Advertisement
E-Paper

সমর্পণকারী ইতিহাস আর ফর্ম নিয়েও ধোনির কাঁটা কুড়ি ওভারের মহা অনিশ্চয়তা

ধানমন্ডির বিশ্ববিখ্যাত বত্রিশ নম্বর বাড়ি থেকে হেঁটে চার মিনিট। ‘শিল্পাঙ্গন’ নামক আর্ট গ্যালারিটা শেখ মুজিবের বাড়ির মোড়টা ছাড়িয়ে সামনে বাঁ দিকে ঘুরলেই। আর তার ওপর জ্বলজ্বল করে শোভা পাচ্ছেন তিনি, সুচিত্রা সেন। রোববার তাঁর জন্মদিন ঘিরে জন্মস্থান পাবনা থেকে ঢাকা, যেন একই সঙ্গে উদ্বেলিত। পাবনায় সুচিত্রার পুরনো স্কুলে বাচ্চাদের কেক কাটা দিয়ে শুরু। তার পর বিকেলে শিল্পাঙ্গনে বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা তাঁর মোট বাষট্টি পেন্টিংয়ের উদ্বোধন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৩
আজ ক্রিকেটে গোল করার যুদ্ধ। ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে। ছবি: এএফপি

আজ ক্রিকেটে গোল করার যুদ্ধ। ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে। ছবি: এএফপি

ধানমন্ডির বিশ্ববিখ্যাত বত্রিশ নম্বর বাড়ি থেকে হেঁটে চার মিনিট। ‘শিল্পাঙ্গন’ নামক আর্ট গ্যালারিটা শেখ মুজিবের বাড়ির মোড়টা ছাড়িয়ে সামনে বাঁ দিকে ঘুরলেই। আর তার ওপর জ্বলজ্বল করে শোভা পাচ্ছেন তিনি, সুচিত্রা সেন।

রোববার তাঁর জন্মদিন ঘিরে জন্মস্থান পাবনা থেকে ঢাকা, যেন একই সঙ্গে উদ্বেলিত। পাবনায় সুচিত্রার পুরনো স্কুলে বাচ্চাদের কেক কাটা দিয়ে শুরু। তার পর বিকেলে শিল্পাঙ্গনে বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা তাঁর মোট বাষট্টি পেন্টিংয়ের উদ্বোধন। ও পারের সংস্কৃতির শিকড় পদ্মার এ পারেও খুব গভীরে যে! ঢাকার রাজপথে কালকেও আর পাঁচ দিনের মতো দেশ-সানন্দা অঢেল বিক্রি হবে। তারা টিভি-তে ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো গিলবে বাংলাদেশবাসী। ইউটিউবে যাবে সৌরভের ‘দাদাগিরি’র গুগলিগুলো আবার শোনার জন্য। সীমান্তের দু’পারের সাংস্কৃতিক সখ্য যে অটুট, তার একাধিক নমুনা। কিন্তু সেই একই জনগণ রোববার মিরপুর ফাইনালে ভারতকে সমর্থন করবে কি?

উত্তর, না। ফরাক্কার পানি বণ্টনে পশ্চিমবঙ্গীয় মনোভাব এবং আইসিসি নিয়ে শ্রীনিবাসনের একগুঁয়েমি গরিষ্ঠ বাংলাদেশী ক্রিকেট দর্শককে সম্পূর্ণ ভারত-বিরোধী করে তুলেছে। গ্যালারিতে তেরঙ্গা ঝান্ডা উড়বে ঠিকই। লোকে হাততালিও দেবে। কিন্তু তাদের ইতিবৃত্তান্ত কী, তারা ক’জন কট্টর ভারত সমর্থক, তা ট্রফি কার হাতে উঠবে-র মতোই চিত্তাকর্ষক কৌতূহল হতে পারে। শুনছিলাম ভারতীয় ক্রিকেটাররাও কেউ কেউ কাল রাত্তিরে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আবেগ ভরা সমর্থন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন।

পাশাপাশি এটাও নিশ্চয়ই তাঁদের মনে হয়ে থাকবে, কিছু দর্শক বিপক্ষে থাকলেও বা কী, যতক্ষণ উইকেটটা আমাদের ঘরের মতো রয়েছে? শ্রীলঙ্কা দেশের মাঠে যে সারফেসে খেলে প্রায় দুর্ভেদ্য। সেটা আরও আঠালো ধরনের উইকেট। মিরপুর পিচ অনেক বেশি করে ভারত-মার্কা।

ফর্মও ভারতের দিকে পরিষ্কার ঝুঁকে। একমাত্র টিম যারা একটাও ম্যাচ হারেনি। টুর্নামেন্টের সেরা স্পিনার তাদের। সেরা ব্যাটসম্যান তাদের। টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারও তাদের থেকে নির্বাচিত হওয়া উচিত— সে ফাইনাল হারুক বা জিতুক।

ইতিহাস— তাও তো প্রবল ভাবে ভারতে সমর্পণকারী। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যদি অর্জুনের ভাগ্য নিয়ে জন্মে থাকেন যে কখনও আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারেননি। তা হলে শ্রীলঙ্কা হল মার্কামারা সূতপুত্র। সাউথ আফ্রিকা যদি ‘চোকার্স’ হয়, তা হলে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ‘গ্যালান্ট ফাইনাল লুজার্স’।

রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ যেমন মধ্যিখানে অনেকটা বছর গোটা দেশের রাজনীতি আর স্থৈর্যকে টুকরো টুকরো করে কেটেছে। তেমনই দ্বীপভূমির ক্রিকেটকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে গিয়েছে বড় ফাইনাল হারার চার-চারটে দগদগে ক্ষত। দু’হাজার সাত এবং এগারোর বিশ্বকাপ ফাইনাল। দু’হাজার নয় এবং বারোর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল।

অদৃষ্টের এমনই খেয়ালখুশি এর দু’টোতে ক্যাপ্টেন ছিলেন মাহেলা জয়বর্ধনে। দু’টোতে কুমার সঙ্গকারা।

কর্ণের নিয়তি থেকে অর্জুনে আবাহনের একটা চূড়ান্ত রোম্যান্টিক সুযোগ রোববারের মিরপুর এঁদের সামনে ফেলছে। শ্রীলঙ্কান সমর্থকেরা কেউ কেউ বলছেন, ট্রফিটা এলে তাঁদের ডাবল হয়। কারণ এক মাস আগেই এই মিরপুর তাঁদের এশিয়া কাপ দিয়েছে। সেই ফাইনালে তাঁদের মোটেও গ্যালান্ট লুজারের তকমা পরতে হয়নি। এখানে প্র্যাকটিস ম্যাচে ধোনি সমেত তারা ভারতকে হারিয়েছিল। ফর্ম আর ইতিহাস যদি বিরুদ্ধ হয়, সঙ্গী হিসেবে তো কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের মহা অনিশ্চয়তা থাকল! থাকল আরও একটা ক্রিকেটীয় অঙ্ক। ‘ল অফ অ্যাভারেজ’ কি একটা সময় ভারতের জন্য কাজ করতে বাধ্য নয়?

ক্রিকেটকে এত দিয়েছেন সঙ্গকারা আর জয়বর্ধনে। বিশেষ করে সঙ্গকারা। অস্ট্রেলিয়াতে তাঁর গড় ৬০.৩৩। নিউজিল্যান্ডে ৬৪.৮০। সব মিলিয়ে টেস্ট গড় ৫৮। যা তেন্ডুলকরের চেয়েও বেশি। অথচ শ্রীলঙ্কার বাইরে যথেষ্ট সম্মান পাননি। ক্রিকেটদেবতা আবার খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন বিশ্বকাপ বিজিত শ্রীলঙ্কা অধিনায়ককে?

ঠিক তেমনই একটা প্রশ্ন, বিরাট কোহলির বীররস কেন স্বীকৃত হবে না রাজসভায়? শনিবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে মনে হল নির্ভেজাল বিরাট-ফ্যান হয়ে গিয়েছেন। বললেন, “কী কমিটমেন্ট টিমের প্রতি। ধোনি যখন উইনিং হিটটা করল না, কী ভাবে তাকাল বিরাট! এটা কী করলে তুমি! আগে টিম জিতুক, আমি পরে।” সচিনের এক বন্ধু বলছিলেন, তেন্ডুলকরও নাকি মজে রয়েছেন হালফিল বিরাটে। কাল মালিঙ্গার টস করতে যাওয়া ছাড়াও প্রধান দায়িত্ব থাকবে বিরাটের বিরুদ্ধে অতীত হারের ক্ষত শুকোনো। ধোনিও খুব ভাল খেলেন মালিঙ্গাকে। ভারত অধিনায়ক এই পর্যন্ত সাকুল্যে ৫০ রানও করেননি। কিন্তু তাঁর যা ভাগ্যরেখা, কে বলতে পারে ফাইনালে একটা বিশেষ জায়গা আগাম তৈরি হয়ে নেই!

এমনিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের নিষ্পত্তির সময় হিসেবে ধরা হয় টসের ঠিক প্রাক্ মুহূর্তটা— কোন টিম ঠিক সেই সময় কী অনুভব করছে? সুরেশ রায়নাও এ দিন টসের আগের সেই অনুভূতিটার কথা বলছিলেন। তখনই নাকি প্লেয়াররা আগাম আন্দাজ পান, মামলা আজ কোন দিকে যেতে পারে?

টসের আগের দিনও নিশ্চয়ই প্রাক্-প্রাক্ অনুভূতি বলে কিছু থাকে। মিডিয়ার হয়। প্রাক্তন প্লেয়ারদের হয়। ক্রিকেট-উৎসাহীদের হয়। সেই দিগ্নির্দেশ পরিষ্কারই বিরাট-রাজের সাম্রাজ্য বিস্তারের দিকে। কর্ণের যদি হস্তিনাপুরে অভিষেক হয় সেটা হবে অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। বাংলায় স্রেফ অঘটন!

goutam bhattacharya icc t20 world cup MS Dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy