Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে আসতে দেরি, ঝালদায় বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ‘শাস্তি’ প্রধান শিক্ষককে

ঝালদার ওই প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮১।  প্রধান শিক্ষক ছাড়া, এক জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষিকা রয়েছেন।

ঝালদার গ্রামে খুঁটিতে বাঁধা প্রধান শিক্ষক। —নিজস্ব চিত্র

ঝালদার গ্রামে খুঁটিতে বাঁধা প্রধান শিক্ষক। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝালদা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:২৫
Share: Save:

স্কুল বসার কথা বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্কুলে পৌঁছন সাড়ে ১১টা নাগাদ। দেরি করার অপরাধে তাঁকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন দুই গ্রামবাসী। সোমবার পুরুলিয়ার ঝালদা ১ ব্লকের ওই শিক্ষককে বেঁধে রাখার ছবি ইতিমধ্যে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ‘ভাইরাল’ হয়েছে। আইন হাতে তুলে নেওয়ার এ হেন মানসিকতার নিন্দায় সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। এ ব্যাপারে বিভাগীয় আধিকারিকের কাছে বিশদ রিপোর্ট চেয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ কাজ যারাই করুক, ঠিক করেনি। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’’

ঝালদার ওই প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮১। প্রধান শিক্ষক ছাড়া, এক জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষিকা রয়েছেন। গত এপ্রিলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে স্কুলে তালা দেন গ্রামবাসীর একাংশ। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে স্কুল খুললেও, অভিযোগগুলির তদন্ত চলছে। তার মধ্যেই সোমবার দেরি করেছেন অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের উপরে গ্রামবাসীর একাংশ চড়াও হন বলে অভিযোগ। স্কুলের পিছনে বিদ্যুতের খুঁটিতে পিছমোড়া করে বাঁধা হয় তাঁকে। ঘটনাটি ঘটে খুদে স্কুলপড়ুয়াদের সামনেই।

খবর পেয়ে হস্তক্ষেপ করেন বিডিও (ঝালদা ১) রাজকুমার বিশ্বাস। পুঞ্চার বাসিন্দা ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে ঝালদা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ততক্ষণে অবশ্য এক ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। থানায় প্রধান শিক্ষকের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার রাতে চন্দ্র কুমার এবং গুরুদাস পরামানিক নামে দু’জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠায় পুরুলিয়া আদালত।

আরও পড়ুন: সংবিধান দিবস পালন নিয়েও বিরোধের ইঙ্গিত

বহু চেষ্টা করেও এ দিন ওই প্রধান শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। জবাব আসেনি ‘মেসেজ’-এর। গ্রামের কেউ ওই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। ধৃত দুই গ্রামবাসীর বাড়ি তালা বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যা সন্ধ্যা কুমার জানান, ঘটনার সময়ে তিনি গ্রামে ছিলেন না। তবে তিনি মেনেছেন, ‘‘কাজটা মোটেও ভাল হয়নি।’’ স্কুলে এ দিন খোলা ছিল। তবে ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুধু বলেছেন, ‘‘চিন্তায় আছি।’’

‘নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি নিলয় মুখোপাধ্যায় এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুধন্যা মাহাতো ঘটনায় জড়িতদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’র দাবি জানিয়েছেন। ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি বিমলকান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অন্য ভাবেও প্রতিবাদ করা যেত।’’ বিডিও বলেন, ‘‘এ ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhalda Social Media Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE