Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
sovan chatterjee

‘শোভনদা’ নামছেন পুরভোটে? পদ্মের ব্যানারে রাতারাতি ছয়লাপ গোটা দক্ষিণ কলকাতা

কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু পুরসভার ভোটে শোভন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন, বিজেপি নেতৃত্ব তা জানেন।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত এই সব ব্যানারেই ছেয়ে গিয়েছে গোটা দক্ষিণ কলকাতা। —নিজস্ব চিত্র।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত এই সব ব্যানারেই ছেয়ে গিয়েছে গোটা দক্ষিণ কলকাতা। —নিজস্ব চিত্র।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:১৭
Share: Save:

মহানাগরিক পদে তাঁকেই ফেরত চাইছেন নাগরিকরা— প্রচারের ভঙ্গিটা এই রকমই। তবে, প্রচারকে ‘অরাজনৈতিক’ মোড়ক দেওয়ার চেষ্টাও নেই। বিজেপির প্রতীক ব্যবহার করেই ছাপানো হয়েছে ব্যানার। প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত সেই সব ব্যানারে রাতারাতি ছেয়ে গিয়েছে প্রায় গোটা দক্ষিণ কলকাতা। শহরের ‘হাল ফেরাতে’ আবার মাঠে নামার আহ্বান জানানো হয়েছে ‘শোভনদা’কে।

দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা ছেয়ে গিয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানারে। টালিগঞ্জ থেকে এক্সাইড মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের রেলিংয়ে, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ঝুলছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রীর বিরাট ছবি-সহ ব্যানার। সঙ্গে পদ্মফুলের প্রতীক। গড়িয়াহাট থেকে গোলপার্ক হয়ে সাদার্ন অ্যাভিনিউ পর্যন্ত একই ছবি। সংখ্যাটা সব মিলিয়ে শ’দেড়েক। সেই সব ব্যানারে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘‘কলকাতার বেহাল দশাকে পুনরায় স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে আপনি এগিয়ে আসুন শোভনদা।’’ কোনওটিতে আবার বলা হয়েছে, ‘‘অসম্পূর্ণ কলকাতার পৌরসভাকে পুনরায় স্বমহিমায় আনতে ফিরে আসুন শোভনদা।’’

ব্যানারের নীচে লেখা হয়েছে কলকাতার নাগরিকবৃন্দ। বিজেপির প্রতীক সম্বলিত কোনও ব্যানার যে সাধারণ নাগরিকদের ছাপানো নয়, এর নেপথ্যে যে বিজেপি কর্মীরাই রয়েছেন, তা নিয়ে সংশয় কমই।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কার্যকালে তিনি কলকাতার চেহারাকে যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন, বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সময়ে তার অবনতি হয়েছে বলে বিজেপির একাংশের অভিযোগ। ‘‘বেহাল কলকাতাকে স্বমহিমায় ফেরান’’— এই ব্যানারের মাধ্যমে সেই অভিযোগ ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তাই দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এতে শোভন বা বিজেপির প্রচার যেমন করা হয়েছে, একই সঙ্গে তৃণমূলকেও অস্বস্তিতে ফেলা হয়েছে। ওই শিবিরের মতে, শোভনকে সরিয়ে যাঁকে মেয়র করা হয়েছে, তিনি ব্যর্থ— পুরভোটের আগে এই বার্তা চারিয়ে ফিরহাদের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিতে চেয়েছে বিজেপি। শোভনকে ফেরানোর যে মৃদু চেষ্টা, তৃণমূলের তরফে এখনও কেউ কেউ চালাচ্ছেন, নিদেন পক্ষে শোভনকে নিষ্ক্রিয় রাখার যে আগ্রহ শাসক দলের রয়েছে, বিজেপির এই ব্যানার তাতে জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলেও মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের।

আরও পড়ুন: পাওনা প্রায় ৫০ হাজার কোটি, বকেয়া চেয়ে মোদীকে চিঠি মমতার

২০১০-এ কলকাতার পুরভোটে তৃণমূল জেতার পর মেয়র হন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ২০১৫-তেও ফের তাঁকেই মেয়র করে তৃণমূল। কলকাতার মহানাগরিক হিসেবে দু’দফায় কাজ সামলেছেন প্রায় সাড়ে আট বছর। কিন্তু, বছর দুয়েক আগে থেকে নানা কারণে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল তাঁর। দীর্ঘ দিন কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকার পর অবশেষে ২০১৯-এর ১৪ অগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

কিন্তু, বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁকে সে ভাবে দেখা যায়নি। কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে মতান্তর হওয়াতেই তিনি সক্রিয় ভাবে মাঠে নামেননি বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে সমস্যা অনেকটাই মিটে যায়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো বটেই, রাজ্য নেতৃত্বও শোভনের মানভঞ্জনে সক্রিয় হয়। গত কয়েক বছরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রায় সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের শরিক যিনি, সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, বিজেপি নেতৃত্বের ব্যবহার যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু, তার পরেও শোভনকে ময়দানে নামতে দেখা যায়নি।

কলকাতা-সহ রাজ্যের শতাধিক পুরসভার ভোট শিয়রে। কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু পুরসভার ভোটে শোভন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন, বিজেপি নেতৃত্ব তা জানেন। সে জন্য পুরভোটের আগে তাঁকে সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হয়। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব দফায় দফায় শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।

আরও পড়ুন: এ বার স্কুলবাসের পাটাতন ভেঙে রাস্তায় বীরভূমের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী

কিন্তু, সেই আলোচনা কত দূর এগিয়েছে, তা নিয়ে মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই। পুরভোটে শোভনের ঠিক কী ধরনের ভূমিকা বিজেপি চাইছে, শোভনই বা কী বলছেন, এ সব নিয়ে কোনও তরফ থেকেই কোনও বিশদ তথ্য প্রকাশ্যে জানানো হয়নি। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার বিজেপির প্রতীক এবং শোভনের ছবি সম্বলিত ব্যানারে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা ছেয়ে গেল। কলকাতার হাল ফেরাতে শোভনের ফিরে আসা দরকার, এই বার্তাই সে ব্যানারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল।

এ বিষয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ব্যানার কারা লাগিয়েছেন জানি না। তবে কলকাতার মানুষ যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সক্রিয়তা চাইছেন, তা স্পষ্ট। এত দিন সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও সাধারণ কর্মীদের মন থেকে মুছে দেওয়া যায়নি ওঁকে, এটা বোঝা গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE