যুবভারতীতে বুধবারের আগে শেষ হোম ম্যাচে কলকাতা জয়ের রাস্তা খুঁজে পেয়েছিল এক বঙ্গসন্তান ডিস্ক জকির স্প্যানিশ গানের মূর্চ্ছনার ভেতর। এ বার সেমিফাইনালের সিঁড়ি তারা কি খুঁজে পেল এক স্প্যানিশ কোচের ভোকাল টনিকের গুঁতোয়?
আইএসএলের শেষ গ্রুপ ম্যাচের পর কলকাতার আটলেটিকো ড্রেসিংরুম চুঁইয়ে সে রকম খবরই বেরিয়ে এল। টিম সূত্রে খবর, হাফটাইমে এক গোলে পিছিয়ে থাকা তাঁর ফুটবলারদের লম্বা-চওড়া এক ভাষণ দেন কলকাতা কোচ হাবাস। একদা রাফায়েল বেনিতেজের সহকারী হাবাস গোয়ায় অ্যাওয়ে ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে নাকি বলেন, “নিজেদের উপর আস্থা রাখো। গোয়াতেও তো এই ম্যাচটায় এক গোলে পিছিয়েছিলে। সে দিনের লোবোর মতো আজও আমাদের কেউ গোল করবেই।” সঙ্গে এটাও বলে দেন, “আজ যদি ড্রও না করতে পারো, তা হলে কিন্তু সব শেষ। তিন মাসের প্রস্তুতি, প্রথম লেগে পয়েন্ট টেবিলে সবার আগে থাকা সব মাটিতে মিশে যাবে।”
হাবাসের ‘পেপ টক’ শেষ পর্যন্ত কাজে লাগল কি? শুনে হাসছেন বলজিত্ সিংহ সাইনি। এ পর্যন্ত চারটে হলুদ কার্ড দেখায় রবিবার সেমিফাইনালে প্রথম পর্বে নেই ‘পঞ্জাব দা পুত্তর’। “কোচের ওই কথার পরেই গার্সিয়া মাঠে নামার সময় বলছিল, একটা শেষ চেষ্টা করতেই হবে। ফিকরু গোল করার পর তাই কোচের কাছে গিয়ে পাগলের মতো সেলিব্রেশন করতে শুরু করে দিয়েছিল।”
হাবাস নিজে কী বলছেন? সাংবাদিক সম্মেলনে পেপ টক প্রসঙ্গে ঢুকলেনই না। বরং ধন্যবাদ দিলেন দর্শকদের। যাঁরা আজ নব্বই মিনিটই চিত্কার করে গেলেন হাবাসের টিমের জন্য। এত দিন রেফারির মন্দ সিদ্ধান্তের শিকার হওয়ার পর ঘরের মাঠে পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো পেনাল্টিই কি সেমিফাইনালের কনফার্মড টিকিট জোগাড় করে দিল? প্রশ্ন শুনে মুহূর্তে পাল্টে যায় হাবাসের মুখের ভূগোল। “লাকি, আনলাকি বুঝি না। ও সব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সামনের দিকে তাকাতে চাই।”
সেমিফাইনালে সামনে গোয়াই। ঘরে-বাইরে মিলিয়ে জিকোর টিমকে হারাতে পারলে তবেই ফাইনাল। চেনা প্রতিপক্ষকে পাওয়ায় সুবিধা হবে? হাবাস বলছেন, “সেমিফাইনালে চেনা-অচেনা খাটে না। আরও দু’টো কঠিন ম্যাচ সামনে এটাই ভাবছি।”
তবে সেমিফাইনালের আগে ফিকরুর মেজাজ সামলানোটাও আটলেটিকো টিম ম্যানেজমেন্টের একটা ভাবনার বিষয়। টিম সূত্রেই খবর, এ দিন ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে টিমের ইংরেজি বলতে পারা ফিজিক্যাল ট্রেনার মিগুয়েল এবং কোচ অনেকক্ষণ ফিকরুকে বুঝিয়েছেন মেজাজ ঠিক রাখার জন্য। তাতে অনেক সময় চলে যাওয়ার জন্যই নাকি সাংবাদিক সম্মেলনে আসতে দেরি হয়ে যায় কোচ হাবাসের।
যদিও কলকাতাকে সেমিফাইনালে তোলার গোলদাতা ফিকরুর মেজাজ হারানোটা প্রকাশ্যে লঘু করে দেখাতে চাইছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যানেজার রজত ঘোষ দস্তিদার মিক্সড জোনে বলে গেলেন, “ও সব টুকরো-টাকরা ঘটনা হয়েই থাকে। ড্রেসিংরুমে সব মিটমাট হয়ে যায়।” যার সঙ্গে এ দিন ফিকরুর তর্কাতর্কি সেই জাকুব পদানি বলে যান, “ম্যাচে এ রকম হয়েই থাকে। আমি তো ড্রেসিংরুমে ফিকরুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেমিফাইনালের প্ল্যান সেরে বেরোলাম।”
তবে ফিকরুর মেজাজে মলম দেওয়ার চেষ্টার মধ্যেই সেমিফাইনালের আগে কাঁটার মতো খচখচ করছে অর্ণব মণ্ডলের চোট। মচকে যাওয়া গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই মাঠ ছাড়লেন কলকাতার অন্যতম ডিফেন্ডার। বৃহস্পতিবার এমআরআই হবে। তার আগেই অর্ণবকে নিয়ে তত্পরতার ত্রুটি নেই আটলেটিকো শিবিরে। টুর্নামেন্টের সেরা ভারতীয় ডিফেন্ডারকে রবিবারই মাঠে নামানোর জন্য এ দিন রাত থেকেই ফিজিও পুষ্পকেতু কোনাররা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। অর্ণব নিজেও বলছেন, “রবিবারই সেমিফাইনাল খেলতে চাই। দেখা যাক, গোড়ালির রিপোর্ট কী বলে!”
সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে হোটেলে তখন ফিকরু-পদানিরা জোরদার পার্টিতে মেতে। গার্সিয়া-হোফ্রেরা পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন শহরের ‘নাইটআউটে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy