টিম ডাক্তারের সঙ্গে ওয়াটসন।
ব্যাগি গ্রিন শিবিরে ফিরে এল ফিলিপ হিউজ দুঃস্বপ্ন! এবং দেখিয়ে দিল, হিউজের অকালপ্রয়াণের রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
ঘটনাস্থল এ বার সিডনি নয়, মেলবোর্ন। বক্সিং ডে টেস্ট শুরুর তিন দিন আগে যেখানে রীতিমতো ধাক্কা খেল অস্ট্রেলীয় প্রস্তুতি। যখন জেমস প্যাটিনসনের বাউন্সার সোজা এসে লাগল শেন ওয়াটসনের হেলমেটে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানাচ্ছে, ওয়াটসন আহত নন। কিন্তু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বাউন্সার-কাণ্ডের পরই গোটা অস্ট্রেলীয় টিমে অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা নেমে আসে। নেটের ঘটনার পরপরই দু’হাতে মাথা ঢেকে ড্রিঙ্কস কুলারের উপর বসে পড়েন ওয়াটসন। তার পর দৃশ্যত বিধ্বস্ত ভাবে ড্রেসিংরুমে ঢুকে যান প্যাটিনসন এবং ওয়াটসন। সঙ্গে টিম ডাক্তার পিটার ব্রুকনার।
এ দিন ট্রেনিং সেশনে হঠাত্ই প্যাটিনসনের বাউন্সার জোরে এসে লাগে ওয়াটসনের হেলমেটে। সঙ্গে সঙ্গে ক্রিজে পড়ে যান অলরাউন্ডার। চোট সারাতে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন করছেন প্যাটিনসন। তিনি ছুটে যান ওয়াটসনের দিকে। নেট থেকে বেরনোর সময় ওয়াটসনের চেয়ে কোনও অংশে কম বিপর্যস্ত লাগেনি তাঁকে। ওয়াটসনের পাশের নেটে ব্যাট করছিলেন রায়ান হ্যারিস। তিনি ছুটে এসে ওয়াটসনকে জড়িয়ে ধরেন। তাঁর কাঁধে ভর দিয়ে নেট ছাড়েন ওয়াটসন। গোটা ঘটনায় প্রভাবিত হয়ে পড়েন নেটে হাজির অস্ট্রেলীয় সমর্থকরাও। আর ফিল হিউজের মাথায় শন অ্যাবটের বাউন্সার লাগার দিন মাঠে ছিলেন ওয়াটসন, তাই স্বভাবতই তিনি আরও বেশি বিধ্বস্ত।
পরে অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়ক ব্র্যাড হাডিন বলেন, “ওয়াটসন একটু ধাক্কা খেয়েছে মানসিক ভাবে। কিন্তু ও ঠিক আছে। মাথায় আঘাত লাগলে যে কেউ নড়বড়ে অবস্থায় থাকবে।” তাঁর সতীর্থের মানসিক অবস্থা আরও ভাল বোঝা যাবে অ্যাডিলেড টেস্টের পর ওয়াটসনের একটি মন্তব্যে। ওয়াটসন বলেছিলেন, শর্ট-পিচ্ড বোলিংয়ের সামনে নিজের টেকনিকের উপর নতুন করে বিশ্বাস তৈরি করতে হচ্ছে তাঁকে। “ওই স্মৃতিগুলো এখনও খুব জ্বলজ্বলে রয়েছে। সেগুলোকে সব সরিয়ে রেখে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে বিশ্বাস করাটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ,” বলেছিলেন ওয়াটসন।
বিধ্বস্ত ওয়াটসন।
ওয়াটসনের হেলমেটে বাউন্সার লাগার ঘণ্টাখানেক আগেই আবার অনুরূপ ঘটনার স্মৃতিচারণ করছিলেন ক্রিস রজার্স। বলছিলেন, ব্রিসবেন টেস্টে শর্ট লেগে ফিল্ডিং করার সময় মাথার পিছনে চোট পেয়ে তিনি কতটা বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। “হিউজের যেখানে লেগেছিল, তার ইঞ্চিদুয়েক দূরে আমার মাথায় বলটা লাগে। ওই সময় নানা ভাবনা মাথায় আসছিল। মনে হচ্ছিল, ৩৭ বছর বয়সে আমি শর্ট লেগে ফিল্ডিং করছি কেন?” বলছিলেন রজার্স। ঘটনায় তিনি এতটাই প্রভাবিত হয়ে পড়েন যে, টিম ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার অবস্থাতেও ছিলেন না। শুধু তাই নয়, রজার্স চান মেলবোর্ন টেস্টে শর্ট লেগে তাঁর জায়গায় যেন জো বার্নস ফিল্ডিং করেন। যিনি সম্ভবত বক্সিং ডে টেস্টে জাতীয় অভিষেক ঘটাতে চলেছেন। রজার্স বলেন, “গাব্বা টেস্টে আমার টেকনিক দেখলে বুঝে থাকবেন যে, শর্ট লেগে ফিল্ডিং করার মতো সাহস আমার নেই।”
ডেভিড ওয়ার্নার অবশ্য আপাতত এ সব থেকে কিছুটা দূরে। পরিবারের সঙ্গে ক্রিসমাস কাটানো নিয়ে উত্তেজিত অস্ট্রেলীয় ওপেনার। বিশেষ করে তাঁর ছোট্ট মেয়ে আইভির সঙ্গে এটাই তাঁর প্রথম ক্রিসমাস। দিনটা যে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারছেন, সেটাই নাকি ওয়ার্নারের সবচেয়ে বড় ক্রিসমাস উপহার। আর তার পরের দিন থেকে শুরু টেস্টে যদি ওয়ার্নার তাঁর আগুনে ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তা হলে তাঁর দেশের জন্য ক্রিসমাস গিফটের ব্যবস্থাটাও হয়ে যাবে।
ছবি: গেটি ইমেজেস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy