নাইটদের ডেরায় হায়দরাবাদের হানা। স্ত্রী আয়েষা ও ছেলের সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরে শিখর ধবন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
শপিং বেশির ভাগ সময়ই আমার ভাল লাগে না। আমার শপিং লিস্ট বলতে কখনও-সখনও নিজের জন্য পারফিউম, বা চকোলেট। তা-ও শুধু ডিউটি-ফ্রি দোকানে। আর এই কেনাকাটার পিছনে দরকার কম, এয়ারপোর্টে সময় কাটানোর উপায় খোঁজা বেশি। তবে আপনাদের সঙ্গে একটা তথ্য শেয়ার করি: আমিরশাহি থেকে এমন একটা জিনিস কিনেছি, যেটা নিয়ে আমি খুব গর্বিত। জিনিসটা দেখলেই যেন মনটা গলে যায়। বাচ্চাদের দেখলে যেমন একটা ‘গগলি মগলি মাশ’ অনুভূতি হয়, সে রকম। আবু ধাবিতে গোটা টিমের সঙ্গে আমি ফেরারি ওয়ার্ল্ডে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে মেয়ের জন্য একটা বেবি স্লিপিং স্যুট কিনেছি। স্যুটের জন্য যত না কিনেছি, তার চেয়ে বেশি কিনেছি ওটায় লেখা শব্দগুলোর জন্য। স্যুটে লেখা আছে, ‘আই লাভ মাই ড্যাড। বাবাই আমার হিরো।’ আমার আগের কলামগুলো পড়ে থাকলে এত দিনে আপনারা জেনে গিয়েছেন, আমার মধ্যেকার পিতৃসত্ত্বা তার মেয়ের হিরো হওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী।
মেয়ের নাম রেখেছি আজিন। এখন থেকে ওর নাম লেখা বিশেষ কিছু জিনিসের শিকারে নেমে পড়ব। হালফিলে আমার মনের যা অবস্থা, তাতে শপিং মলে আমাকে খুব বেশি দেখা গেলে অবাক হবেন না। ও হ্যাঁ, দিনদুয়েক আগে ওর নামটা টুইট করে প্রচুর শুভেচ্ছা পেয়েছি। অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন, নামটার মানে কী? আমি যতটুকু বুঝি, তাতে আরবি ভাষায় ‘আজিন’ মানে সবচেয়ে সুন্দর। বলে রাখি, নামটা কিন্তু আমার পছন্দ করা। বাকিরা প্রথমে খানিকটা অনিচ্ছা দেখালেও নামটা মেনে নিয়েছে। তবে টুইটারে কয়েকটা বোকা-বোকা মন্তব্য দেখে খুব অবাক লাগল। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেছেন, মেয়ের জন্য কেন আমরা মুসলিম নাম বাছলাম। সত্যি, এ রকম লোকজনের সঙ্কীর্ণ মনোভাব দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। মনে হয় ওদের বিবর্তনের কোনও ইচ্ছেই নেই। আমার কাছে নামের কোনও ধর্ম নেই।
‘ক্রিকেট একটা ধর্ম’ কলকাতার মানুষই কথাটার শ্রেষ্ঠ প্রতীক। এখানে মানুষ সত্যিই খেলাধুলো ভালবাসে। আরও এক বার মায়ের উষ্ণতায় কেকেআরকে জড়িয়ে ধরেছে কলকাতা। আর আমরাও বাধ্য ছেলের মতো তার জবাবে চেন্নাই সুপার কিংস আর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দিলাম। রবিন উথাপ্পা আবার দারুণ খেলল। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারটা সত্যিই ওর প্রাপ্য। আমার কাছে অবশ্য ম্যাচের রং পাল্টে দেওয়ার নায়ক সাকিব আল হাসান। ওর ব্যাটিং আক্রমণই কিন্তু বিপক্ষকে বাইরে যাওয়ার দরজাটা দেখিয়ে দিল। ওর বোলিংয়েও অর্থনীতিবিদের বুদ্ধি। মনে হয় ওর নিচু, রাউন্ড-আর্ম অ্যাকশন ব্যাটসম্যানকে ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে। খবরের কাগজ আর নিউজ চ্যানেলের স্পোর্টস শোগুলোয় যে সাকিবকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, দেখে খুব ভাল লাগল।
স্পোর্টস চ্যানেলের পাশাপাশি টিভিতে আরও একটা জিনিস দেখছিলাম। দেশের হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে সংসদ ভবনে ঢোকার সময় মাথা নত করলেন। সত্যি বলতে কী, ওটা দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আপনারা বলতে পারেন ওটা এক জন মানুষের আবেগ প্রকাশ করার ধরনমাত্র। কিন্তু এটার একটা নিষ্পাপ, প্রত্যক্ষ দিকও আছে। আসুন আমরা সবাই মিলে বিশ্বাস করি, এই লোকটা সত্যি সত্যিই সংসদ ভবনকে চূড়ান্ত সম্মান করে। আসুন বিশ্বাস করি লোকটা সত্যি সত্যিই আমার-আপনার জীবনে শুভ বদল আনতে চায়। বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী পদটাকে এ সেবার সুযোগ হিসেবে দেখছে, লুটপাটের নয়। বিশ্বাস করি, এই লোকটার নজর ধর্ম বা সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে। আর বিশ্বাস করি, তার মেয়ের জন্য হিন্দু পিতার মুসলমান নাম বাছা নিয়ে এই লোকটা বিশেষ মাথা ঘামাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy