Advertisement
E-Paper

শামিদের বাড়তি বারুদ জোগাচ্ছে ধোনির আগুনে কাপ-স্ট্র্যাটেজি

যে বোলিং নিয়ে বিশ্বকাপের আগে দেশ জুড়ে গেল-গেল রব পড়ে গিয়েছিল, সেই বোলিংই আরও একটা ম্যাচ জিতিয়ে দিল ভারতকে। শুক্রবার মহম্মদ শামিদের বোলিং দেখার পরে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, কী এমন হল ভারতীয় বোলারদের যে রাতারাতি ওরা এতটা পাল্টে গেল? এই তো বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার মাঠেই ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা জঘন্য বল করছিল ভারত।

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৮

যে বোলিং নিয়ে বিশ্বকাপের আগে দেশ জুড়ে গেল-গেল রব পড়ে গিয়েছিল, সেই বোলিংই আরও একটা ম্যাচ জিতিয়ে দিল ভারতকে। শুক্রবার মহম্মদ শামিদের বোলিং দেখার পরে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, কী এমন হল ভারতীয় বোলারদের যে রাতারাতি ওরা এতটা পাল্টে গেল? এই তো বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার মাঠেই ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা জঘন্য বল করছিল ভারত।

বোলাররা রাতারাতি কেউ পাল্টায়নি। ত্রিদেশীয় সিরিজে যারা বল করছিল, তারাই বিশ্বকাপে বল করছে। যেটা বদলেছে, সেটা ওদের মানসিকতা। প্ল্যানিং।

বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলিং নিয়ে কিছু বলার আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের কথাটা বলে নিই। ওই সিরিজে ভারতের বোলিং বিপর্যয়ের খুব স্পষ্ট দুটো কারণ আমি পাচ্ছি। দুটো কারণই স্ট্র্যাটেজিক। এক, ওই সিরিজে নিজের বোলারদের নিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে নিচ্ছিল ধোনি। দেখে নিচ্ছিল, ওর হাতে কী কী বিকল্প আছে। আর দুই, নিজের হাতের তাস বিপক্ষদের দেখাতে চায়নি এমএস। ওই সিরিজটা যে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট, সেটা সবাই জানত। আর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এ বারের বিশ্বকাপে কী স্ট্র্যাটেজি হতে পারে, সেটা জানতে বাকি টিমগুলোর চোখ যে ত্রিদেশীয় সিরিজে থাকবে, সেটাও খুব স্বাভাবিক। তাই নিজের শক্তি আগেভাগে দেখিয়ে দিতে চায়নি ধোনি। যাতে বিশ্বকাপের আগে কেউ ভারতীয় বোলিং নিয়ে প্ল্যানিং না করে ফেলতে পারে। কেউ যাতে আগাম না বুঝে যায়, ভারতীয়দের বোলিং প্ল্যান ঠিক কী হতে যাচ্ছে। যার জন্য স্টুয়ার্ট বিনিকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানোর মতো স্ট্র্যাটেজি নিয়ে গিয়েছে ধোনি।

এ বার আসি বিশ্বকাপের কথায়। এখানে ভারতীয় বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় আর তাত্‌পর্যপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে একদম ঠিকঠাক জায়গায় টানা বলটা রেখে যাওয়া। ত্রিদেশীয় সিরিজে যেটা ওদের করতে দেখিনি। তখন ওরা যা করছিল সেটা হল, ওভারে চারটে বল ভাল করে দুটো লুজ বল দেওয়া। যে দুটো বলে সহজেই বাউন্ডারি হয়ে যাচ্ছিল আর তাই বিপক্ষের উপর টানা চাপ কখনওই রাখা যাচ্ছিল না। এখন সে রোগটা প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত চারটে ম্যাচেই ভারতীয়রা প্রচণ্ড ডিসিপ্লিন্‌ড ভাবে বল করেছে।

আমি নিজে বিশ্বকাপে কমেন্ট্রি করছি বলে নানা রকম স্ট্যাটস চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। যেমন ধরুন পিচ ম্যাপ। যেটা দেখলেই বোঝা যায়, একটা জায়গায় টানা বল রেখে যাচ্ছে মোহিত শর্মা-শামি-উমেশ যাদবরা। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে যেটা একদম বেসিক একটা ব্যাপার। এত বড় মঞ্চে ভাল বল করতে গেলে প্রতিভা তো থাকতেই হবে। কিন্তু তার সঙ্গে ওভারের ছ’টা বল এই এক জায়গায় ফেলাটাও প্রচণ্ড জরুরি। সেটা না করতে পারলে প্রতিভা দিয়ে বেশি দূর কিন্তু টানা যাবে না।

ম্যাচের পর ধোনি যে কথাগুলো বলল, তাতে ওর টিমের মানসিকতা দারুণ বোঝা যায়। ওর নেতৃত্বের দর্শনও। ধোনি তো বলেই দিল, শর্ট লেংথ বল করার স্ট্র্যাটেজিটা আজ নেওয়ার কারণ পারথের বাড়তি বাউন্স আর বড় বাউন্ডারি। সত্যি, কোনও ব্যাটসম্যানই ব্যাকফুটে গিয়ে শর্ট পিচ বল খেলতে চাইবে না। আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। এখন নতুন ওয়ান ডে নিয়মে ওভারপিছু দুটো করে বাউন্সার দেওয়া যায়। ভারতীয় বোলাররা কিন্তু এই নিয়মের পুরো ফায়দা তুলছে। অন্য টিমগুলোকে সে ভাবে এটা কাজে লাগাতে দেখিনি।

এখানে শামির কথা বলতেই হয়। ও যে ভাবে বল করছে, দুর্দান্ত বললে কিছুই বলা হয় না। কী সুন্দর রান আপ নিচ্ছে ছেলেটা! ইংল্যান্ড সিরিজের পর শামি যা বল করছিল আর এখন যা করছে, অবিশ্বাস্য। আমার এখনও মনে আছে, বছর তিনেক আগে কোন একটা ম্যাচে ওর রান আপ দেখে কেন জানি না সন্দেহ হচ্ছিল। ম্যাচের পর শামিকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম, কী রে তুই কি পায়ে চোট নিয়ে খেলছিস? ও বলল, না আমার রান আপটাই এ রকম। সেই রান আপ কিন্তু পাল্টে ফেলেছে শামি। একটা পায়ের উপর বেশি জোর আর দিচ্ছে না। আজ তো বললও, বল করার সময় পদক্ষেপের দূরত্বটা কমিয়ে ফেলেছে। যার জন্য ওর গতি বেড়েছে, ছন্দটাও পেয়েছে।

শামির প্রতিভা নিয়ে আমার কখনওই সন্দেহ ছিল না। একটা জিনিস নিয়ে শুধু প্রশ্ন ছিল— ও যথেষ্ট খাটছে কি না? কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল নিয়ে পড়ে না থাকলে নিখুঁত লাইন-লেংথটা আসবে না। শামির বোলিং দেখে মনে হচ্ছে সেটা ও করছে। শুধু শামি কেন, ভারতের বাকি বোলাররাও করছে। কয়েক দিন আগে লিখেছিলাম, বিশ্বকাপে দুটো ম্যাচের মধ্যিখানের সময়টা ঠিকঠাক কাজে লাগানো খুব জরুরি। ম্যাচের পরের দিনটা ছুটি কাটালাম, কিন্তু সে দিন সন্ধে বা পরের দিন সকালে একটা মিটিং করা উচিত বোলারদের। পরের ম্যাচে বিপক্ষ কারা, তাদের বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি কী হবে, সেগুলো ঠিক করে ফেলতে হবে ওই মিটিংয়ে। যাতে নেট সেশনে পরের তিন-চার দিন সময় নষ্ট না করে সেই প্ল্যান নিয়ে লেগে থাকা যায়। আজ প্ল্যান করলাম আর পরশু ম্যাচ খেলতে নেমে পড়লাম, তাতে কিন্তু কোনও লাভ হয় না। আর নেটে একটা জিনিস ভাল করতে পারলে সেই আত্মবিশ্বাসটা ম্যাচেও থাকবে।

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

ভারতীয় বোলারদের দেখে যেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সেটা হল, ওরা সবাই উইকেট নেওয়ার প্ল্যান নিয়ে বল করছে। রান আটকানোটা ওদের চিন্তাতেই নেই। আর সেই ব্যাপারটা ওদের মজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট আর ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে। যখন একজন বোলার দেখছে ক্যাপ্টেন তার জন্য দুটো স্লিপ আর একটা শর্ট লেগ রেখেছে, তখন সে বুঝে যাচ্ছে যে, ক্যাপ্টেন চাইছে আমি উইকেট নিই। আবার যখন স্লিপ থাকে না, পয়েন্ট বা কভারে ফিল্ডার থাকে, তখন বোলার বোঝে যে রান আটকাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে তার বলের লেংথ পাল্টে যায়, তার শরীরী ভাষা পাল্টে যায়।

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এমএস যা সিগন্যাল দিচ্ছে, তার পুরোটাই কিন্তু অ্যাটাকিং। এই যে ম্যাচের পরে ও বলল শর্ট বোলিংয়ের প্ল্যানটা কাজে লাগাতে গিয়ে কয়েকটা ওয়াইড হয়ে গেলেও তাতে কোনও সমস্যা নেই, বাড়তি রান হলে হবে, সেটা শুনে তো বোলারদের মানসিকতা পাল্টে যেতে বাধ্য। এ রকম ক্যাপ্টেন থাকলে তো বোলাররা আগুন ঝরাবেই!

deep dasgupta world cup 2015
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy