ছবি: পিটিআই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে নিজের ‘জায়গির’ ভেবে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার রাজ্যে শেষ দফার নির্বাচনী প্রচারে এসে মথুরাপুরের সভায় মোদী বলেন, ‘‘দিদি রাজ্যকে নিজের আর নিজের ভাইপোর জায়গির ভাবছেন।’’ পরে দমদমের সভাতেও তাঁর মন্তব্য, ‘‘দিদি আর তাঁর ভাইপো বাংলাকে নিজেদের জায়গির ভেবে নিয়েছেন। দিদি মনে রাখবেন, পশ্চিমবঙ্গ আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। আপনার অহঙ্কারের উত্তর দেবে বাংলার মানুষ।’’
তৃণমূল অবশ্য মোদীর ওই মন্তব্যকে বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিত বলে মনে করছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত দিন উনি কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে চাপ তৈরি করেছেন। এখন জনগণের প্রত্যাখ্যান বুঝে মমতা এবং অভিষেকের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ তীব্র করছেন। এতে ওঁদের লাভ হবে না। উল্টে মমতারই সমর্থন বাড়বে।’’
অভিষেক সম্পর্কে মোদী-অমিত শাহদের নিয়মিত আক্রমণের জবাবে এ দিন ডায়মন্ড হারবারের সভায় পাল্টা অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘নোংরামির একটা সীমা আছে! কাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অভিষেক অফিস বানিয়েছে ফুটপাত দখল করে। তালা দেবেন বলেছেন। উনি জানেন না, ওই অফিসটার নীচে একটা প্যান্ডেল করা আছে। সেখানে পুলিশ এসে বসে। সাধারণ মানুষ এসে বসে। কিচ্ছু জানেন না, বলছেন তালা দেবেন! দিয়ে দেখুন!’’ অভিষেকের স্ত্রীকেও ‘হেনস্থা’ করার অভিযোগ তোলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘অভিষের বউ পঞ্জাবের মেয়ে। বাচ্চা মেয়ে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি, সে লোভী নয়। ওর দু’টো সোনার জলে চোবানো বালা ছিল। এ বার ওর পিছনেও লেগেছে। অভিষেককে টানো, বউকে টানছ কেন?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মথুরাপুর এবং দমদম— এ দিন দুই সভাতেই গণতন্ত্রের প্রশ্নে মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেন মোদী। মথুরাপুরে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা এখানে হিংসার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। ফলে গণতন্ত্রের বদনাম হচ্ছে।’’ মোদীর অভিযোগ, মমতা বিজেপি কর্মীদের ঘর এবং দলের কার্যালয় দখল করার হুমকি দিয়েছেন। জমি এবং সম্পত্তি দখলের মানসিকতা থেকেই তাঁর এই প্রয়াস। এই প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন, ‘‘মমতাদিদি, ভোটে জয়-পরাজয় আসে যায়। এটাই গণতন্ত্রের লক্ষণ। বাংলার জনতা এক সময় আপনাকে এত শক্তি দিয়েছিল। আজ সেই জনতাই আপনাকে হঠাতে চাইছে একেবারে খোলাখুলি। দিদি, বাংলার সত্যকে স্বীকার করুন।’’
পরে দমদমের সভায় মোদী বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর দেশের সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসপ্রবণ অঞ্চল। জঙ্গি হামলা সেখানে নিত্য দিনের ঘটনা। কিন্তু সেখানেও গত পঞ্চায়েত ভোট এবং লোকসভা নির্বাচনে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পেরেছেন। অথচ বাংলায় প্রত্যেক দফাতেই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। তার জন্য দায়ী আপনার অহঙ্কার আর আপনার কর্মীদের গুন্ডাগিরি।’’ মোদীর সংযোজন, ‘‘গোটা পশ্চিমবঙ্গে একটা ভয়ের আবহ তৈরি হয়ে আছে। সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যে বাস করছেন মানুষ। এখানে চোর, অনুপ্রবেশকারীরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এ বারের নির্বাচন মানুষ মনে রাখবেন দিদির নাটক আর অহঙ্কারের জন্য। গণতন্ত্রের সমস্ত ব্যবস্থাকে গালাগাল করার জন্য।’’
নির্বাচনী প্রচারের গোড়া থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ করে এসেছে, প্রধানমন্ত্রী দেশের সেনা বাহিনীকে নিয়ে রাজনীতি করছেন। রাজ্যে শেষ দফার প্রচারের অন্তিম পর্বে পৌঁছে মোদী তার জবাবে বলেন, ‘‘এটা পুরসভার নির্বাচন নয় যে রাস্তাঘাট, জলের লাইন, বাতিস্তম্ভ নিয়ে কথা বলব। এটা লোকসভা নির্বাচন। তাই দেশের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy