবের) হেড কোচ ড্যান লক্সহ্যাম, অন্য পাশে ‘রোড টু উইম্বলডনে’র ডিরেক্টর, প্রাক্তন ব্রিটিশ ডেভিসকাপার পল হাচিন্সকে নিয়ে হেনম্যান আর যা-যা জানিয়ে গেলেন শহরের টেনিসপ্রেমীদের তাঁর দেড় দিনের কলকাতা-সফরে চব্বিশ ঘণ্টা পরেই শুরু অস্ট্রেলীয় ওপেনে তাঁর ফেভারিট জকোভিচ। কিন্তু তাঁর সর্বকালের পছন্দের প্লেয়ার ফেডেরার। এমনও মনে করছেন, নাদালের নাগাড়ে চোট আর অস্ত্রোপচারের ধাক্কায় রাফা-রজার মহাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই ঝনঝনানি আর হয়তো থাকবে না! “আরও অনেক নতুন নতুন টেনিস তারকা খুব দ্রুত ওই সর্বোচ্চ লড়াইয়ের জায়গাটায় পৌঁছে যাচ্ছে। তবে ফেডেরার ফেডেরারই। ওর কোর্ট আর কোর্টের বাইরেও সব ক্যারিশমা বিচার করে ওকেই আমি সেরা টেনিস প্লেয়ার আর মানুষ মনে করি।”
সঙ্গে নিজের সম্পর্কে একটা নতুন খবরও দিয়ে গেলেন চল্লিশের হেনম্যান। “আইপিটিএল পেশাদার টেনিসের অফ সিজনে দারুণ একটা লিগ। আমি দারুণ কৌতূহলী এই টুর্নামেন্ট নিয়ে। কে বলতে পারে, পরের বার আমাকেও আইপিটিএলে দেখবেন না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy