বড় রদবদল পুলিশ এবং প্রশাসনে। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রথম দিন নবান্নে গিয়েই রাজ্য প্রশাসনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অপসারিত পুলিশ কর্তাদের নির্বাচনী আচরণবিধির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরই অধিকাংশকে পুরনো পদে ফিরিয়ে আনলেও, স্বরাষ্ট্র সচিব পদে অপসারিত অত্রি ভট্টাচার্যকে ফিরিয়ে আনেননি মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার দুপুরেই সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, বর্তমানে শিল্প সচিবের দায়িত্বে থাকা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে আনা হবে। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে নতুন স্বরাষ্ট্র সচিবের নাম ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে একাধিক জেলাশাসকের পরিবর্তনের কথাও জানান তিনি। জেলাশাসক এবং সচিব পর্যায়ে রদবদলের পাশাপাশি এ দিন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) পদেও পরিবর্তন করা হয়। সিদ্ধনাথ গুপ্ত যিনি গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) হিসাবে সামলেছেন, তাঁকে বদলি করা হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদ এডিজি (এস্টাব্লিশমেন্ট) পদে। ওই পদে ছিলেন জয়ন্ত বসু। তাঁকে বদলি করা হয়েছে ডিরেক্টরেট অব ইকনমিক্স অফেন্স উইংয়ের অধিকর্তা হিসাবে। সিদ্ধনাথ গুপ্তর জায়গায় নতুন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিংহ। রবিবারই তাঁকে বিধাননগর কমিশনারেটের কমিশনারের পদে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁর জায়গায় বিধাননগর কমিশনারেটের দায়িত্ব পেলেন সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশন) নিশাত পারভেজ।
অন্য দিকে গতকালই সরানো হয়েছিল ব্যারাকপুরের কমিশনার সুনীল চৌধুরীকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন ডিআইজি মেদিনীপুর রেঞ্জ দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ। রবিবার রাতেই দায়িত্ব নেন তিনি। সোমবার তাঁকে নবান্নে তলব করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র। সূত্রের খবর, ভাটপাড়া বিধানসভায় উপনির্বাচনের দিন থেকে গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে যে ভাবে ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে সেই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডিজি। নতুন পুলিশ কমিশনারকে অবিলম্বে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।
আরও পড়ুন: ৫ মন্ত্রী পেতে পারে নজরকাড়া বাংলা, কিন্তু আলোচনায় অন্তত ১১ নাম
তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের ইঙ্গিত, এই রদবদলের পিছনে রয়েছে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল। সুনীল চৌধরিকে নির্বাচন কমিশন ব্যারাকপুরের দায়িত্বে আনেনি। তা সত্ত্বেও তাঁর অপসারণের পিছনে ব্যারাকপুর এবং ভাটপাড়ার নির্বাচনের ফলাফলই দায়ী, এমনটাই দাবি আইপিএসদের একাংশের। রাজ্যের এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘কমিশন যাদের অপসারণ করেছিল তাঁদের প্রায় সবাইকেই পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বদল করা হয়নি ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপারকে।’’ নির্বাচন কমিশন এর আগে ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার সেলভা মুরুগানকে অপসারণের নির্দেশ দেয়। তাঁর বদলে দায়িত্ব পান শ্রীহরি পান্ডে। শীর্ষ ওই আইপিএস বলেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে নির্বাচনে শাসক দল ভাল ফল করেছে।’’ তাঁর ইঙ্গিত, সেই কারণেই শ্রীহরি পান্ডেকে কমিশনের বসানো অন্য পুলিশ কর্তাদের মত কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়নি। তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপারের পদেই। যদিও, স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বদলির পিছনে নির্বাচনের ফলকে কারণ হিসাবে মানতে চাননি। তিনি বিষয়টি রুটিন বলেই দাবি করেছেন।
বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে এর আগে কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছিল। এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী নয়া স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী কমিটি তৈরি করেন। সেই কমিটিতে স্বরাষ্ট্রসচিব ছাড়াও থাকবেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার অফিসার ইনচার্জ কৌশিক দাস এবং বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy