Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হিউজের শব্দটাও এমনই ছিল না! শিউরে উঠল মাঠ

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মাঠের ইতিহাসে এ রকম ছবি আর কখনও দেখা গেছে কি না সন্দেহ! বিষ্যুদবার বারবেলার অ্যাডিলেড ওভাল যা দেখল। দেখল বিপক্ষ ব্যাটসম্যান বাউন্সারে আহত হওয়ায় বোলার-সহ গোটা অস্ট্রেলিয়া টিম দৌড়ে এসেছে তাঁর কাছে। বোলার মিচেল জনসন সবার আগে।

কোহলির হেলমেটে জনসনের বাউন্সার। ছবি: গেটি ইমেজেস

কোহলির হেলমেটে জনসনের বাউন্সার। ছবি: গেটি ইমেজেস

গৌতম ভট্টাচার্য
অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মাঠের ইতিহাসে এ রকম ছবি আর কখনও দেখা গেছে কি না সন্দেহ! বিষ্যুদবার বারবেলার অ্যাডিলেড ওভাল যা দেখল।

দেখল বিপক্ষ ব্যাটসম্যান বাউন্সারে আহত হওয়ায় বোলার-সহ গোটা অস্ট্রেলিয়া টিম দৌড়ে এসেছে তাঁর কাছে। বোলার মিচেল জনসন সবার আগে। গভীর অনুতাপের ছাপ তাঁর চোখে-মুখে। অতীতে এই সব দৃশ্যে অজি বোলাররা চিরকাল নির্বিকার থেকেছে। এমসিজি-তে ব্র্যাড উইলিয়ামসের বাউন্সার রগের উপরে লেগে হেলমেট ভেঙে গিয়েছে সৌরভের। বোলার দেখতেও আসেননি। তারও অনেক বছর আগে প্যাস্কোর বল লেগে লুটিয়ে পড়েছেন হেলমেটহীন সন্দীপ পাটিল। কেউ দেখতেও আসেনি। সিডনিতে ব্রেট লি-র বল লেগে রক্ত ঝরেছে রাহুল দ্রাবিড়ের। বোলার বলের সিম থেকে রক্তের ছিটে সরিয়ে নিয়ে বল করতে গিয়েছেন! মাঠের মধ্যে অস্ট্রেলীয়রা মানবতার আগে যুদ্ধপ্রিয়, এটাই তাদের চিরকালীন ঐতিহ্য। নইলে ব্র্যাডম্যানের টিম সম্পর্কে লেন হাটন সেই যুগেই বা কেন বলবেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর খেলতে এসেও কোনও মায়াদয়া নেই! নাগাড়ে বাউন্সার আর বিমার দিয়ে যাচ্ছেন মিলার-লিন্ডওয়াল!

শন অ্যাবটের বাউন্সারে ফিলিপ হিউজের মৃত্যু এই ঐতিহ্যকে অন্তত সাময়িক ভাবে বদলে দিয়েছে। নইলে প্রথম বলেই জনসনের বাউন্সার খটাং করে বিরাট কোহলির মাথায় লাগার পর গোটা ফিল্ডিং টিম এমন উত্‌কণ্ঠা নিয়ে ছুটে আসত না। মনে হচ্ছিল মাইকেল ক্লার্কের টিম নয়, এরা বিরাটেরই উদ্বিগ্ন পরিবার। হেলমেটে বল লেগে এত জোর আওয়াজ হয়েছে যে, গ্যালারি অবধি পরিষ্কার শুনেছে। সেই অভিশপ্ত দিনটায় সিডনি ক্রিকেট মাঠে ফিল্ডিং দলে ছিলেন নাথন লিয়ঁ, ওয়ার্নারদের সাথে। পরে তিনি বলেন, “অবিকল এক আওয়াজ যা ফিলিপের বেলায় শুনেছিলাম। তাই দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, ঠিক আছ তো?”

উইকেটের ও প্রান্তে তখন চেতেশ্বর পূজারা। তিনিও আওয়াজে ভয় পেয়ে গেছিলেন। দৌড়ে আসেন জিজ্ঞেস করতে যে, বিরাট ঠিক আছেন কি না। সবারই মনে এখন আতঙ্কের হাওয়া বইছে। বিরাট জানান ঠিক আছে। লাঞ্চে ভারতের টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী তাঁকে শুধু বলেন, হেলমেটটা ঠিক আছে কি না দেখে নিস। বিরাট জানিয়ে দেন, ঠিক আছে। আর হেলমেটে ওই আঘাতের পর বিরাটের এ দিনের সেঞ্চুরি শাস্ত্রীর কাছে ‘পুরুষমানুষের ইনিংস। যা খেলতে টেকনিক তো লাগেই কিন্তু সবচেয়ে বেশি লাগে বুকের পাটা।’ আঘাতের ঠিক পর পরই হেলমেট প্রশ্নে আম্পায়ারদেরও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিরাট। আম্পায়াররা তাঁকে বলেছিলেন, হেলমেট বদলানোর কথা তিনি ভেবে দেখতে পারেন। ক্লার্কও এসে অনুরোধ করেন হেলমেট পরীক্ষা করতে। এই সব ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ভাবাই যায় না। সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক দৃশ্য তৈরি হয়, যখন বোলার জনসনের পিঠে হাত রাখেন ক্লার্ক, যে তোমার কোনও দোষ নেই। যেন তিনি শন অ্যাবটের মতো কিছু করে বসে আছেন আর কাউকে তাকে বোঝাতে হবে, যা ঘটেছে, নিছকই দুর্ঘটনা।

এই হাতটাই এত কাল অস্ট্রেলীয় অধিনায়কেরা দিয়ে এসেছেন অন্য কারণে— উত্‌সাহ দিতে যে, দারুণ করেছো! আবার লাগাও!

ফিল হিউজের প্রভাব দেখা যাচ্ছে তাঁর ছাব্বিশটা টেস্ট ম্যাচ আর হাজার দেড়েক রানের চেয়ে সত্যি অনেক বেশি হয়ে দাঁড়াল! অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মডেলটাই তিনি নতুন ভাবনার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন! হিংসের পরিমাপ কতটা থাকবে? মাঠেও কতটা বন্ধুত্ব হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE