Advertisement
E-Paper

যোগ্য পুরোহিতের সঙ্গে দুর্ধর্ষ টিমেই জালে নাদাল-সেরেনারা

বর্তমান-প্রাক্তন মিলিয়ে ২১ জন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। ১৪ জন বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর প্লেয়ার। পুরুষদের বর্তমান এক ও দু’নম্বর তারকা। মেয়েদের প্রথম চারের মধ্যে তিন জন। আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার টেনিস লিগের উদ্বোধনী সংস্করণেই এ রকম ব্লকবাস্টার খেলোয়াড় তালিকা আইপিটিএলের উদ্যোক্তা মহেশ ভূপতি কী ভাবে গড়ে ফেললেন আপাতত সেটাই টেনিসমহলে প্রধান চর্চিত বিষয়। রবিবার হোটেল ‘ওবেরয় দুবাই’-এর রুদ্ধদ্বার কক্ষে নিলাম পর্ব হওয়ায় জল্পনা আরও বেড়েছে।

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৮:১০
নিউ ইয়র্কের চ্যারিটি অনুষ্ঠানে আড্ডায় মারে ও জকোভিচ। আইপিটিএল নিলামের পরের দিন।

নিউ ইয়র্কের চ্যারিটি অনুষ্ঠানে আড্ডায় মারে ও জকোভিচ। আইপিটিএল নিলামের পরের দিন।

বর্তমান-প্রাক্তন মিলিয়ে ২১ জন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। ১৪ জন বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর প্লেয়ার। পুরুষদের বর্তমান এক ও দু’নম্বর তারকা। মেয়েদের প্রথম চারের মধ্যে তিন জন। আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার টেনিস লিগের উদ্বোধনী সংস্করণেই এ রকম ব্লকবাস্টার খেলোয়াড় তালিকা আইপিটিএলের উদ্যোক্তা মহেশ ভূপতি কী ভাবে গড়ে ফেললেন আপাতত সেটাই টেনিসমহলে প্রধান চর্চিত বিষয়।

রবিবার হোটেল ‘ওবেরয় দুবাই’-এর রুদ্ধদ্বার কক্ষে নিলাম পর্ব হওয়ায় জল্পনা আরও বেড়েছে। চার ফ্র্যাঞ্চাইজি মুম্বই, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের দল তৈরি হয়ে যাওয়ার পর মহেশের পড়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির বাইরে আর কোনও তথ্য প্রকাশ্যে নেই। চার দল মিলে ২৮ জন টেনিস তারকা কিনতে মোট ২ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ডলার খরচ হয়েছে জানা যাচ্ছে। কিন্তু নাদাল না, জকোভিচ, সেরেনা না, আজারেঙ্কা কোন পুরুষ বা মেয়ে ‘মার্কি’ প্লেয়ার সর্বোচ্চ দর পেলেন সেটা জানা যায়নি। সোমবার দুবাইয়ে যোগাযোগ করে জানা গেল, নাদাল-জকোভিচ-মারে-আজারেঙ্কা-সেরেনা, পাঁচ টেনিস মহারথীকে আইপিটিএলে খেলাতে প্রত্যেককে কম-বেশি কুড়ি লাখ ডলার করে দিতে হচ্ছে। এঁরা শুধু হোম ম্যাচেই খেলবেন। সেটাও ক’টা ম্যাচ নিজেরাই ঠিক করবেন। অন্য তিন শহরে ট্র্যাভেল করবেন না।

মহেশ ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বমানের টেনিস টুর্নামেন্ট হয় না এবং সেটাই এশিয়ার এই সুবিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে টেনিসের মানোন্নয়ন না ঘটার অন্যতম কারণ বলে বহু দিন যাবত টেনিস বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ ছিল। আইপিটিএল সেই অভিযোগ-সমালোচনার জবাব। আর সেই ‘জবাব’ দিতে আইপিটিএলের প্রধান পুরোহিত পেয়ে গিয়েছেন একটা জবরদস্ত টিম-ও। যে টিমওয়ার্ক-ই নাদাল, সেরেনা, সাম্প্রাসদের মতো প্রবাদপ্রতিম টেনিস প্লেয়ারদের প্রথম আইপিটিএলেই খেলতে রাজি করাতে পেরেছে। আইপিটিএলের এক সূত্রের খবর, মহেশ পেশাদার টেনিস লিগের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন টেনিস বিশ্বের শীর্ষ কয়েক জন প্লেয়ারের ব্যক্তিগত ম্যানেজার, এজেন্ট, কোচেরা। যেমন মহেশের আইপিটিএলের সিইও হলেন মর্গ্যান মেনাহেম, যিনি সঙ্গার ম্যানেজার। মিডিয়া মুখপাত্র বেনিতো বার্বাডিলো, যিনি নাদালের মিডিয়া ম্যানেজার। বরিস বেকার, যিনি বর্তমানে জকোভিচের কোচ। জাস্টিন গিমেলস্টব, যিনি এটিপি বোর্ডে প্লেয়ারদের শীর্ষ প্রতিনিধি।

আইপিটিএল নিয়ে টেনিসমহলে অনেকের এ-ও প্রশ্ন যে, এটা কি নিছক টেনিস-উৎসবে পর্যবসিত হবে, না কি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টুর্নামেন্টের স্বাদ থাকবে? আইপিটিএল যে এটিপি বা ডব্লিউটিএ ট্যুর টুর্নামেন্ট বা ডেভিস কাপের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক হবে না সেটা বোধহয় সংগঠকেরাও জানেন। কিন্তু এক সেটের ম্যাচগুলোয় অন্য ধরনের উত্তেজনা থাকবে বলে মহেশ ঘনিষ্ঠমহলে আশা প্রকাশ করেছেন। আইপিটিএল যে অনেকটাই বিলি জিন কিংয়ের ওয়ার্ল্ড টিম টেনিস থেকে উৎসারিত সেটাও মহেশ স্বীকার করেছেন। তবে সঙ্গে বাড়তি অভিনবত্ব আনার চেষ্টা হয়েছে।

অন্য কোর্টে। হলিউডে অস্কার-এর পার্টিতে শুভ্র গাউনে চমক সেরেনার।

যেমন, ডব্লিউটিটি-র মতো আইপিটিএলেও প্রতিটা ম্যাচ এক সেটের। হোম টিমের অধিকার থাকবে খেলার এক ঘণ্টা আগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে, পুরুষ ও মহিলা সিঙ্গলস, ডাবলস, মিক্সড ডাবলস কোন ক্রমপর্যায়ে খেলা হবে। ম্যাচ ও টাইব্রেকেও ডিউস পয়েন্টে (৪০-৪০) অ্যাডভান্টেজ রুল থাকবে না। যে প্রথম পয়েন্ট জিতবে, সে-ই জয়ী। এ ছাড়াও আইপিটিএলে কোনও ম্যাচে ৫-৫ গেমের পরেই টাইব্রেক বলবত হবে। লেজেন্ড সিঙ্গলস একমাত্র তখনই খেলা হবে যদি চার ম্যাচের পর স্কোর লাইন ২-২ থাকে। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যের, চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষিত হবে, কোন দল ক’টা ম্যাচ জিতেছে তার ভিত্তিতে নয়। বরং কোন দল ক’টা গেম জিতেছে তার ভিত্তিতে। ধরা যাক, ‘এ’ এবং ‘বি’ দলের ম্যাচ ২-২ থাকলেও দেখা গেল এক সেটের চারটি ম্যাচের ফল ৬-২, ২-৬, ৬-৪, ৩-৬। অর্থাৎ ‘এ’ দল জিতেছে ১৭ গেম এবং ‘বি’ দল জিতেছে ১৮ গেম, সে ক্ষেত্রে ‘বি’ দল জয়ী হবে। সব মিলিয়ে তাই যথেষ্ট লড়াই ও উত্তেজনা থাকার সম্ভাবনা দেখছেন আইপিটিএলের সংগঠকেরা। বলা হচ্ছে, তিন ঘণ্টার জমজমাট মেগা টেনিস শো। যার চার শহর ফ্র্যাঞ্চাইজি নিজেদের দলের নাম, জার্সির রং ও লোগো এ বার খুব শিগগির প্রকাশ করবে বলে খবর।

একমাত্র ২-২ ম্যাচে দু’দলের জেতা গেমের সংখ্যাও যদি সমান থাকে, একমাত্র তখনই পঞ্চম ম্যাচ অর্থাৎ লেজেন্ড সিঙ্গলস হবে। ফলে ইভানিসেভিচ, র‌্যাফটার, ময়াদের খেলা দেখার সুযোগ খুবই কম। এবং সে জন্য বর্ষীয়ান সাম্প্রাস, আগাসিদের লেজেন্ড তালিকার বদলে আইকন প্লেয়ারদের তালিকায় থাকতে রাজি করিয়েছেন মহেশ অ্যান্ড কোং। যাতে এই দুই প্রাক্তন চ্যাম্পিয়নের খেলা মুম্বই, সিঙ্গাপুরবাসীরা বেশি দেখতে পান। সত্যি বলতে কী, এটিপি ট্যুরের অন্তর্গত দুবাই বা ব্যাঙ্কক ওপেনে বিশ্বের শীর্ষ প্লেয়াররা খেলে থাকেন। ভারত এবং সিঙ্গাপুরের সেই সুযোগ নেই। ভারতের একমাত্র এটিপি ট্যুর (তা-ও ২৫০ পয়েন্টের) টুনার্মেন্ট চেন্নাই ওপেনে নাদাল একবারই খেলেছেন ২০০৮-এ।

বোপান্না হয়তো সে জন্যই নিলামের পরে দীর্ঘ টুইট করেছেন। “পারলে আমি সশরীরে আইপিটিএলের নিলামে থেকে নিজেকে বিক্রি করতাম। এটা একটা অসাধারণ ভাবনা। বছরভর পেশাদার ট্যুরে বিশ্ব জুড়ে সব টপ প্লেয়ার খেলে বেড়ায় ঠিকই। কিন্তু টেনিস এতটাই ব্যক্তিগত খেলা যে, লকার রুমের বাইরে কোথাও সবাই মিলে আড্ডা মারার সুযোগ নেই। আইপিটিএলের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য, প্লেয়ারদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করবে। আমি তো এখনই ভেবে উত্তেজিত যে, পুরো এক মাস বিশ্বের বর্তমান এক নম্বর, প্রাক্তন এক নম্বর আর সর্বকালের এক প্রবাদপ্রতিম টেনিস প্লেয়ারের সঙ্গে লকাররুম, হোটেল, ব্রেকফাস্ট টেবিল ‘শেয়ার’ করতে পারব। মানে আমি মুম্বই টিমে আমার তিন টিমমেট নাদাল, ইভানোভিচ আর সাম্প্রাসের কথা বলছি।” রবিবার রাতে নিলামের পরেই ব্যাঙ্কক দলে তাঁর সতীর্থ সঙ্গাকে টুইট করেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালিস্ট বেলজিয়ান মেয়ে ফ্লিপকেন্স“হাই! টিম-বন্ধু, দু’হাজার তিনের যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের দুই জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন তা হলে একসঙ্গে সময় কাটাবে, খেলবে! তাই না?”

আর স্বয়ং মহেশ? নিলাম-পর্ব প্রসঙ্গে তাঁর এক লাইনের টুইটেই সব স্পষ্ট—“গেম সেট অ্যান্ড ম্যাচ ফর আইপিটিএল!”

ছবি: এএফপি।

iptl tennis supriya mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy