Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
State News

ওটা একটা কালো দিন, বললেন ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল

মঙ্গলবারকে কালো দিন আখ্যা দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৬
Share: Save:

প্রবল বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে উঠতে না-পেরে তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছিল। বুধবার সেই মঙ্গলবারকে কালো দিন আখ্যা দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেই সঙ্গে জানালেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আচার্য হিসেবে যা করার, তিনি তা করবেন। ‘‘আমি হলাম পশ্চিমবঙ্গের সেই সৈনিক, যে এই রাজ্যের উপরে কোনও আঘাত এলে সেই বুলেট প্রথমে বুক পেতে নেবে,’’ বলেছেন রাজ্যপাল।

রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘২৮ জানুয়ারি ১৬৩ বছরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এক নোবেলজয়ীর ডি-লিট নেওয়ার কথা ছিল। সেই দিনে যে-ঘটনা ঘটল, সেটাকে আমি কালো দিনই বলব। সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছেই এই ২৮ জানুয়ারি কালো দিন।’’ এই প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্ধকার দিন উনি কী দেখেছেন? অন্ধকার দিন কী, উনি তার কিছুই জানেন না।’’

সমাবর্তনে সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল। ধনখড় সেখানে পৌঁছনো মাত্র তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান শুরু হয়। তিনি মূল মঞ্চে উঠতে পারেননি। অনুষ্ঠানস্থল নজরুল মঞ্চের বাইরে, প্রেক্ষাগৃহের পিছনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় টিএমসিপি। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, রাজ্যপাল মঞ্চে আসবেন না। তার পরে বিক্ষোভ থামে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে সাম্মানিক ডি-লিট তুলে দেন উপাচার্য।

আরও পড়ুন: বক্তৃতার বাইরে ধনখড়ের কথা নথিতে যাবে না

রাজ্যপাল এ দিন বলেন, ‘‘এক দল বিশৃঙ্খল বিপজ্জনক মানুষ এমন একটি সুন্দর সমাবর্তন অনুষ্ঠান ভন্ডুল করার চেষ্টা করল। কারা এটা করেছে, আমি তাদের নাম নিতে চাই না। ওরা সবাই ছাত্র নয়। এক দল লোক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই পরিকল্পিত ভাবে এই কাজ করেছে।’’ ধনখড় জানান, অভিজিৎবাবুর ডি-লিট মানপত্রে তাঁর সই করার কথা ছিল। তিনি সই করেছিলেন। রাজ্যপালের দাবি, ‘‘অভিজিৎ বিনায়ক বলেছিলেন, আমার কাছ থেকেই উনি ডি-লিট নিতে চান। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ভেবে কিছু ক্ষণ ওখানে ছিলাম। ওঁর মতো বিনয়ী মানুষ খুব কম দেখছি।’’ তাঁর মন্তব্য, সারা ভারতের, সারা বিশ্বের মানুষ অভিজিৎবাবুর ডি-লিট প্রাপ্তির ঘটনার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এমনই একটি দিনে বিশৃঙ্খলার ঘটনা অনভিপ্রেত।

রাজ্যপালের অভিজিৎ-স্তুতি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এরা অভিজিৎবাবুকে নিয়ে কী বলেছে? বিদেশি বৌ থাকলে নোবেল পাওয়া যায়, এমন কথাও তো বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অভিজিৎবাবুকে সাম্মানিক ডি-লিট প্রদানের সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি, এমন কথাও তো বলেছেন রাজ্যপাল। সে-সব চিঠি আমার কাছে আছে।’’ সেই সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ, উপাচার্যদের বিভিন্ন বিষয়ের ফাইল আটকে রাখছেন রাজ্যপাল।

আমন্ত্রণ পেলেও পার্থবাবু বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমাবর্তনে যাননি। তবে ওই দিন আচার্য-রাজ্যপালের সঙ্গে যে-আচরণ করা হয়েছিল, তা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, সমাবর্তনের মতো অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে ঘিরে এই ধরনের বিক্ষোভ কাঙ্ক্ষিত নয়।

কারা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল, সেই বিষয়ে রাজ্যপালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এত বড় বিষয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ওঁরা তো সবাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী। ছাত্রেরা কেন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, সেটা ওঁকে বুঝতে হবে। পার্থবাবুর তির্যক উক্তি, ‘‘প্রতিদিন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে টুইট করছেন রাজ্যপাল। প্রতিদিন মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিচ্ছেন। তার পরে আবার চা খেতে যেতে বলছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar University Of Calcutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE