Advertisement
E-Paper

মিস্টার কোলাসো, এ বার কোচিংটা মন দিয়ে করুন

ইস্টবেঙ্গল টিমে এই মুহূর্তে অসংখ্য ‘রোহন রিকেটস’ আছে! সুযোগ পেলেই লাল-হলুদের অন্তত সত্তর ভাগ ফুটবলার আর্মান্দো কোলাসোর বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন ইংল্যান্ডের ওই ফুটবলারের মতোই। ডেম্পোয় আর্মান্দোর দীর্ঘ জমানা শেষ হওয়ার মুখে বোমা ফাটিয়েছিলেন টটেনহ্যাম খেলা ওই অ্যাটাকিং মিডিও। আর্মান্দোর বিরুদ্ধে চমকপ্রদ টুইট করেছিলেন। টাকা নিয়ে টিমে সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ সরাসরি তোলেননি। তবে লিখেছিলেন, ‘মাঠে ভাল খেললেও মাঠের বাইরে আমি সুখী নই।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫০

ইস্টবেঙ্গল টিমে এই মুহূর্তে অসংখ্য ‘রোহন রিকেটস’ আছে!

সুযোগ পেলেই লাল-হলুদের অন্তত সত্তর ভাগ ফুটবলার আর্মান্দো কোলাসোর বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন ইংল্যান্ডের ওই ফুটবলারের মতোই।

ডেম্পোয় আর্মান্দোর দীর্ঘ জমানা শেষ হওয়ার মুখে বোমা ফাটিয়েছিলেন টটেনহ্যাম খেলা ওই অ্যাটাকিং মিডিও। আর্মান্দোর বিরুদ্ধে চমকপ্রদ টুইট করেছিলেন। টাকা নিয়ে টিমে সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ সরাসরি তোলেননি। তবে লিখেছিলেন, ‘মাঠে ভাল খেললেও মাঠের বাইরে আমি সুখী নই। কোচ আর এই ক্লাবে যে আমাকে খেলতে এনেছিল সেই এজেন্ট, দু’জনের জন্য নানা ভাবে হেনস্থা হচ্ছি। মাঠের বাইরে এমন সব দুর্নীতি চলছে যা এই টিমের গোয়ার ছেলেরাও বলতে ভয় পাচ্ছে।”

ডেম্পো কর্পোরেট ক্লাব। হইচই বাধিয়ে কিছু করে না। কোচের গোঁ-তে তখন রিকেটসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কর্তারা। শো-কজ করে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এক বছর পরেই ছাঁটাই হয়ে গিয়েছিলেন পাঁচ বার ক্লাবকে আই লিগ দেওয়া আর্মান্দোও। একটা সংবর্ধনাও জোটেনি ‘সফল’ কোচের কপালে। গোয়ায় কান পাতলেই শোনা যায়, রিকেটসের অভিযোগ পেয়ে গোপন তদন্ত চালিয়ে ডেম্পো কর্তারা নাকি এমন সব তথ্য পেয়েছিলেন যা ভয়াবহ।

ডেম্পো ফুটবল টিমের সর্বেসর্বা হিসাবে ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি করা থেকে চেক দেওয়া সব করতেন আর্মান্দো। টিমে তেরো বছর কোচিং করা লোককে প্রকাশ্যে হেনস্থা করেননি ক্লাবের মালিক শ্রীনিবাস ডেম্পো। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে বিদায় করেছিলেন। যেমন কোচ তাড়ানোর সময় করে থাকে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান।

রিকেটস-প্রসঙ্গ তুললে এখনও প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে পড়েন গোয়া থেকে ‘বিতাড়িত’ হয়ে ইস্টবঙ্গলকে কোচিং করতে আসা আর্মান্দো। বলে দেন, ‘বোগাস কথাবার্তা’। যেমন ফেড কাপে হারের জন্য ‘মিডিয়ার সমালোচনা দায়ী’ বলে ক্লাবের মধ্যেই হাস্যস্পদ হয়েছেন আর্মান্দোর বর্তমান ক্লাবের সচিব। ফেসবুক, টুইটারে লাল-হলুদ সমর্থকরা লিখছেন ‘আমাদের সচিব একটা বোগাস.....।’

ভাইচুং ভুটিয়াকে এক সময় ‘শ্রমিক’ বলেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার। যিনি দু’দিন আগেই বলেছেন, “ফুটবলাররা পেশাদার, টাকা পায়। তাদের আবার ক্লান্তি কীসের?” কল্যাণের কথার এমনিতে কোনও গুরুত্ব নেই। তবে এ হেন সচিব যে আর্মান্দোর পাশে দাঁড়াবেন তাতে আর আশ্চর্য কী! যেটা খারাপ লাগছে কোটি কোটি সমর্থকের আবেগ আর ভালবাসার প্রতিষ্ঠান, শতবর্ষের সামান্য দূরে থাকা ঐতিহ্যশালী ক্লাবটার কথা ভেবে। আসিয়ান, জাতীয় লিগ-সহ অসংখ্য সোনালি গৌরব, পঞ্চপাণ্ডব, জে সি গুহ, পল্টু দাসের মতো কর্মকর্তা, সত্তরের দশকে পিকে-জমানাকত কত মণিমুক্তোর মালিক ইস্টবেঙ্গল ক্লাব!

সেখানে আর্মান্দোর মতো এক জন বেহিসেবি, অভব্য, দু’জন মহিলা সাংবাদিক-সহ একঝাঁক মিডিয়াকে কলতলার ভাষায় গালিগালাজ দেওয়া, কর্মরত ফটোগ্রাফারদের দিকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা এক কোচ সেই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থন পাচ্ছেন দেখে অবাকই লাগছে। লাল-হলুদের ইতিহাসে স্বদেশি-বিদেশি মিলিয়ে একশো জনের উপর কোচ এসেছেন-গিয়েছেন। সাফল্য পেয়েছেন-ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু কেউ এই গোয়ান কোচটির মতো নজিরবিহীন আচরণ করেছেন কি?

কল্যাণ-কোলাসো যুগলবন্দি না হয় ইস্টবেঙ্গলকে কালিমালিপ্ত করেছে। কিন্তু বাকি কর্তারা? ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য-সহ ইস্টবেঙ্গলের রুচিশীল কর্তারা? যাঁরা মিডিয়ার উপর গোয়ায় ‘বক্সার’ আর্মান্দোর আস্ফালন জেনে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিকদের কাছে। কিন্তু তাঁরা এখনও শুধু দুঃখপ্রকাশেই থেমে কেন বোঝা যাচ্ছে না। আর্মান্দো এই ক্লাবে হয়তো আজ আছেন, কাল থাকবেন না। ফেড কাপের পর আই লিগ হয়তো এ বারও পাওয়া যাবে না। এএফসি কাপে হয়তো দল ডুববে। কিন্তু এগুলো তো তাত্‌ক্ষণিক ব্যাপার। কিন্তু যেখানে ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবের সম্মান, ঐতিহ্য জড়িত, সেখানে কীসের আপস?

আর্মান্দো নাকি কর্তাদের জানিয়েছেন, টিমের কিছু ফুটবলার বিশৃঙ্খল। সে জন্যও গোয়ায় দল ডুবেছে। কিন্তু গোয়ায় ফেড কাপ কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা দেখেছেন কোচ নিজেই কতটা ‘বিশৃঙ্খল’ ছিলেন! সুযোগ পেলেই টিমকে ছুটি দিয়েছেন। পরপর ম্যাচ থাকলে ফুটবলারদের ক্লান্তি দূর করতে সুইমিং পুল থেকে জাকুজি বা হালকা ট্রেনিংয়ের যে ফর্মুলা বিশ্বজুড়ে কোচেরা মেনে থাকেন, সেই সব না করিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। ফলে শুয়ে-বসে-ঘুমিয়ে শরীর ভারী হয়ে যাওয়া ফুটবলাররা চেষ্টা করেও লড়াই করতে পারেননি কোনও ম্যাচে। ভাল করে অনুশীলনই তো হত না টিমের। ব্ল্যাকবোর্ডে এঁকে বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে নিজের দলের সঙ্গে যে আলোচনা হয়, ছেলেদের বোঝান কোচেরা তাও আর্মান্দোর ইস্টবেঙ্গলে হয়নি ফেড কাপে।

ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনও বড় মাপের টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে মাত্র একটা জয় ইস্টবেঙ্গলে শেষ কবে হয়েছে? মিডিয়া সমালোচনা করলেই দোষ। স্পোর্টিং ক্লুবের কাছে হারের পর লাল-হলুদের সঙ্গে তিরিশ বছরেরও বেশি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত এক কর্তা বলছিলেন, “৩-১ এগিয়ে হওয়ার পর নিজের ডিফেন্স জমাটের চিন্তা না করে কোনও কোচ উইংয়ে প্লেয়ার পাল্টায়? আমাদের কোচ সেটাও জানে না!”

মুশকিলটা হল, আর্মান্দো তো ডেম্পো, মুম্বই এফসি কোনও টিমের বিরুদ্ধেই সঠিক স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেননি। করবেন কী? অর্ধেক দিন তো তাঁর টিম হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগই ছিল না। সকালে অনুশীলন করিয়েই সটান নিজের বাড়ি। সারা দিনে আর আসেননি। কল্যাণবাবুর মতো কর্তাদের প্রশ্ন করা যেতে পারে, ফেড কাপ চলাকালীন ক্রিসমাস বা নববর্ষের রাতে গোয়ায় আপনার ইস্টবেঙ্গলের টিম হোটেলের অবস্থা কেমন ছিল খোঁজ নিয়েছেন? পল্টু দাস, নিশীথ ঘোষ, দেবব্রত সরকাররা যা করতেন তা করেছেন কি? ফুটবলারদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেছেন? ইস্টবেঙ্গলে গোপন সমীক্ষায় করে দেখা গিয়েছে, গোপন-ভোট নিলে টিমের সত্তর শতাংশ ফুটবলার এই মুহূর্তে কোচের বিপক্ষে ভোট দিতে তৈরি। এতটাই ক্ষিপ্ত তাঁরা কোচের আচরণে।

গোয়ায় থাকা বাংলার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সবাইকে একসঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন আর্মান্দো। প্রকাশ্যেই। তা সত্ত্বেও মিডিয়ার সামান্য একটা অংশ তাঁকে সমর্থন করছেন বা এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছে। আর্মান্দোকে ফোন করে বলছেন, ‘আমরা সঙ্গে আছি।’ যাঁর যেমন রুচি।

কিন্তু মনে রাখতে হবে পারফর্মারকে প্রতিদিন নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। আর্মান্দো দু’বছর মিলিয়ে শুধু কলকাতা লিগ ছাড়া কিছু দিতে পারেননি। তাও গত বার ডার্বির সময় টিম ফেলে রেখে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। চোনা পড়ে গিয়েছিল জয়ে। ট্রেভর মর্গ্যানের মতো কোনও সর্বভারতীয় ট্রফি ইস্টবেঙ্গলকে দিতে পারেননি আর্মান্দো। সামনেই আই লিগ? ফেড কাপে দলকে ডোবানো আর্মান্দো কি পারবেন লাল-হলুদ চাকাটা ঘোরাতে? কঠিন, খুবই কঠিন।

মিস্টার আর্মান্দো, মিডিয়াকে গালিগালাজ না করে নিজের কোচিংয়ে মন দিন। তাতে যদি ইস্টবেঙ্গলের সুসময় ফেরাতে পারেন!

armando colaco coaching ratan chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy